জাতীয়করণ হওয়া এবং হতে যাওয়া কলেজশিক্ষকদের বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না করার দাবিতে সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এতে সরকারি কলেজগুলোতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কোনো ক্লাস হচ্ছে না।কর্মবিরতির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সাতটি এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন তিন শতাধিক সরকারি কলেজে গতকাল রোববার ও আজকের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ডাকে এ কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ শেষ হচ্ছে দুই দিনের এ কর্মবিরতি।বিভিন্ন কলেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষকেরা কলেজে গেলেও কোনো ধরনের প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন না। ঢাকা কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, সিলেটের এমসি কলেজ, বরিশালের বিএম কলেজ, চট্টগ্রামের চট্টগ্রাম কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ওই সব কলেজে অচলাবস্থা চলছে। শিক্ষকেরা কর্মবিরতির সমর্থনে কলেজের ফটকে ব্যানার টানিয়েছেন। কোনো কোনো শিক্ষার্থী কর্মবিরতির কথা না জানায় কলেজে এসে ফিরে যাচ্ছেন।

জাতীয়করণের জন্য ঘোষিত কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডার বহির্ভুত রেখে বিধিমালা জারির দাবিতে রোববার থেকে দুই দিনের এ কর্মবিরতি শুরু করেন সরকারি কলেজের শিক্ষকরা। ‘বিসিএস ছাড়া ক্যাডার সার্ভিস নয়’ এই শ্লোগান নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান থেকে শুরু করে সকল প্রকার কর্মকান্ড থেকে নিজেদেরকে বিরত রেখেছেন তারা। দেশের সরকারি কলেজগুলোর ন্যায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ ও চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের শতাধিক শিক্ষকও কর্মবিরতি পালন করা সোমবার কলেজ দুটির একাদশ, দ্বাদশ, ডিগ্রি, অনার্স ও মাস্টার্সে কোনো ক্লাস হয়নি। গোপালগঞ্জের ছয়টি সরকারি কলেজেও অচলাবস্থা বিরাজ করছে।

শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে ক্লাস হয়নি গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ, সাতপাড়া সরকারি নজরুল কলেজ, রামদিয়া সরকারি এস কে কলেজ, কোটালীপাড়া শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ কলেজ ও টুঙ্গিপাড়া শেখ মুজিব সরকারি কলেজে।বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের একটাই দাবি বিসিএস ছাড়া বিসিএস ক্যাডার নয়। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মেনে ও জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এ বর্ণিত নির্দেশনা অনুসারে জাতীয়করণের জন্য ঘোষিত কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডার বহির্ভুত রেখে বিধিমালা জারি করতে হবে।তারপরই বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি এ কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়াবে।শিক্ষকদের এই কর্মসূচির কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রোববার-সোমবারের সব পরীক্ষা স্থগিত করে। দেশের যেসব উপজেলায় সরকারি কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই, সেখানে একটি করে কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে সারা দেশে ৩২৫টি বেসরকারি স্কুল ও ৩১৫টি বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণ হচ্ছে।

এর আগে যেসব বেসরকারি কলেজকে সরকারিকরণ করা হয়েছে, সেগুলোর শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্ত করা হয়েছে। আর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আপত্তি জানিয়ে আসছেন বিসিএস শিক্ষকরা।নতুন করে সরকারিকরণ করা কলেজগুলোর শিক্ষকদের কী মর্যাদা দেওয়া হবে তা এখনও চূড়ান্ত করেনি সরকার। বিসিএস শিক্ষকরা ওইসব শিক্ষকদের আত্তীকরণ নিয়ে সুস্পষ্ট বিধিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছেন।সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৫ হাজারের বেশি শিক্ষক বিভিন্ন সরকারি কলেজে কর্মরত রয়েছেন।
নতুন করে জাতীয়করণ করা কলেজের শিক্ষকদের বিসিএস ক্যাডার পদমর্যাদা না দেওয়ার দাবিতে গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে দুই দিনের কর্মবিরতির ডাক দেয় বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি।জাতীয়করণ হওয়া বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্ত করা হলে আগামী ৬, ৭ ও ৮ জানুয়ারি আবারও কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা রয়েছে তাদের। সমিতির সভাপতি আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, যদি দাবি পূরণ না হয়, তাহলে আগামী ৬ থেকে ৮ জানুয়ারি আবারও পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে তাঁরা কোনো কর্মবিরতি রাখেননি। এ সময় দাবির সমর্থনে জনসংযোগ করা হবে। তবে এ সময়ের মধ্যেও যদি প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন এবং শিক্ষানীতি উপেক্ষা করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করবেন তাঁরা।আই কে সেলিমউল্লাহ জানান, তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, সারা দেশে সর্বাত্মক এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। দেশের যেসব উপজেলায় কোনো সরকারি কলেজ নেই, সেগুলোতে একটি করে কলেজকে সরকারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে বেশ কিছু কলেজকে সরকারি করা হয়েছে এবং আরও ২৮৩টি বেসরকারি কলেজকে সরকারি করার জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ওই সব কলেজের মোট শিক্ষকের সংখ্যা হবে প্রায় আট হাজার।বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতারা বলছেন, এসব শিক্ষককে নন-ক্যাডার করে আলাদা নীতিমালা করতে হবে। এ দাবিতে তাঁরা কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করছেন। সর্বশেষ গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ করে রোববার ও সোমবার কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল।