আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৮ উপলক্ষ্যে কেরানীগঞ্জ ক্ষুদ্র গার্মেন্টস শ্রমিক কল্যাণ ইউনিয়ন, আগানগর ক্ষুদ্র গার্মেন্টস শ্রমিক কল্যাণ ইউনিয়ন এবং চরকালীগঞ্জ গার্মেন্টস শ্রমিক কল্যাণ ইউনিয়ন এর যৌথ উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের (বিএলএফ) সহায়তায় কেরানীগঞ্জ এক বিশাল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নারী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘সময় এখন নারীর : উন্নয়নে তাঁরা, বদলে যাচ্ছে গ্রাম-শহরে কর্ম জীবনধারা’। কেরানীগঞ্জের ক্ষুদ্র গার্মেন্টস শ্রমিকদের অংশগ্রহনে নারীর প্রতি সকল সহিংসতা বন্ধের শ্লোগান নিয়ে আয়োজিত শোভাযাত্রাটি বিএলএফ কেরানীগঞ্জ এর কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু করে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন রাস্তায় প্রদর্শন করে আবার বিএলএফ এর কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।

শোভাযাত্রা শেষে বিএলএফ এর কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন কেরানীগঞ্জ ক্ষুদ্র গার্মেন্টস শ্রমিক কল্যাণ ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ জাকির হোসেন পান্নু। সভায় বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ্ব বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তারা বাংলাদেশের ক্ষুদ্র গার্মেন্টস শিল্পসহ কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি সকল সহিংসতা বন্ধের জন্য জোর দাবি জানান। অপরদিকে নারী সহিংসতা ও যৌন হয়রানী বন্ধের জন্য যুগোপযোগী আইন প্রণয়নের জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানান। শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ক্ষুদ্র গার্মেন্টস শিল্পে শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের জন্য মালিক ও সরকারপক্ষকে নজরদারী করার জোর সুপারিশ করেন। নারীর ন্যায্যতা প্রাপ্তি, নারীর সমতা এবং নারীর সকল অধিকার প্রতিষ্ঠাই ছিল এ আলোচনা সভার মূল লক্ষ্য।

নারী দিবসের প্রতিপাদ্য
আন্তর্জাতিক নারী দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খিস্ট্রাব্দে মার্কিন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা মজুরি বৈষম্য, কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশ প্রভৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছিলেন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের সোসাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত হয় আন্তর্জাতিক প্রথম নারী সম্মেলন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় সম্মেলন। এ সম্মেলনে ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

নারীকে বাদ দিয়ে একটি সুন্দর সমাজ চিন্তা করা যায় না। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সমাজই হচ্ছে একটি আদর্শ সমাজ। তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়ন উল্লেখযোগ্যমাত্রায় বেড়েছে। নারী নিরাপত্তায় আইনী সুরক্ষা মজবুত হয়েছে। নারীর প্রতি খারাপ আচরণ, যেন হয়রানী বন্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রায় দেন মহামান্য হাইকোর্ট। ১৪ মে ২০০৯ তারিখ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির মামলা দায়েরের প্ররিপ্রেক্ষিতে কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সকল সরকারী, বেসরকারী, আধা সরকারী অফিস এবং সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানের নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ণ প্রতিরোধে একটি দিকনির্দেশনামূলক রায় ঘোষণা করেন।

গবেষণার ফল অনুযায়ী আমাদের দেশে বিবাহিত নারীর শতকরা ৮৭ জনই কোন না কোন ভাবে নির্যাতনের শিকার। পারিবারিক ভাবে এবং স্বামীর হাতে বেশি নির্যাতিত হন। ৭২ শতাংশ নারী কখনোই নির্যাতনের কথা কাউকে জানাননি। কিশোরীদের ক্ষেত্রে এ নির্যাতনের মাত্রা বেশি। ৩ শতাংশ নারী জীবনে স্বামীর বাইরে অন্য কারও মাধ্যমে যৌন নির্যাতনের শিকার হন। বিবাহিত নারীর চেয়ে অবিবাহিত নারীরা এ নিযার্তনের শিকার হন বেশি। ১৫-১৯ বছর বয়সীদের প্রায় ৪০ শতাংশ যৌন নির্যাতনের শিকার হন।

বাংলাদেশের উন্নয়নের পেছনে বিরাট ভূমিকা রয়েছে শ্রমজীবী নারীর। গার্মেন্টস শিল্পে ৪০ লাখ শ্রমিকের বেশির ভাগই নারী শ্রমিক। শ্রমিজীবী মানুষের একটি বড় অংশ গ্রামঅঞ্চলে বাস করে তারা কৃষি শ্রমিক। কৃষি শিল্প, হস্তশিল্প জাত দ্রব্য, চা শিল্প, হিমায়িত চিংড়ি, সেবা খাত প্রভৃতি শিল্পে নারী প্রধান কাজগুলো করে থাকেন। গৃহস্থালি কাজে নারীরা যে কাজ করেন তা জিডিপিতে অন্তভূর্ক্ত হয় না। এছাড়াও ভাসমান শ্রম বাজারে নারী দিন মজুর কাজ করেন।