জঙ্গিদের কারাগারে পাঠানোর সময় প্রায়ই কোর্ট পরিদর্শক তাদের ‘জেল ওয়ারেন্ট’র সঙ্গে শনাক্তকারী কাগজ পাঠান না। এ কারণে কারাগারে ওই জঙ্গিদের শনাক্ত করতে ২-৩ মাস সময় লেগে যায়। যদি ওয়ারেন্টের সঙ্গে আসামির জঙ্গি শনাক্তকারী কাগজ আসে, তবে তাদের কারাগারে আনার পরপরই আলাদা সেলে রাখা সম্ভব হয়।

রোববার (২১ জানুয়ারি) দুপরে পুরান ঢাকায় কারা অধিদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। রোববার একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, কারাগারে জঙ্গিদের সংশোধনের ব্যবস্থা না থাকলেও জঙ্গিবাদের চর্চার সুযোগ থাকছে। এর পর এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। আইজি প্রিজন বলেন, সারাদেশের ৬৮ কারাগারে কয়েদি রয়েছেন ৭ হাজার। এর মধ্যে ৬শ’ জনের মতো জঙ্গি। বর্তমানে শনাক্তকৃত সব জঙ্গিদের কারাগারে তাদের সংগঠন অনুযায়ী আলাদা আলাদা সেলে রাখা হয়। এতে জঙ্গিরা নিজেদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারলেও অন্য জঙ্গি সংগঠনের কোনো সদস্যের বা কারাগারে থাকা সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে না। এতে কারাগারে সাধারণ বন্দিদের তারা প্রভাবিতও করতে পারে না।

কারাগারের ভেতরে জঙ্গিদের সংশোধনের কোনো উদ্যোগ আছে কি-না? এমন এক প্রশ্নের জবাবে আইজি প্রিজন বলেন, কারাগারে এমন কোনো উদ্যোগ নেই। তবে হয়তো সরকারের এমন পরিকল্পনা আছে। যদি সরকার অনুমতি দেয়, তবে এই উদ্যোগ নেওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে জঙ্গিদের কারাগারের ভেতর থেকেই সংশোধিত করার কাজ করতে হবে। বাইরে থেকে কাউকে এনে তা করা যাবে না। এরজন্য কারাগারের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে বলে জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন।জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যাঁরা গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগারে যাচ্ছেন, তাঁদের সংশোধনের কোনো ব্যবস্থা না থাকলেও জঙ্গিবাদ চর্চার সুযোগ আছে। এতে করে গ্রেপ্তার হয়ে সাজা খাটার পরও অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন না।শনিবার পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটি) উদ্যোগে পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত ও গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের স্বজনেরা একটি কর্মশালায় অংশ নেন। জঙ্গিবাদের ঝুঁকি থেকে দেশকে রক্ষার জন্য তাঁরা নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনেরা সবাই কারাগারের সমস্যার কথা বলেছেন।পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, তাঁরা কারাগারের ভেতরে সংশোধনেরব্যবস্থা করার সুপারিশ করেছেন। তাঁরা চান যাঁরা উগ্র মতবাদে দীক্ষা পেয়েছেন, তাঁরা কারাগারেই ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা পাক এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক।জামিনে মুক্ত ও পেশায় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের সাবেক উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা গতকালের সভায় বলেন, জঙ্গিবাদে যুক্ত ব্যক্তিদের কারাগারের একটি ভবনে একসঙ্গে রাখা হয়। তাঁরা অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্তদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ যেন না পান, সে জন্যই এই ব্যবস্থা। কিন্তু এক ভবনে থেকে আসলে তাঁরা উগ্রবাদ নিয়ে সুন্দরভাবে আলোচনা-পর্যালোচনা করেন এবং জঙ্গিবাদকে জিইয়ে রাখেন। তিনি আরও বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের বেশ কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে। একটি বাহিনীর বিরুদ্ধে মারাত্মক নির্যাতনের অভিযোগ আছে। নির্যাতনের শিকার হয়ে কোনো ব্যক্তি যখন কারাগারে আসেন, তখন জঙ্গিবাদের পক্ষে অনেকের মনে সহানুভূতি সৃষ্টি হয়। তাঁর মতে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা মতাদর্শ দিয়ে করতে হবে। নির্যাতন করে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ করা যাবে না।