ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফসিলের কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।ডিএনসিসির সম্প্রসারিত অংশের কাউন্সিলর নির্বাচনের সার্কুলারের কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছে।বুধবার সকালে পৃথক দুটি রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বে রুলসহ এ আদেশ দেন।৯ জানুয়ারি মেয়র পদে উপনির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিল ও ১৮টি সম্প্রসারিত অংশে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর নির্বাচনে সার্কুলার কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে রুল চেয়েছেন হাইকোর্ট।গত ৩০ নভেম্বর মেয়র আনিসুল হকের আকস্মিক মৃত্যুর পর ডিএনসিসির মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৬ ফেব্র“য়ারি ডিএনসিসির মেয়র পদসহ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি করে ৩৬টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং ৬টি করে ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডেরও ভোট হওয়ার কথা ছিল।৯ জানুয়ারি তফসিল ঘোষণার এক সপ্তাহের ব্যবধানে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মঙ্গলবার পৃথক রিট হয়। একটি রিটের আবেদনকারী ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আতাউর রহমান। অপর রিট আবেদনকারী হলেন বেরাইদ ইউপির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম।

আদালতে আতাউরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আহসান হাবিব ভূঁইয়া। জাহাঙ্গীরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রাশিদা চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।হাইকোর্টের আদেশ বিষয়ে রিট আবেদনকারী মোস্তাফিজুর রহমান খান আজ বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফসিল, ১৮টি কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ৬টি কাউন্সিলর নির্বাচনের সার্কুলার তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আদেশের বিষয়টি নির্বাচন কমশিনকে অবহিত করা হয়েছে। কমিশন পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। কমিশনের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এদিকে, অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেছেন, ডিএনসিসি উপ-নির্বাচন বিষয়ে এখনও সরকারের কোনও নির্দেশনা পাইনি। নির্দেশনা পেলেই আমি পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নিয়ে কাজ শুরু করবো। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠানে হাইকোর্টের তিনমাসের স্থগিতাদেশ বন্ধে পাল্টা আইনি ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশন ও অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তার এই আহ্বানের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বাংলা ট্রিবিউনকে অ্যাটর্নি জেনারেল ওই কথা বলেন।

জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছি। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলছি। তিনি আরও বলেন, স্থগিতাদেশের মাধ্যমে মানুষের ভোটাধিকার ক্ষুণœ হলো। ভোটের অধিকার খর্ব হলো। সিটি করপোরেশনের মতো একটি প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ছাড়া চালিয়ে নেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটা সরকারের নীলনকশা। হাইকোর্টের রায় শেষ কথা নয়। সরকার যদি পাল্টা আইনি উদ্যোগ না নেয় তাহলে বুঝতে হবে, ‍মূলত তারা জনগণকে ফেস করতে চাচ্ছে না। সরকার চায় না বলেই নানা ফন্দিফিকির করে নির্বাচন বানচাল করছে।জাহাঙ্গীর আলমের করা রিট আবেদনে ৯ জানুয়ারি উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিল ও সার্কুলার কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে। রুল হলে তা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ঘোষিত তফসিল ও সার্কুলারের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়েছে। রিটে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, স্থানীয় সরকারসচিব ও নির্বাচন কমিশন সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।রিট আবেদনের যুক্তিতে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের (৮ নম্বর) এলাকা থেকে বাদ দিয়ে ৩৭ থেকে ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর সিটি করপোরেশনে যুক্ত করা হয়। ওয়ার্ডগুলোর ভোটার তালিকা এখনো প্রস্তুত করা হয়নি। অথচ মনোনয়নপত্র আহ্বান করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন হচ্ছে ১৮ জানুয়ারি, যা একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত নয়। নির্বাচিত কাউন্সিলরদের মেয়াদ কত দিন হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। এ অবস্থায় ইসির তফসিল ঘোষণা আইনসম্মত হয়নি।রিট আবেদনের ভাষ্য, ২০০৯ সালের স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনের ৪ ধারা অনুসারে ২০১৬ সালের ২৮ জুন আটটি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকাকে সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আবেদনকারী (জাহাঙ্গীর আলম) একজন ইউপি চেয়ারম্যান, এখনো তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। ওই এলাকা উত্তর সিটি করপোরেশনভুক্ত করা হলেও ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেওয়া হয়নি। এমনকি তাঁর অব্যাহতিসংক্রান্ত কোনো গেজেটও হয়নি। গত ২৬ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক গেজেটে ৩৭ থেকে ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডকে উত্তর সিটি করপোরেশনে সম্প্রসারিত করা হয়। রিট আবেদনকারী নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক। নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে আইন অনুসারে ৩০০ জন ভোটারের নাম, স্বাক্ষর ও ওয়ার্ড উল্লেখসহ সমর্থনসংক্রান্ত তথ্য দিয়ে প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হয়। ভোটার তালিকা প্রকাশিত না হলে আবেদনকারী প্রার্থী হতে পারছেন না।

অপর রিট আবেদনকারী আতাউর রহমানের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, গত জুলাইয়ে নতুন করে ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত হয়ে উত্তর সিটি করপোরেশন সম্প্রসারিত হয়। যার মধ্য দিয়ে ওয়ার্ড সংখ্যা ৩৬ থেকে ৫৪-তে দাঁড়ায়। আইন অনুসারে মেয়রের পদসহ করপোরেশনের শতকরা ৭৫ ভাগ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের নির্বাচন হলে ও নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নাম গেজেটে প্রকাশিত হতে হবে। কিন্তু সম্প্রসারিত ওয়ার্ডে নির্বাচন না হওয়ায় ৭৫ শতাংশ পূর্ণ হচ্ছে না। অন্যদিকে, ১৮টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মেয়াদ কত দিন হবে, তা উল্লেখ নেই। এখানে আংশিক মেয়াদে নির্বাচনের সুযোগ নেই। কারণ, শুধু আকস্মিক শূন্যতায় আংশিক মেয়াদে নির্বাচন হতে পারে। অথচ এসব ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে আকস্মিক শূন্যতা হয়নি। তাই এই মুহূর্তে এসব ওয়ার্ডে বর্তমান আইনে নির্বাচনের সুযোগ নেই বলে জানান এই আইনজীবী। তিনি বলেন, নির্বাচন হলে ডিএনসিসি ও মেয়র পদ সঠিকভাবে গঠিত হবে না। আবেদনকারী ২০১৫ সালে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, যার মেয়াদ ২০২১ সাল পর্যন্ত। ইউপি এলাকা সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়ার পর সে ক্ষেত্রে কী হবে, তাও স্পষ্ট নয়। এসব যুক্তিতে নির্বাচনের ওই তফসিল স্থগিত চেয়ে রিটটি করা হয়।