ব্যবসায়ী ও টিভি উপস্থাপক পরিচয়ের গন্ডি পেরিয়ে দুই বছর আগে রাজনীতির খাতায় নাম লেখানো আনিসুল হক ঢাকার মেয়র নির্বাচনে নজর কেড়েছিলেন নতুন স্লোগান আর নতুন ধারার প্রচার দিয়ে। সে সময় তার নির্বাচনী স্লোগান ‘সমস্যা চিহ্নিত, এবার সমাধান যাত্রা’ লেখা ব্যানার, ফেস্টুন আর প্রচারপত্র দারুণ আলোচনায় আসে। ২০১৫ সালে নির্বাচনে জিতে মেয়র হওয়ার পর তার বিভিন্ন উদ্যোগ এবং নিজের কঠোর অবস্থান বোঝাতে তার বিভিন্ন উক্তিও আলোচনার জন্ম দেয়।আনিসুল হকের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসা শোকার্ত প্রতিক্রিয়ায় মেয়র হিসেবে তার জনপ্রিয়তার মাত্রা বোঝা যায়। আবার মেয়র হিসেবে তিনি ঢাকাকে আদৌ বদলাতে পেরেছেন কিনা- সে প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার কিছুদিনের মধ্যেই উন্নয়ন পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন আনিসুল হক। উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ফুটপাত এবং সড়ক থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে শুরু হয় তার সেই কাজ। সে সময় কূটনৈতিকপাড়া বারিধারা এবং গুলশানের বিভিন্ন দূতাবাসের দখলে থাকা ফুটপাতও দখলমুক্ত করেন উত্তরের মেয়র।এছাড়া সড়ক প্রশস্তকরণ, ঢাকা চাকা, বিলবোর্ড উচ্ছেদ, গ্রিন ঢাকা কর্মসূচিসহ বেশকিছু উদ্যোগের জন্য সে সময় আলোচনায় ছিলেন মেয়র আনিসুল। অবশ্য বিভিন্ন সময়ে তার কাজের সমালোচনাও করেছেন অনেকে।গতবছর মার্চে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতা অভিযানে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে উত্তরের মেয়র আনিসুল হক তেজগাঁওয়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ট্রাকস্ট্যান্ড দখলমুক্ত করতে গিয়ে ২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বরে চালকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন আনিসুল হক। বিক্ষুব্ধ চালকরা আনিসুল হককে প্রায় ৩ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে।পরদিন নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দখলদারদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, এখানে যদি আর কেউ কোনো কিছু করার চেষ্টা করে, তাহলে তাদের হেব্বি পেটানো হবে।পরে সড়কটি দখলমুক্ত করে সাতরাস্তা থেকে তেজগাঁও রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়কে বিভাজক তৈরি করে দেওয়া হয়। এছাড়া সড়কের দুপাশে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করে উত্তর সিটি করপোরেশন।ফুটপাত এবং সড়ক দখলমুক্ত করতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো শুরু করে ডিএনসিসি। কয়েকটি অভিযানে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ফুটপাতের ওপর গড়ে তোলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কার্যালয়ও।এ বছরের ২৮ ফেব্র“য়ারি অস্ট্রেলিয়া হাই কমিশনসহ আটটি দূতাবাসকে ফুটপাত থেকে নিরাপত্তামূলক কংক্রিট প্লান্টার ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা সরাতে চিঠি পাঠায় নগর কর্তৃপক্ষ। আমেরিকান দূতাবাস এবং কানাডিয়ান দূতাবাস নিজেরাই বেস্টনি সরিয়ে পথচারীদের চলাচলের ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশের দূতাবাস তা না করায় সিটি করোপারেশন অভিযান চালিয়ে ফুটপাত দখলমুক্ত করে ডিএনসিসি। এসব অভিযানের প্রায় প্রতিটিতে মেয়র আনিসুল হক নিজেও অংশ নেন।আমিনবাজারে দীর্ঘদিন বেদখল থাকা সিটি করপোরেশনের ৫২ একর জমি উদ্ধারেও অভিযান চালান মেয়র।নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে মতামত নিতে ২০১৬ সালের ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গণমাধ্যম সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেন আনিসুল হক। সেখানে উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি এতে সবার সহায়তা চাই। যে কো-অপারেট করবে না, তার খবর আছে। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে ঝাড়ু হাতে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নামেন আনিসুল হক মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে ঝাড়ু হাতে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নামেন আনিসুল হক। ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর স্বাধীনতাবিরোধী মোনায়েম খানের বাড়ির দখলে থাকা ১০ কাঠা জমি উদ্ধার করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। সেদিন আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে এটি একটি স্মরণীয় দিন। সাধারণ মানুষের এ জায়গাটি গত ৫০ বছর ধরে দখল করে রেখেছিল।আমরা শুনেছি এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা সরকারিভাবে যিনি সবচেয়ে বেশি করেছিলেন, যাদের উপর মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিশোধ নিয়েছিল। তাদের পরিবারের কাছে এইখানে একটি বিরাট জমি গত ৫০ বছর ধরে পড়ে আছে। সরকারের এ জমি এতদিন ধরে দখল হয়ে আছে, কোনো সংস্থা এর বিরুদ্ধে কোনো কাজ করেনি।পরে সেই জমিতে বনানীর ২৭ নম্বর সড়ক প্রশস্ত করে ডিএনসিসি।

যানজট নিরসনে ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর থেকে গাবতলীর রাস্তা পার্কিংমুক্ত রাখার ঘোষণা দেন মেয়র। পরে ২০১৬ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে টেকনিক্যাল মোড়ের বাস স্টপেজ থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত রাস্তা অবৈধ পার্কিংমুক্ত করা হয়।গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর ওই এলাকার গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে সে বছরের ১০ অগাস্ট থেকে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন এলাকায় চালু হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সেবা ‘ঢাকা চাকা’।সেদিনই চালু করা হয় বিশেষ রঙের রিকশা । তবে গুলশান এলাকায় অন্যান্য গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় সে সময় মেয়রের সমালোচনা হয়।মেয়র হওয়ার এক বছরের মাথায় ঘটা করে উত্তরায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু করে ‘সবুজ ঢাকা’ গড়তে তিন থেকে চার বছর সময় চান আনিসুল হকমেয়র হওয়ার এক বছরের মাথায় ঘটা করে উত্তরায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু করে ‘সবুজ ঢাকা’ গড়তে তিন থেকে চার বছর সময় চান আনিসুল হকবিমানবন্দর সড়কের যানজট কমাতে মহাখালী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে ইউলুপ করার উদ্যোগ নেন আনিসুল হক। ইতোমধ্যে মহাখালী থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।রাজধানীর দৃষ্টিদূষণ কমানোর উদ্যোগ হিসেবে বিভিন্ন সড়কে থাকা বৈধ-অবৈধ বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন সরানোরও উদ্যোগ নিয়েছিলেন উত্তরের মেয়র। বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২০ হাজার অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের ভাষ্য।দূষণ কমানো ও সৌন্দর্য্যবর্ধনের অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন পুরোনো ভবন রঙ করতে বাড়ির মালিকদের প্রতি অনুরোধ করেন মেয়র আনিসুল হক।গত বছরের ৩১ মার্চ রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক আলোচনায় তিনি বলেন, “ভবন মালিকদের অনুরোধ করতে চাই- যাদের ভবন অনেক পুরনো, যেগুলো রঙ করেননি, সেগুলো দূষণ করছে।এগুলো রঙ করেন, তা না হলে মেয়র কিন্তু টাফ হয়ে যাবে। তখন কিন্তু হ্যান্ডেল করতে পারবেন না।
