ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফসিলের কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এটি নির্বাচন কমিশনের চরম ব্যর্থতা। সরকার হেরে যাওয়ার ভয়ে এ সুযোগ নিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল।বুধবার সকালে এ উপনির্বাচনের তফসিলের কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। ডিএনসিসির সম্প্রসারিত অংশের কাউন্সিলর নির্বাচনের সার্কুলারের কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়। পৃথক দুটি রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বে রুলসহ এ আদেশ দেন।

উপনির্বাচন স্থগিত সম্পর্কে হাইকোর্টের নির্দেশের বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা নির্বাচন কমিশনের চরম ব্যর্থতা। কারণ, তারা সীমানা নির্ধারণ না করেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। এটা আইন অনুযায়ী হয় না।মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সরকার যেহেতু নির্বাচনের ফলাফল আগেই জানত, অর্থাৎ তারা হেরে যাবে, তাই তারা সুযোগ নিয়েছে বলে আমরা মনে করি। তিনি বলেন, একই সঙ্গে আমরা মনে করি এটা উদ্দেশ্যমূলক। তাদের (নির্বাচন কমিশন) আগেই সবকিছু ঠিকঠাক করা উচিত ছিল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, যার ভিত্তিতে রিট করা হয়েছে এবং আদালত রুল জারি করেছেন তাতে যদি কোনো ঘাটতি থাকে, তাহলে তার দায়ভার তো নির্বাচন কমিশনের। এই রিট তো এক বছর আগেই করা হয়েছিল। তাহলে গত এক বছরে তারা কী করলেন? যে সমস্যা আছে তার সমাধান করা তো উচিত ছিল। অথচ এক বছরেও নির্বাচন কমিশন কেন পদক্ষেপ নেননি।নির্বাচন যেন না হয় সরকারের এমন মনোভাব ছিল জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আর সরকার তো এটাই চাচ্ছিল যে, নির্বাচন বন্ধ হয়ে গেলে তাদের জন্যই ভালো। একদিকে নির্বাচন কমিশনের ওই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। অন্যদিকে নির্বাচনের সুযোগ দিয়ে সেই নির্বাচন বন্ধ করেছে। নির্বাচন বন্ধের কারণ সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই নির্বাচন বন্ধ করার কারণ হচ্ছে, আমরা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমাদের প্রার্থীকে নিয়ে জনগণের কাছে যেতে পারতাম। জনগণ আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতো। আমরা মনে করি, জনগণ যে রায় দিতো সে রায় আমাদের পক্ষেই আসতো। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সেটা তারা চায় না বলেই এটা করেছে।৯ জানুয়ারি মেয়র পদে উপনির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিল ও ১৮টি সম্প্রসারিত অংশে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর নির্বাচনে সার্কুলার কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে রুল চেয়েছেন হাইকোর্ট।গত ৩০ নভেম্বর মেয়র আনিসুল হকের আকস্মিক মৃত্যুর পর ডিএনসিসির মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৬ ফেব্র“য়ারি ডিএনসিসির মেয়র পদসহ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি করে ৩৬টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং ৬টি করে ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডেরও ভোট হওয়ার কথা ছিল।৯ জানুয়ারি তফসিল ঘোষণার এক সপ্তাহের ব্যবধানে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গতকাল পৃথক রিট হয়। একটি রিটের আবেদনকারী ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আতাউর রহমান। অপর রিট আবেদনকারী হলেন বেরাইদ ইউপির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। জএদিকে, ঢাকা সিটি করপোরেশনের উপ-নির্বাচন (ডিএনসিসি) স্থগিত হওয়ার পেছনে সরকারের নীলনকশা দেখছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেছেন, এ নির্বাচন বানচাল সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নীলনকশার বাস্তবায়ন। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করছিলেন রিজভী। সকালে রিট আবেদনের শুনানি শেষে ডিএনসিসি উপ-নির্বাচনের তফসিল এবং সার্কুলারের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। এর প্রতিক্রিয়া জানাতে ব্রিফিং ডাকে বিএনপি। সেখানে দলের মুখপাত্র রিজভী বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জেনে-শুনে ত্র“টিপূর্ণ নির্বাচন করতে চেয়েছেন। ডিএনসিসিতে সংযুক্ত নতুন যে ১৮টি ওয়ার্ডের নির্বাচন হচ্ছে, সেখানে পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এখন যারা কাউন্সিলর হবেন, তারা কি পাঁচ বছরের জন্য হবেন, নাকি বিলুপ্ত ইউনিয়ন পরিষদে দায়িত্ব পালন বিবেচনায় বাকি আড়াই বছরের জন্য হবেন, সেটা পরিষ্কার করা হয়নি। আসলে সরকার নির্বাচন কমিশনকে বিভিন্ন ধরনের ভুল করতে নির্দেশ দিয়েছে, তার বাস্তবায়ন করেছে ইসি।বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ঢাকা সিটিতে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সরকারের ভরাডুবি হবে। তাদের মানসম্মান ক্ষুণœ হবে। এজন্যই তারা ইসিকে ত্র“টিপূর্ণ নির্বাচনের নির্দেশ দেয়।