গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় হ্যান্ডক্যাপ পরা অবস্থায় পুলিশের কাছ থেকে ওয়ারেন্টের আসামী পালিয়ে যায়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে এঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের তান্ডবে পলাতক আসামীর বৃদ্ধ মাতা, বড় ভাইয়ের স্ত্রী ও সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার শ্রীরামকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এঘটনায় পুলিশ দুইজন নারীসহ ৫ জনকে আটক করেছে।

অপরদিকে, এ ঘটনায় টুঙ্গিপাড়ার শ্রীরামকান্দি এলাকা পুলিশ আতংকে পুরুষশুণ্য হয়ে পড়েছে। রাতে কেউ বাড়ীতে থাকছেন না। আত্মীয় স্বজনের বাড়ী বা অন্য কোথাও গিয়ে তারা গা ঢাকা দিয়ে রযেছেন। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানাযায়, মাদক মামলায় ওয়ারেন্টের আসামী নাজু শেখকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে তার আত্মীয় স্বজন তাকে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করেন। এক পর্যায় পুলিশের সাথে নাজুর আত্মীয় স্বজন বাকবিতান্ডায় জড়িয়ে পড়লে সুযোগ বুঝে হ্যান্ডক্যাপ পরা অবস্থায় পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায় নাজু শেখ। পুলিশের নির্যাতনের শিকার সাফাতুন বেগম (৮০) অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার দুপুরে টুঙ্গিপাড়া থানার এস, আই প্রতাপ কুমার মল্লিক ও অপর এক পুলিশ সদস্য শ্রীরামকান্দি গ্রামে তার বাড়ীতে এসে তার ছেলে নাজু শেখ (৪০) কে দুপুরে খাওয়ার সময় গ্রেপ্তার করে হ্যান্ডক্যাপ পরিয়ে দেয়। তখন আমি ওই পুলিশের কাছে আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছো কেন জানতে চাইলে ওই পুলিশরা আমাকে গালিগালাজ করেন। এ সময় আমি আমার ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য দারোগা প্রতাপের পা জড়িয়ে ধরলে তিনি আমার বুকে লাথি মেরে ফেলে দেন। এতে আমার দম বন্ধ হয়ে যায়ার উপক্রম হয়। এর দশ মিনিট পর আরো পুলিশ নিয়ে এসে তারা আমাদের ঘরে ঢুকে ভাংচুর করে ও মালামাল এদিক ওদিক ছুড়ে ফেলে দেয়।

পলাতক নাজু শেখের ভাইয়ের স্ত্রী তুলি বেগম জানান, ওই দিন বিকেল ৫ টার দিকে টুঙ্গিপাড়া থানা থেকে একদল পুলিশ গিয়ে আমাদের আবারও বাড়ী ঘর তছনছ করে। এসময় তাদের বাধা দিলে পলাতক নাজুর ভাইয়ের মেয়ে স্থানীয় ঘোষেরহাট স্কুলের সপ্তম শ্রেনীর শিক্ষার্থী মেঘনা (১৩), নবম শ্রেণীর ছাত্রী মুক্তা (১৫) ও এসএসসি পরীক্ষার্থী মীনা বেগম (১৬) কে বেধড়কভাবে লাঠিপেটা ও অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। তাদের একটিই কথা “ নাজুকে এনে দে – তবে তোরা রেহাই পাবি।” পুলিশের নির্যাতনের শিকার তুলি বেগম অভিযোগ করে বলেন, আসামী গ্রেপ্তারের নামে পুলিশ নারীদের প্রতি যে আচরন করেছে তা মানবতা বিরোধী। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা কিভাবে নাজুকে ধরে দেব ? আমরা নারীরা কি অন্যায় করেছি যে আমাদের উপর পুলিশের এমন নিষ্ঠুর নির্যাতন? টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম এনামূল কবীরের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি পুলিশের তান্ডবের কথা অস্বীকার করে বলেন, নাজু শেখ একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা রয়েছে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলে ৫০-৬০ জন মহিলা পুলিশের প্রতি চড়াও হয় এবং নাজুকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের উপর অক্রমনের চেষ্টা করে। এ ঘটনায় পুলিশ ৩ জন পুরুষ ও ২ জন নারীকে আটক করে। স্থানীয় সচেতন মহলের দাবী নিরীহ সাধারন মানুষ যাতে পুলিশের হয়রানির শিকার না হন -সে ব্যাপারে দৃষ্টি দেবেন সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।