মেয়র থাকাকালীন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক প্রশস্ত করার কাজে হাতে দেন মেয়র আনিসুল হক। এ কাজ করতে গিয়ে উত্তরা, রূপনগর ও কালসী রোডের কবরস্থান সরিয়ে নেওয়া হয়। মেয়রের অনুরোধে মিরপুরের শিয়ালবাড়ির মাদবরবাড়ি কবরস্থান সরিয়ে নেওয়া হয় ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর। এছাড়া সে বছরের ১১ মে উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সড়কের সরকার পরিবারের কবরস্থানটি সরিয়ে নেওয়া হয়।এ বছরের ১৮ জানুয়ারি মিরপুরের শেওড়াপাড়া থেকে পীরেরবাগের ৬০ ফুট সড়ক পর্যন্ত সড়কটি প্রশস্ত করার কাজ শুরু করে রাজউক এবং সিটি করপোরেশন। ৩১ জানুয়ারি উচ্ছেদ অভিযান শেষে সড়কের নির্মাণকাজ শুরুর ঘোষণা দেন আনিসুল হক। সেদিন কাউন্সিলরদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “সমস্ত কাউন্সিলরদের বলেছি, এখনই সময়। আমরা অনেক পরিকল্পনা করেছি বিভিন্ন রাস্তার উন্নয়ন কাজের। যারা এ কাজে সহায়তা করবে না তাদের এলাকায় কাজ করব না।আমার স্ট্যান্ডিং ইনস্ট্রাকশন, যে কাউন্সিলর এলাকায় রাস্তা পরিষ্কার করে দিতে পারবেন না, উচ্ছেদ হবে না, সে কাউন্সিলরের এলাকায় আমরা উন্নয়ন কাজ করব না।লাকী আখন্দ অসুস্থ্য হওয়ার পর দুস্থ্য শিল্পী ও কলাকুশলীদের সহায়তায় ‘শিল্পীর পাশে ফাউন্ডেশন’ নামে একটি ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন মেয়র আনিসুল হক।রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানো, আধুনিক এলইডি বাতি স্থাপনের কাজও শুরু করেছিল উত্তর সিটি করপোরেশন। গণপরিবহনকে শৃঙ্খলায় আনতে ফ্র্যাঞ্চাইজি গঠন করে চার হাজার বাস নামানোর উদ্যোগের কথাও আনিসুল হক বলেছিলেন।নগরবাসীর অভিযোগ শোনা এবং নাগরিকরা যাতে ঘরে বসে বিভিন্ন সেবা পেতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে ২০১৬ সালের ৩ অগাস্ট চালু হয় ‘নগর’ অ্যাপ।এ বছর রাজধানীতে মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের দায় এড়ানোর চেষ্টা করে সমালোচিত হন আনিসুল হক।গত ১৪ জুলাই নগর ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আপনার ঘরের ভেতরে গিয়ে আমি মশারি টানাতে পারব না। আপনার চৌবাচ্চায় আমি ওষুধ লাগাতে পারব না। আপনার ঘরের ভেতর সামান্য স্বচ্ছ পানিতে যে মশা জন্মাচ্ছে, সেটা আমি মারতে পারব না।ওই বক্তব্যের জন্য পরদিন নগরবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন আনিসুল হক।বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা আর বছর জুড়ে খোঁড়াখুড়ির কারণে ভোগান্তির কারণেও ভুক্তভোগীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে মেয়র আনিসুল হককে।উত্তরা, গুলশনাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নের নামে গাছ কেটে ফেলার কারণেও উত্তর সিটি করপোরেশনের সমালোচনা হয়েছে।

মেয়র হিসেবে নগরবাসীর কাছে আরও কিছু প্রতিশ্র“তি ছিল আনিসুল হকের; সেগুলো বাস্তবায়নের আগেই বৃহস্পতিবার লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হককে স্মরণ করতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, আনিসুল হকের মৃত্যুটা আমাদের জন্য অনেকটাই অপ্রত্যাশিত। হঠাৎই তিনি অসুস্থ হয়ে যাবেন এটা কল্পনাও করতে পারিনি।শুক্রবার বিকালে মেয়র সাঈদ খোকনের বনানীস্থ বাসভবনে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।