শেষ সময়ে বাণিজ্য মেলায় ছাড়ের হিড়িক পড়েছে। ক্রেতারাও লুফে নিচ্ছে সে সুযোগ। ছুটির দিনে বাণিজ্যমেলায় তাই উপচে পড়া ভীড়, বেচাকেনাও ভীষণ।এই কটা দিন সর্বোচ্চ বিক্রির আশা ব্যবসায়ীদের।চারদিন মেলার সময় বাড়লেও যেন কম হয়েছে নগরবাসীর জন্য। আরো কদিন থাকলে পণ্য কিনে খুশি হতো ক্রেতারা, ব্যবসায়ীদেরও লাভের পরিমাণ বাড়তো। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ২৩তম আসরের শেষ মুহূর্তে চলছে অফারের ছড়াছড়ি। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় পুরো রাজধানী যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে বাণিজ্য মেলায়।শুক্র-শনি, এই দুটো দিন রাজধানীবাসীর গন্তব্য যেন বাণিজ্য মেলা।দূর-দূরান্ত থেকেও এসেছেন অনেকে। তাই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখর মেলা প্রাঙ্গণ।ক্রেতা সমাগমে দম ফেলার ফুরসত নেই বিক্রেতাদের। বিক্রির লক্ষমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা তাদের। তবে মেলায় অধিকাংশ হচ্ছে নারী ক্রেতা। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ে বিকিকিনিও জমজমাট। মেলার শেষ মুহূর্তে এসে ক্রেতাদের ভিড় সামাল দিতে ঘাম ছুটছে বিক্রেতাদের। বেচাবিক্রি বাড়ায় খুশি ব্যবসায়ীরা।

শুক্রবার সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা যায়, মেলার শুরুতে স্টলগুলোয় বিভিন্ন পণ্যে ছাড় ও অফারের ছড়াছড়ি থাকলেও এখন তা আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। ছুটির দিনে ঠাসা ভিড়ের মধ্যে বিভিন্ন পণ্যের স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলো পণ্য ছাড়ের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। মেলায় গৃহস্থালি, আসবাবপত্র, প্রসাধনী, জুতা, শীতের কাপড়, শাড়ি, খেলনা, খাবার, হস্তশিল্প, জুয়েলারি- সব স্টলই ছিল লোকারণ্য। ইলেকট্রনিকস পণ্যে ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে ছিল দেশীয় ব্র্যান্ড যমুনা। প্রতি বছরই মেলায় একটি বড় অংশজুড়ে থাকে দেশি-বিদেশি ইলেকট্রনিকস পণ্য। তাই এবারও হয়নি তার ব্যতিক্রম। ক্রেতাসাধারণের চাহিদার কথা মাথায় রেখে দেশীয় প্রতিষ্ঠান যমুনা ইলেকট্রনিকস দিচ্ছে শতাধিক পণ্যে বিশেষ ছাড় ও অফার। এবং থাকছে নিশ্চিত পুরস্কারও। মেলাঘরে আরো দেখা যায়, বাবা-মায়ের হাত ধরে ও কোলে চড়ে এসেছে শিশুরা।অনেকে শিশুদের দেখা গেছে মেলার শিশুপার্কে ঘুরে বেড়াতে। আবার অনেক শিশুকে দেখা গেছে মায়ের হাত ধরে বিভিন্ন স্টলে ঘুরে বেড়াতে।

মায়ের সঙ্গে মেলার শিশুপার্ক ঘুরে দেখছে আনন্দ। আনন্দের মা বায়েবা বেগম জানান, শেষ মুহূর্তে ঘুরতে এলাম। বাচ্চাদের মেলা ঘুরে দেখা আর টুকটাক কেনাকাটা করব।মেলায় গৃহস্থালির টুকিটাকি কিনছিলেন হাসিনা বেগম। তিনি যুগান্তরকে বলেন, মেলায় টুকেই দেখছি অফারের ছড়াছড়ি। যদিও অনেক ভিড় তবে কম দামে অনেক জিনিস কিনতে পেরে ভালো লাগছে।

কসমেটিকস বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, শেষ মুহূর্তে এসে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের চাপ সামাল দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। তবে শেষ মুহূর্তে এসে পণ্যে বিভিন্ন অফার থাকার কারণে বেচাবিক্রি আরো বেড়েছে। তবে ভিড় থাকলেও বিক্রি ভালো হওয়ায় আমরা খুশি।এবারের মেলায় যমুনা ইলেকট্রনিকসই দিচ্ছে সর্বোচ্চ ছাড়। তাই যমুনার প্যাভিলিয়নে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। একটি ফ্রিজ কিনলে আরেকটি ফ্রিজ পাওয়ার সুযোগ। টিভিতে নগদ মূল্যছাড়।এছাড়া মোটরসাইকেল ক্রেতাদের জন্য থাকছে বিশেষ অফার। মেলা থেকে যমুনা ইলেকট্রনিকসের মোটরসাইকেল কিনলেই রেজিট্রেশন ফ্রি। এছাড়া শুধু যমুনা ইলেকট্রনিকস পরিদর্শন করলেই দর্শনার্থীদের ডিসকাউন্ট কুপন দেয়া হচ্ছে। মেলা শেষ হলে এ ডিসকাউন্ট কুপন দেখিয়ে যমুনার শোরুম থেকে যে কোনো পণ্য কিনলে পাওয়া যাবে ৫ শতাংশ ছাড়।

মেলায় মোটরসাইকেল কিনতে এসেছেন ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম।তিনি বলেন, পুরান ঢাকায় তিনি রডের ব্যবসা করেন, বাসা মিরপুরে। প্রতিদিনই ব্যবসার কাজে পুরান ঢাকায় যেতে হয়। ঘর থেকে বের হলেই জ্যামের কারণে নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে পারে না। প্রায় আড়াই ঘণ্টার মতো সময় লেগে যায়। তাই সময় বাচানোর জন্য মোটরসাইকেলের বিকল্প নেই।

দেশি-বিদেশি অন্য ব্র্যান্ড রেখে যমুনা কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই ব্যবসায়ী জানান, আমি যমুনার নিয়মিত ক্রেতা। বাসায় ফ্যান থেকে শুরু করে টিভি, ফ্রিজ, ওভেনসহ সবই যমুনার। এবারও মেলা থেকে একটি ফ্রিজ কিনে আরেকটি ফ্রিজ ফ্রি পেয়েছি। এছাড়া মোটরসাইকেল কিনলে রেজিস্ট্রেশন ফ্রি এটা লোভনীয় অফার বলে মনে হয়েছে। তাই এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না। দেশীয় ব্র্যান্ডের মধ্যে আমার কাছে যমুনার পণ্যই সেরা মনে হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) আয়োজিত মেলা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলার কথা থাকলেও তা বাড়িয়ে ৪ ফেব্র“য়ারি করা হয়েছে। কোনো সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াই মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে। প্রবেশ ফি ধরা হয়েছে জনপ্রতি ৩০ টাকা। ছোটদের জন্য ২০ টাকা।