রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যের ডাক প্রত্যাখ্যান করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় রাজনীতিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, জনগণ প্রধানমন্ত্রীর এই ধরনের পদক্ষেপ সমর্থন করবে না। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় সরকার কূটনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজ আয়োজিত বিচার বিভাগ, সরকার বাহাস: বাংলাদেশে আইনের শাসনের ভবিষ্যৎ’ এক শীর্ষক আলোচনায় সভায় তিনি এ সব কথা বলেন।খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যখন চীনের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশে এসেছিলেন, তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, বাংলাদেশ-চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক আকাশচুম্বী। প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে ফিরে এসে বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক হিমালয়ের সমান। আজ আমরা দেখছি, রোহিঙ্গা সংকটে তারা আমাদের পাশে নেই। চীনও ভারত মিয়ানমারের পাশে। আজ যখন দেখতে পাই, সরকার কূটনৈতিকভাবে একা, তখন আমরা উদ্বিগ্ন।

বিএনপিকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বড় দল। বিদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সংগঠন বলেছেন। তার এই বক্তব্যের নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে এই ধরনের কথা দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের কথা-বার্তা বলে দেশকে বিভক্ত করছেন। ২০১৪ সালের মতো ভবিষ্যতেও গায়ের জোরে ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্র করছে আওয়ামী লীগ।বিএনপির এই নেতা বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল।জিয়াউর রহমান এই দলের প্রতিষ্ঠিতা। এই দল জনগণের ভোটে পাঁচ বার দেশ পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছে। জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে। বিচারপতি আবদুস সাত্তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া তিন বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন এদেশের মানুষের ভোটের মাধ্যমে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে অন্যান্য বিরোধী দলসহ বিএনপি সরকারের সঙ্গে আসবে কিনা এক সাংবাদিক জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধীরা কী বলল না বলল, সেটা নিয়ে তো রাজনীতি করি না।বিএনপিকে ‘গণতান্ত্রিক দল’ হিসেবে অভিহিত করে দলটির নেতা খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিএনপি শহীদ জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল, একটি গণতান্ত্রিক মধ্যপন্থি দল, নির্বাচনমুখী দল। এই দল পাঁচবার দেশ পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছে জনগণের নির্বাচনের মাধ্যমে।আলোচনায় রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার কূটনীতিকভাবে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ।তিনি বলেন, যখন চীনের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশে এসেছিলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন বাংলাদেশ-চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক আকাশচুম্বি। ভারত থেকে ফিরে এসে বললেন, বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক হিমালয়ের পরিমাণ উচ্চতায়।আজকে আমরা দেখতে পারছি, রোহিঙ্গা সমস্যা যখন হলৃ আমরা যখন সঙ্কটে, এই রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে, তখন দেখছি আমাদের পাশে না থেকে- চীনও মিয়ানমারের পাশে, ভারতও মিয়ানমার পাশে।

মিয়ানমারে দমন-পীড়ন শুরুর সময়ই বাংলাদেশ সরকার তা বন্ধে কূটনৈতিক ব্যবস্থা নিলে বাংলাদেশে এত রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে পালিয়ে আসতে বাধ্য হত না বলে ভাষ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যের।এক্ষেত্রে সরকারের পররাষ্ট্রনীতি ব্যর্থ হয়েছে বলছেন খন্দকার মোশাররফ।মিয়ানমারে রোহিঙ্গা পীড়নে ঘটনায় ভারতের ভূমিকার সমালোচনা করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ভারত জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। মিয়ানমারের কাছে তারা অস্ত্র বিক্রি করছে। তারা নির্দেশ দিয়েছে কোনো রকম রোহিঙ্গা শরনার্থী ভারতে ঢুকতে পারবে না। তাদের বিএসএফকে বিভিন্ন রকমের পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।এই ইস্যুতে আমাদের সরকার সম্পূর্ণভাবে কূটনৈতিক তৎপরতায় ব্যর্থতা হয়েছে। আমি বলব, এখন সময় এসেছে সরকারের সব বিভেদ ভুলে গিয়ে বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়ে বেইজিং (চীন) যাওয়া, মস্কো (রাশিয়া) যাওয়া, দিল্লী (ভারত) যাওয়ার। একলা নয়। তাদেরকে দেখানো সমগ্র জাতিসত্তা আমরা একত্রিত। দেশের অর্ধেক লোক বাদ দিয়ে এটা সম্ভব হবে না।ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন, সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক হাসান তালুকদার, এনডিপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন ঈসা এবং মো. সালাহউদ্দিন খান বক্তব্য রাখেন।