রাজশাহী জেলার ২৯৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এসব বিদ্যালয়ের অনেকগুলোতে সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য রয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক দিয়ে চালানো হচ্ছে প্রধান শিক্ষকের কাজ। সহকারী শিক্ষকদের অভিযোগ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব তাদের কাঁধে এসে পড়ায় দাফতরিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা বাড়তি চাপে পড়ছেন। এদিকে, অভিভাবকরা বলছেন, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ খালি থাকায় বিদ্যালয়গুলোর পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্র জানায়, রাজশাহীতে এক হাজার ৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ২৪টি ও সহকারী শিক্ষকের ১৭টি পদ, চারঘাট উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ৩৪টি ও সহকারী শিক্ষকের ১টি পদ, তানোর উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ৫০টি ও সহকারী শিক্ষকের ৫টি পদ, দুর্গাপুর উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ২২টি ও সহকারী শিক্ষকের ১০টি পদ, পুঠিয়া উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ৩০টি পদ, পবা উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ২৫টি ও সহকারী শিক্ষকের ৮টি পদ, বাগমারা উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ৬৪টি ও সহকারী শিক্ষকের ২০টি পদ, বাঘা উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ২৩টি ও সহকারী শিক্ষকের ১৯টি পদ এবং মোহনপুর উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ২৫টি ও সহকারী শিক্ষকের ২টি পদ শূন্য রয়েছে। তবে উপজেলা পর্যায়ের চেয়ে রাজশাহী শহরে তুলনামূলকভাবে শিক্ষক সংকট কম।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষক না থাকায় সহকারী শিক্ষক দিয়ে কোনোমতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে উপযুক্ত পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।অভিভাবকরা জানান, শিক্ষার্থীদের তুলনায় শিক্ষক সংখ্যা কম। এতে শিক্ষকদের অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হয়। সেজন্য শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে তেমন মনোযোগ দিতে পারেন না। শহরের চেয়ে গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে থাকে। তাদের কাছে বিদ্যালয়-ই শিক্ষার একমাত্র জায়গা। শহরের ছেলেমেয়েরা কোচিংসহ বাসায় টিচার রেখে লেখাপড়া করার সুযোগ পায়। গ্রামের ছেলেমেয়েরা সে সুযোগ পায় না। তাই তাদের প্রাথমিক শিক্ষার ভিতটা দুর্বল হয়ে পড়ে। বিদ্যালয়গুলোর শূন্যপদ পূরণ করে পাঠদান কার্যক্রমে গতি ফিরিয়ে আনার দাবি জানান এসব অভিভাবকরা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নফিসা বেগম বলেন, আমরাও জানি, শূন্য পদে শিক্ষক না থাকায় অন্যদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। শিক্ষক সঙ্কটের ব্যাপারটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের রাজশাহী বিভাগের উপ-পরিচালক আবুল খায়ের বলেন, শিক্ষক সংকট আছে। তা ধীরে ধীরে কেটে যাবে। অনেক শিক্ষক নিজের বাড়ির এলাকার প্রতিষ্ঠানে বদলি হয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করেন। শিক্ষক সঙ্কটের কারণে আমরা তাদের কেবল জানুয়ারি মাসে বদলি করে থাকি।