ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা এবং উপাচার্য কার্যালয়ে ভাংচুরের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন ‘সন্তোষজনক’ না হলে ‘গণতদন্ত কমিটি’ গঠনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। সোমবার জোটের আহ্বানে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘট শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় এক সমাবেশে এ হুঁশিয়ারির পাশাপাশি নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।

সকাল ৭টায় ছাত্র ধর্মঘট শুরুর পর কলাভবনের ফটকে তালা দিয়ে দুপুর পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। দুপুরে মধুর ক্যান্টিন থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে তারা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমাবেশে মিলিত হন।প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক ইমরান হাবিব রুমন সমাবেশে বলেন, তদন্ত কমিটিতে যারা আছেন, তারা যখন শিক্ষক সমিতির মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে নিপীড়কদের পক্ষে কথা বলেন, তখন আমরা কীভাবে সেই তদন্তের ওপর আস্থা রাখি?তদন্ত কমিটি যদি প্রহসনের চেষ্টা করে বা প্রহসনের রায় দেয়, তাহলে আমরা ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে গণতদন্ত কমিটির করে, গণমাধ্যমের সাহায্যে জনগণ কাছে তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করব।মাসব্যাপী কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে রুমন বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি চার দফা দাবিতে সারাদেশে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেবে ছাত্রজোট।

সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে গত ১৫ জানুয়ারি উপাচার্যের কার্যালয়ে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’দের ব্যানারে আন্দোলনরতদের ওপর চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।ওই ঘটনায় ছাত্রীদেরও নিপীড়ন করা হয় অভিযোগ এনে হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের শাস্তির দাবিতে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়, যার নেতৃত্বে রয়েছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো।দুইদিন পর এই আন্দোলকারীরা প্রক্টরের কার্যালয়ের ফটক ভাংচুরের পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর গত ২৩ জানুয়ারি তারা উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানকে অবরুদ্ধ করলে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা গিয়ে আন্দোলনকারীদের পিটিয়ে সরিয়ে দেয়।বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, উপাচার্যের উপর সেদিন ‘আক্রমণ হয়েছিল’, আর ছাত্রলীগ গিয়েছিল তাকে উদ্ধার করতে।আবার উপাচার্য আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি মনে করে, ওই হামলা চালিয়েছিল বহিরাগতরা।ওই তিন দিনের ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ১০ জন শিক্ষকের সঙ্গে একজন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধিকেও একটি কমিটিতে রাখা হয়।উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার সারাদেশে ছাত্র ধর্মঘট করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। ‘নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে আন্দোলনরতরাও এই ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল সমাবেশ করে।

ভিসি কার্যালয়ে বিক্ষোভে দুই দফা হামলার ঘটনায় দায়ী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, প্রক্টর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচির সময় ভাঙচুরের অভিযোগে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার এবং অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নির্বাচন দেওয়ার চার দফা দাবি রয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের। এ চার দফা দাবি পূরণে এবং ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আগামী বুধবার সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল এবং ১ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে দাবি পক্ষ’ পালনের ঘোষণা দেন ছাত্রজোটের সমন্বয়ক রুমন।সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের একাংশের এই সভাপতি সমাবেশে জানান, ছাত্রলীগের ‘হামলা, সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বের’ তথ্য প্রকাশ করে ফেব্র“য়ারির শেষ দিকে তারা ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করবেন।তিনি বলেন, সারা দেশে ছাত্র ধর্মঘট স্বতস্ফূর্তভাবে পালিত হলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার ইডেন কলেজ ও বরিশালের বিএম কলেজে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জোটের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ধর্মঘটের সমর্থনে লিফলেট বিতরণ করতে গেলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তা কেড়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন রুমন।

ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী সমাবেশে বলেন, কেন তিনটি গেইট ভাঙল শিক্ষার্থীরা তা বারবার বলা বলছে। উপাচার্য আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে গেইট নামক শব্দ কেন থাকবে? কেন আপনি গেইটে তালা বন্ধ করে রাখলেন? তার (উপাচার্য) উচিত ছিল শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলা; তাদের সমস্যার সমাধান করা।প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ এনে লিটন বলেন, “ছাত্রলীগ যখন শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও করল, তখন গেইটে তালা ছিল না। গত ২০-৩০ বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থীর ওপর এভাবে মামলাও দেওয়া হয়নি। এই ব্যর্থ প্রক্টর ছাত্রলীগের নিপীড়নের বিচার না করে, নিপীড়কদের পক্ষ নিয়ে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করল।ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “ধিক্কার প্রশাসনকে। শিক্ষক সমিতি উল্টো ছাত্রলীগের পক্ষ নিয়ে মানববন্ধন করল। অথচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত শিক্ষার্থীদের একবার দেখতে যাওয়ারও প্রয়োজন মনে করল না।বাম সংগঠনের আন্দোলন সংগ্রামে কর্মী ‘কম হওয়া নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ঠাট্টার’ জবাবে লিটন নন্দী বলেন, “তাদের চ্যালেঞ্জ করছিৃ সরকার ক্ষমতায় না থাকলে আর হলের সিটের দখল দায়িত্ব বাদ দিয়ে আসেন, শিক্ষার্থীদের ওপর প্রেসার বন্ধ করেন। ডাকসু নির্বাচন দেওয়া হোক, দেখেন শিক্ষার্থীরা পর্দার আড়ালে কাকে ভোট দেয়। এরপর দেখবেন ছাত্রলীগের আন্দোলনে ২০০ শিক্ষার্থীও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

অন্যদের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জি এম জিলানী শুভ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের অপরাংশের সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবীর ও ছাত্র ঐক্য ফেরামের যুগ্ম আহ্বায়ক সরকার আল ইমরান সমাবেশে বক্তব্য দেন।