সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জেলখানা কোনো আরাম-আয়েশের জায়গা নয়, তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া জেলকোড অনুযায়ী সব সুযোগ-সুবিধাই পাবেন। রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

খালেদা জিয়াকে কোনো ধরনের অসম্মান বা অমর্যাদা করা হচ্ছে না উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, জেলকোডে গৃহপরিচারিকা অথবা ব্যক্তিগত সহকারী রাখার কোনো বিধান নেই। ওয়ান-ইলেভেনের সময় আমাদের নেত্রীও জেলে ছিলেন। উনিও গৃহপরিচারিকা রাখেননি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও জেলে ছিলেন। তিনিও এ সুবিধা পাননি।খালেদা জিয়াকে ডিভিশন দেওয়া হচ্ছে না- বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বেগম জিয়াকে ডিভিশন দেওয়া না হলেও হয়তো অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ডিভিশন পেয়ে যাবেন। তবে যেখানে তাকে রাখা হয়েছে, সেটি তার থাকার উপযোগী করেই তৈরি করা হয়েছে।ওবায়দুল কাদের বলেন, ভবনটি পরিত্যক্ত হলেও একজন ভিআইপি আসামিকে রাখার মতো করেই ডেকোরেশন করা হয়েছে। তা ছাড়া ভবনটি খুব বেশি দিনের পরিত্যক্ত নয়।

উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেন।এছাড়া একই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের ছেলে তারেক রহমান, সাবেক এমপি কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদন্ড দেয়া হয়।একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত।রায়ের পর পরই খালেদা জিয়াকে আদালতের পাশে নাজিমউদ্দিন রোডের লালদালানখ্যাত ২২৮ বছরের পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।২০১৬ সালের ২৯ জুন থেকে ছয় হাজার ৪০০ বন্দিকে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ার রাজেন্দ্রপুরের নতুন কারাগারে স্থানান্তর করে পুরান কারাগার বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু দুই বছর চার মাস ১০ দিন পর দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে এই পরিত্যক্ত কারাগারেই দিন পার করছেন খালেদা জিয়া। এদিকে, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি সেবার গাড়ির জন্য আলাদা লেইনের পক্ষে অবস্থান নিলেও ভিআইপিদের জন্য বিশেষ সুবিধার পক্ষপাতি নন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে কাদের নিজের মতামত তুলে ধরেন, যার দপ্তরের অধীন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষে এই সংক্রান্ত প্রস্তাবটি বিবেচনাধীন।

সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ খেকে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়কে অ্যাম্বুলেন্স, ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এবং ভিআইপিদের চলাচলে সড়কে আলাদা লেইন চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়।এরপর থেকে ভ্আিইপিদের চলাচলে আলাদা লেইনের প্রস্তাব নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা।সাংবাদিকদের প্রশ্নে কাদের বলেন, এটা শুধু ভিআইপিদের জন্য আলাদা লেইন নয়, এখানে রোগীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি সেবার বিষয়টা আছে। এগুলো বিশেষভাবে করলে অসুবিধা কী? পারসোনালি আমি মনে করি, ওটা ঠিক আছে- অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি সেবা- এসব ব্যাপারে।ভিআইপিদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা যারা বা আক্ষরিক অর্থে যারা কাগজে-কলমে ভিআইপি, তাদের মন-মানসিকতা পরিবর্তন দরকার। আমার জন্য আলাদা সড়ক থাকতে হবে, এটার কোনো প্রয়োজনীয়তা নাই।উল্টোপথে ভিআইপি গাড়ির এভাবে চলাচলে সবসময় সমালোচনামুখর ওবায়দুল কাদেরউল্টোপথে ভিআইপি গাড়ির এভাবে চলাচলে সবসময় সমালোচনামুখর ওবায়দুল কাদেরআমি মনে করি, আমাদের ধীরে ধীরে ভিআইপি সংষ্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা উচিৎ। এদেশের মানুষ, জনগণের কথা আগে আমাদের ভাবতে হবে।মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রস্তাবের বিষয়ে কাদের বলেন, আমার কাছে প্রস্তাব এসেছে। ডিটিসিএ বিষয়টা খতিয়ে দেখছে।তবে বর্তমান অবস্থায় সড়কের মধ্যে এই ধরনের লেইনের জন্য জায়গা বের করা বেশ কঠিন বলে মন্তব্য করেন তিনি।আমাদের লেইন খুব কম, কতটা সম্ভব হবে, আমি জানি না। আপাতত ডিটিসিএ এমন ব্যবস্থা করতে পারবে, এই মুহূর্তে সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তারপরও আমরা ডিটিসিএ বসে সিদ্ধান্ত নেব।