ফোঁড়া ফেটে গিয়ে পায়ের হাড় খুলে পড়ছে ৭ বছরের শিশু হাফিজুরের। দ্রুত চিকিৎসা করতে না পারলে পা কেটে ফেলতে হবে বলে চিকিৎসক জানান। সন্তানের চিকিৎসার জন্য সংসারের আয়ের একমাত্র সম্বল রিক্সাটি বিক্রি করেও সন্তানকে সুস্থ করতে পারছেনা হতভাগ্য বাবা। এখন বসে বসে একমাত্র ছেলের মৃত্যু দেখা ছাড়া কোন উপায় নাই। হয়ত বিত্তবানদের আর্থিক সহযোগীতায় বাঁচতে পারে মৃত্যুপথযাত্রী শিশু হাফিজুরের প্রাণ।

অসুস্থ্য শিশু হাফিজুর লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের বসিনটারীগ্রামের ভুমিহীন রিক্সা চালক রবিউল ইসলামের একমাত্র ছেলে। স্থানীয় ব্র্যাক শিশু নিকেতনে প্লে শ্রেনীর মেধাবী ছাত্র সে।

হাফিজুরের বাবা রবিউল ইসলাম জানান, ২০ দিন আগে হাফিজুরের বাম পায়ের গোড়ালীতে একটা ফোঁড়া দেখা দেয়। পরদিন তা ফেঁটে গিয়ে পা ফুলে যায়। ফলে পঙ্গুত্ব বরন করে শিশু হাফিজুর। এক পায়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে স্কুল যেতে গিয়ে পড়ে ডান পাটিও ভেঙ্গে যায় তার।

ছেলেকে বাঁচাতে সংসারের উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম রিক্সাটিও বিক্রি করেন। ছেলেকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন তিনি। কয়েক দিনের চিকিৎসায় রিক্সা বিক্রির টাকা শেষ হলে ঘোর অন্ধকার নেমে আসে রিক্সা চালক বাবা রবিউলের জিবনে। ঠিক সেই সময় চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশু হাফিজুরকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।চিকিৎসক রেফার করলেও টাকা না থাকায় বুকের ধন একমাত্র ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন রিক্সা চালক রবিউল।

চোখের সামনে ছেলেকে মৃত্যুর যন্ত্রনায় ছটফট করতে দেখে লাজ লজ্বা ত্যাগ করে প্রতিবেশীদের দাঁড়ে দাঁড়ে ছেলের প্রাণ বাঁচাতে হাত পেতে ভিক্ষা করেন রবিউল। এ ভাবে প্রতিবেশী ব্যবসায়ী মন্টু বকসী ও স্কুল শিক্ষক লুৎফর রহমানের সহযোগিতায় মাত্র ৫ হাজার টাকা আদায় করে গত বৃহস্পতিবার শিশু হাফিজুরকে নিয়ে যান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে অর্থপেডিকস্ শিশু বিভাগের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে পড়ে রয়েছে পঙ্গু হাফিজুর।

সেখানে চিকিৎসকরা জানান শিশু হাফিজুরের আলসার হয়েছে। পা কেটে ফেলতে হবে। অনেক টাকা লাগবে। পা বাঁচাতে চাইলে দ্রুত ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নিতে হবে। বিলম্ব হলে আলসার মেরুদন্ডের অস্থি মজ্জায় আক্রান্ত হলে তাকে বাঁচানো অসম্ভব হবে বলেও পরিস্কার জানায় চিকিৎসকরা। আবারো ছেলেকে হারানোর হতাশা গ্রাস করল বাবা রবিউলকে। এবার নিশ্চিত ছেলের মৃত্যু দেখতে হবে তাকে। কে দিবে এত টাকা। কে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিবে। ছেলের মুখে হাসি দেখতে বারং বার চিকিৎসকদের পায়ে জড়িয়ে পড়েছেন রবিউল। কিন্তু ছেলেকে বাঁচাতে টাকার বিকল্প নেই।

সোমবার (২ অক্টোবর) সকাল থেকে শিশু হাফিজুরের পায়ের মাংস খুলে যায়। এখন খুলে পড়ছে পায়ের হাড়। দীর্ঘ দিন বিছানায় থাকায় বেড় সোড রোগেও আক্রান্ত হয় হাফিজুর। পিঠেও দেখা দিচ্ছে দগদগে ঘাঁ। যার দুর্গন্ধে কেউ পাশে ভিড়তেও পারছেন না।
বাবা রবিউল না পারছেন টাকা জোগার করতে, না পারছেন ছেলেকে ফেলে নিরুদ্দেশ হতে। এখন শুধুই মায়া কান্না। চোখের সামনে দেখতে হচ্ছে ছেলের নিশ্চিত মৃত্যু। হাফিজুরের মুখে হাসি এবং তাকে স্কুল পাঠাতে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য চেয়েছেন তার রিক্সা চালক বাবা রবিউল ইসলাম। ভাদাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রোকনুজ্জামান রোকন জানান, রিক্সা বিক্রি করে চিকিৎসা করেও ছেলেকে সুস্থ করতে পারেন নি রিক্সা চালক রবিউল। হাফিজুরকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

যোগাযোগ হাফিজুরের প্রতিবেশী মন্টু বকসী – ০১৭৬৫০৫৭৪৮৯।