তিনি বলেন, আমার সঙ্গে তার (আনিসুল হক) অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। প্রতিদিন সকালে আমরা কুশল বিনিময় করতাম। নগরীর সমস্যাগুলো কিভাবে সমাধান করা যায় তার উদ্যোগ নিতাম। তার বিভিন্ন কর্মকা-ে আমি অনুপ্রাণিত হই। আবার আমার বিভিন্ন কর্মকা-ে তিনি অনুপ্রাণিত হতেন। দু’জনে মিলেই দুই-আড়াই বছর সময়ে আমরা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেছি। অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। হঠাৎ করেই এমন একটা ঘটনা ঘটবে এটা আমার কল্পনারও বাইরে ছিল। আমি অত্যন্ত ব্যথিত।আনিসুল হকের শূন্যতা সহজে পূরণ হবে না বলেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি সাঈদ খোকন। বলেন, ‘তিনি বলিষ্ঠ ও সাহসী মানুষ ছিলেন। আনিসুল হকের মতো মানুষ প্রতিদিন জন্মাবে না। তারপরও আমরা আশা করি, যারা দায়িত্বে থাকবেন তারা এ শূন্যতাকে পূরণ করার চেষ্টা করবেন। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের জন্য সাহায্য সহযোগিতা থাকবে। তার যদি কোনও ভুল হয়ে থাকে আপনারা তা ক্ষমা করে দেবেন। আমি তার ছোট ভাই হিসেবে তার হয়ে ক্ষমা চাইছি।সাড়ে তিন মাস অসুস্থ থাকার পর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে (লন্ডনের স্থানীয় সময় ৪টা ২৩ মিনিট) লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে আনিসুল হক মারা যান।লন্ডনের রিজেন্ট পার্ক মসজিদে শুক্রবার বাদ জুমা ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হকের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

এরপর শনিবার বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে আনিসুল হকের মরদেহ দেশে এসে পৌঁছাবে।পরে আর্মি স্টেডিয়ামে আরেক দফা জানাজা শেষে আনিসুল হককে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে। ছোট ছেলে শারাফুল হকের কবরেই শায়িত হবেন তিনি।২০০২ সালে ৬ বছর বয়সে মারা যান আনিসুল হকের ছোট ছেলে শারাফুল হক।বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে (লন্ডনের স্থানীয় সময় ৪টা ২৩ মিনিট) লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। চিকিৎসকরা তার কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসযন্ত্র (ভেন্টিলেশন যন্ত্র) খুলে নেয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। সোমবার রক্তে সংক্রমণের কারণে আনিসুল হকের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) স্থানান্তর করা হয়।তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে বৃহস্পতিবার লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়।এর আগে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে তার কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র খুলে নেয়া হয়।মঙ্গলবার মেয়রের পরিবারের এক সদস্য বলেন, রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাকে আবার আইসিইউতে নেয়া হয়।নাতির জন্ম উপলক্ষে ২৯ জুলাই সপরিবারে আনিসুল হক যুক্তরাজ্যে যান। সেখানে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন।১৩ আগস্ট তাকে লন্ডনের ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।তার মস্তিষ্কের রক্তনালিতে প্রদাহজনিত সেরিব্রাল ভাসকুলাইটিস ধরা পড়লে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেয়া হয়।অবস্থার উন্নতি হলে ৩১ অক্টোবর তাকে আইসিইউ থেকে রিহ্যাবিলিটেশনে স্থানান্তর করা হয়।১৯৫২ সালের ২৭ অক্টোবর নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন আনিসুল হক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করে তিনি ১৯৮৬ সালে মোহাম্মদী গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন।২০১৫ সালে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী আনিসুল হক আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন।