রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি সাইমন হেনশ’র নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল।২৯ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত তারা বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরের মধ্যে থাকবেন।সফরকালে দলটি সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, দাতা ও মানবিক ত্রাণ সহায়তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এতে রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষায় সহযোগিতা দেয়ার বিষয়গুলো উঠে আসবে।আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত তারা বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করবেন।প্রতিনিধি দলটির মধ্যে রয়েছেন: গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম ব্যুরো ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি স্কট বাসবি, দক্ষিণ ও সেন্ট্রাল এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি টম ভাজদা, পূর্ব-এশিয়া ও প্যাসিফিক বিষয়ক ব্যুরোর অফিস ডিরেক্টর প্যাট্রিসিয়া মাহোনি।এ সময় মিয়ানমারের রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে আলোচনা করবেন। একইসঙ্গে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা বাড়ানোর বিষয় নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।এছাড়াও দলটি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘ মেয়াদী সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবে। রোববার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গত আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবিনীর নতুন করে অভিযান শুরুর পর নির্যাতন ও মৃত্যু থেকে বাঁচতে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সূচি সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে বর্ণনা করলেও জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও গোষ্ঠী একে জাতিগত নিধন বলছে।এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আলোচনা জন্য মিয়ানমার ও বাংলাদেশে প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ২৯ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত তারা দুই দেশ সফর করবেন।দলটি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘ মেয়াদী সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করার কথা রয়েছে।এছাড়াও প্রতিনিধি দলটির কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের কথা রয়েছে।

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে আন্তর্জাতিক চাপের বিকল্প নেইরোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পথ তৈরি হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মিয়ানমান সফরেÑএমন মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের যে সমর্থন ও সহযোগিতা রয়েছে তা খুবই ইতিবাচক। এটিকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ঐক্য দরকার বলে মত তাদের।সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবীর বলেন, মিয়ানমারের ঐক্য রয়েছে বাংলাদেশকেও এই ইস্যুতে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সংকট মোকাবেলা করতে হবে।রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ার আশংকাও কথা বলেন তিনি।মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মিয়ানমার সফর পরপর দুই মন্ত্রীর সফর ও বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দুদেশ কতটুকু এগোলো সে নিয়ে আলোচনা সর্বত্র।বিশেষজ্ঞদের মতে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে নমনীয় করা কঠিন ও দুরহ। নব্বইয়ের দশকে এদেশে আশ্রয় নেয়া কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে সে উদাহরণ টেনে সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, এখন দশ লাখ ফেরত পাঠানো অনেক কঠিন হয়ে যাবে।তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমান সফরে এই সংকট সমাধানের একটা প্রাথমিক পথ যদিও তৈরি হয়েছে তবুও বাংলাদেশকে আঁটঘাট বেধেই এগুতে হবে জানান হুমায়ুন কবীর।মিয়ানমারের সেনা প্রধানকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের ফোন করাকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইশফাক ইলাহী বলেন, বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক দিক আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সমর্থন পাওয়া সে সমর্থনকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ঐক্য দরকার।আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা দীর্ঘ সময়ের জন্য অবস্থান করলে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে বলে আশংকা করছেন ইশফাক ইলাহী। মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যু নতুন নয় এ কথা মাথায় রেখে অনেক আগেই সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা উচিৎ ছিল বাংলাদেশের।যে সংকট ঘাড়ে চেপে বসেছে তা সহজেই সমাধান হওয়ার নয় উল্লেখ করে, বাংলাদেশকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।তবে দুজনেই বললেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে আন্তর্জাতিক চাপের বিকল্প নেই।