প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচনে যদি দেশের মানুষ ভোট দেয় তাহলে আবার সরকার গঠন করবেন তিনি। তবে জনগণ ভোট না দিলেও কিছু করার নেই। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক কম্বোডিয়া সফর সম্পর্কে দেশের মানুষকে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেশটাকে স্বাধীন করেছি, স্বাধীনতার চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ব। তারপর জনগণের ইচ্ছা কাকে ভোট দেবে। আমি নিজেই তো স্লোগান দিয়েছি যে আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব। কাজেই ভোট দিলে আছি না দিলে নাই।’ সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশ টিভির সাংবাদিক জয় যাদব বলেন, প্রতিবার নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ধরনের জরিপ করান। এবারও করিয়েছেন। সে জরিপের ফলাফল কী এসেছে তা জানতে চান তিনি। প্রশ্ন করেন, কী পরিমাণ আওয়ামী লীগের এমপি ডেঞ্জার জোনে আছেন? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অন্তত রেড জোনে কেউ নেই।’

জরিপ করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জরিপের মাধ্যমে তিনি দেখেন যে কে কেমন করছেন, কার কেমন গ্রহণযোগ্যতা। তিনি বলেন, ‘কিন্তু সেটা তো পাবলিকলি বলব না। কারো কোনো দুর্বলতা দেখলে তাকে সতর্ক করি। সেটা তো সবার মধ্যে বলব না।’ তবে দেশের মানুষ যদি সত্যি উন্নয়ন চায়, তাহলে নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বেছে নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে উন্নয়নশীল জাতিতে পরিণত করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগে যেখানে ছিল ভিক্ষুক জাতি, এখন উন্নয়নের রোল মডেল। অন্তত এই জায়গায় বাংলাদেশটাকে নিয়ে আসতে পেরেছি।’ এ সময় সাংবাদিকদের সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে না লিখলে না কি পত্রিকা চলেই না। পত্রিকা পড়ে তো আর দেশ চালাই না। দেশ চালাই ভালোবেসে। বাবার কাছ থেকে শিখেছি কীভাবে উন্নয়ন করতে হয়। সেভাবেই কাজ করছি।’

সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। মনোনয়নের ব্যাপারে আপনার চিন্তাভাবনা কী?জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটাই উত্তর, শত ফুল ফুটতে দেন। সবাইকে প্রার্থী হতে দেন। এটা তো সবার রাজনৈতিক অধিকার। শত ফুল ফুটবে। তার মধ্যে সময় আসলে আমরা ভালোটা বেছে নেব। কীভাবে বেছে নেব সেটা সময়ই বলে দেবে।’ আগাম নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পার্লামেন্টারি সিস্টেম অব ইলেকশনে যে কোনো সময় ইলেকশন দেওয়া যায়। কিন্তু এমন কোনো দৈন্যদশায় পড়িনি যে আগাম নির্বাচন দিতে হবে।’

দেশে চলমান উন্নয়নকাজের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ না থাকলে তো উন্নয়নকাজ হয় না। আমি চ্যালেঞ্জ দিতে পারি এত অল্প সময়ে কোনো দেশে এত উন্নয়ন কাজ কখনো হয়নি।’ সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল জানতে চান, খালেদা জিয়া আদালতে জানিয়েছেন যে তিনি শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করেছেন। অথচ সম্প্রতি সৌদি আরবে টাকা পাচারের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততা বিষয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর এসেছে। এ ক্ষেত্রে সরকার কি তাঁকে ক্ষমা করবে?

এই প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এমন কী অপরাধ করেছি যে আমি ক্ষমা চাইব? তাঁর (খালেদা জিয়ার) উচিত দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া।’ ‘ছবি বিশ্বাসের গাড়িতে আগুন দিল, ২০১৪-১৫ সালে কীভাবে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। কাজেই ক্ষমাটা ওনার জাতির কাছে চাওয়া উচিত’, যোগ করেন শেখ হাসিনা।

এ সময় বিএনপি-জামায়াত সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। দেশের গণমাধ্যমের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কেন এই টাকা পাচারের খবর তুলে ধরা হলো না? তিনি বলেন, সৌদিতে যে বিশাল শপিং মল, সম্পদ পাওয়া গেছে। আপনাদের (সাংবাদিকদের) তো এ ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখি না। এত দুর্বলতা কিসের জন্য? এই যে মানি লন্ডারিং, এটা যে বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার ছেলেরা করেছে এটা তো আমরা বের করিনি। এটা বের করেছে আমেরিকা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বেশির ভাগ পত্রিকা কিন্তু আমিই পারমিশন দিয়েছি। সে পত্রিকাগুলোর এতটুকু সাহস হলো না যে খবরটা প্রকাশ করি। কোনো সরকার সাহস পায় নাই, আমি প্রাইভেট চ্যানেলের অনুমোদন দিয়েছি। যাদের এত টাকা তারা জানে কীভাবে মুখ বন্ধ করতে হয়? হতে পারে আপনাদের মুখে কোনো রসগোল্লা ঢুকিয়ে দিয়েছে।’ এ সময় কম্বোডিয়া সফরের বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন শেখ হাসিনা।