রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছয়টি ব্যাংকে ঋণ খেলাপির পেছনে সরকার অনেকাংশে দায়ী বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। শনিবার সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসায়ী সম্মেলনে তিনি এ কথা করেন। সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ জানায়, ব্যাংকটিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ৯৪ হাজার কোটি টাকার ঋণপত্রের কমিশন দিতে সরকার গড়িমসি করছে। এ ছাড়া বিনামূল্যে প্রায় ৩৭ সেবা দেওয়ার কারণে ব্যাংকটি মুনাফা অর্জনে অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে পিছিয়ে পড়ছে।তবে এসব সমস্যার দায় স্বীকার করে নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ক্লাসিফায়েড লোন বেশি হওয়ার জন্য কিছুটা আমরাও দায়ী। আমাদের ব্যাংক ছয়টি আছে, সেই ছয়টির ওপর অনেক জারিজুরি করি। সোনালী ব্যাংক সবচেয়ে বড় ব্যাংক, সুতরাং জারিজুরিটা সোনালী ব্যাংকের ওপরে একটু বেশি হয়। জারিজুরি আমরা একটু কমাবার চেষ্টা করছি। আপনারা যখন কোনো প্রকল্প বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত মনে করবেন, সেটাতে আমরা জারিজুরি বন্ধ করার চেষ্টা করব।অর্থমন্ত্রী বলেন, তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৯ সালে না হলেও আগামী কয়েক বছরে সোনালী ব্যাংক আগের অবস্থানে ফিরে যাবে। তিনি বলেন, ‘সোনালী ব্যাংককে আমি বলেছিলাম যে আদর্শ ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করব। হবে না, আমি জানি ২০১৯ সালে হবে না। কিন্তু আমি বিশ্বাস করতে চাই, ইন এ কাপল অব ইয়ারস ইউ শুড এগেইন ব্যাক টু দিস পজিশন (আগামী কয়েক বছরের মধ্য এ অবস্থানে চলে আসবে)।

গেল ২০১৭ সালে সোনালী ব্যাংকের দেওয়া ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৪৬৬ কোটি টাকা। খেলাপির হার বাড়তি হওয়া সত্ত্বেও গ্রাহকরা এখনো ব্যাংকটির প্রতি আস্থা হারায়নি। ২০১৭ সালে ব্যাংকটিতে আমানতের পরিমাণ ৩৭২ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। বিপুল এই আমানতের পরও ব্যাংকটির ১৮১টি শাখা লোকসানের মধ্যে পড়ে গেল বছর।অনেক সময় সরকারের নানামুখী আবদারে ব্যাংকটিতে মুনাফা অর্জন কঠিন হয়ে পড়ছে বলে দাবি করেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আশরাফুল মকবুল। তিনি বলেন, ‘সোনালী ব্যাংক লিমিটেড বৃহত্তর জনস্বার্থে, সরকারের অভিপ্রায় অনুযায়ী গ্রাহকদেরকে ৩৭টি সার্ভিস বিনামূল্যে, ১৪টি সার্ভিস নামমাত্র মূল্যে দিয়ে থাকে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ৯৪ হাজার কোটি টাকার এলসি (ঋণপত্র) স্থাপনের কথা একটু আগে উল্লেখ করেছি। প্রচলিত নিয়মে, এ জন্য ৪০ পয়সা হারে কমিশন সোনালী ব্যাংকের পাওয়ার কথা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে গড়িমসি করছে।তবে ব্যাংক পরিচালনায় আরো সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীর। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের খেলাপির হার এখনো বেশি। আজকের যেই ঋণগুলো সেগুলো যেন ভবিষ্যতের খেলাপি না হয়। সেজন্য আপনারা আগেই থেকেই সেগুলো ভালোমতো কেওয়াইসি (গ্রাহক সম্পর্কে জানান) বলুন, ডিউ ডিলিজেন্স (এক ধরনের নিরীক্ষা) বলুন, সেগুলো করে সেগুলো কনফার্ম করবেন।’বিদায়ী বছরে ব্যাংকের আমানতের বিপরীতে ঋণ বিতরণের অনুপাত প্রায় সাড়ে ৪৩ শতাংশ। তাই ভালো ঋণ বিতরণের মাধ্যমে ব্যাংকটির আরো মুনাফা অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন গভর্নর ফজলে কবির। ২০১৭ সালের সোনালী ব্যাংকের মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪৫ কোটি টাকা।