জার্মান একটি সংস্থার বিচারে বাংলাদেশকে স্বৈরতান্ত্রিক দেশ হিসেবে চিহ্নিত করাকে দেশের জন্য লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।তিনি বলেছেন, যুদ্ধ করে যারা স্বাধীনতা অর্জন করেছিনে, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন যারা, তারা অত্যন্ত লজ্জাবোধ করছে। সরকার স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে আজকে এই অবস্থায় নিয়ে গেছে।বিশ্বের ১২৯টি দেশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে জার্মান সংস্থা বেরটেলসম্যান স্টিফটুং’র করা স্বৈরতান্ত্রিক দেশ’র তালিকায় বাংলাদেশের ঢোকার খবরটি শুক্রবার প্রকাশ করে বিবিসি বাংলা।শনিবার নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রসঙ্গটি তোলেন বিএনপি মহাসচিব। তার দলের নেতারা বলে আসছেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে বাংলাদেশ গণতন্ত্রহীন হয়ে পড়েছে।ফখরুল বলেন, যে কথাগুলো আমরা বলে আসছিলাম, তা আজকে বিশ্বস্বীকৃত হয়েছে এবং এটা প্রতিফলন হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

গত বৃহস্পতিবার জার্মানির গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেরটেলসমান স্টিফটুং এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই তালিকায় নতুন করে পাঁচটি দেশ একনায়কতান্ত্রিক দেশের তালিকায় ঢুকেছে। তার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। এই প্রতিবেদন গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রকাশ করেছে।প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশসহ ওই পাঁচটি দেশ গণতন্ত্রের নূন্যতম মানদন্ড পূরণ করছে না। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যালোচনা চলাকালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, মৌলবাদীদের হামলা সংঘটিত হতে দেখা গেছে।মির্জা ফখরুল বলেন, জার্মান একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণার ভিত্তিতে বিবিসি অনলাইন একটি নিউজ ছাপিয়েছে, যেটা আজ সব পত্রিকায় এসেছে। পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ নিম্নের দিকের পাঁচটি দেশের অন্যতম একটি। যেখানে গণতন্ত্র বিদায় নিয়েছে। এবং স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই গবেষণায় আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে যারা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, তারা অত্যন্ত লজ্জাবোধ করছি এবং আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি।সরকার স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে বাংলাদেশকে আজ এই অবস্থায় নিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনসহ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মতামত শুনতে জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে ৩৭টি দল গঠন করেছে বিএনপি। তারা ২০ এপ্রিলের মধ্যে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা সফর করবেন।ফখরুল বলেন, এই রাজনৈতিক সফরসূচির উদ্দেশ্য শুধু বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন ও সামনে কী করণীয় আছে, সেই বিষয়গুলো নিয়ে।আগামী ২৯ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার অনুমতির জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেওয়া হবে বলে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল জানান।

বিএনপির অনুমতি না পাওয়ার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় পার্টির সভা করার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আজ ২৪ মার্চ, গণতন্ত্র হত্যা দিবস। এদিনে এরশাদ একটি নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে জোর করে ক্ষমতা দখল করেছিল। সেই ব্যক্তির দলকে আজকে একই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করছে। অন্যদিকে যারা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিল, সেই বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।আগে কয়েক দফা দিন তারিখ ঘোষণা করেও অনুমতি না পাওয়ার পর এখন ২৯ মার্চ জনসভা করতে চাইছে।ফখরুল বলেন, ২৯ তারিখ জনসভা করার জন্য চেয়েছি। আমরা সব প্রক্রিয়া শেষ করেছি। আমরা আজকে একটি চিঠি পাঠাচ্ছি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানান ফখরুল।সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী হাফিজউদ্দিন আহমেদ প্রতিনিধি দলে থাকছেন। তারা দুজনই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান।মির্জা ফখরুল বলেন, যৌথ সভায় মহান স্বাধীনতা দিবসকে বরাবরের মতো যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে এবারই প্রথম সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে দলের চেয়ারপারসন গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকতে পারছেন না।ফখরুল বলেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ, ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্যসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা সমবেতভাবে সকাল নয়টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর বেলা ১১টায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে হবে বলে জানান মির্জা ফখরুল।বিএনপির কর্মসূচির মধ্যে আরও আছে, ২৬ মার্চ ভোরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ জেলা-উপজেলা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, বিকেলে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।এ ছাড়া ২৭ মার্চ ঢাকায় স্বাধীনতা র‌্যালি এবং ৩১ মার্চ রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা হবে বলেও জানান মির্জা ফখরুল।দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে রচনা প্রতিযোগিতা এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সব জেলা অফিসে আলোকসজ্জাও করবে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

এর আগে মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে যৌথ সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, মইন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আবদুস সালাম, মনিরুল হক চৌধুরী, কবির মুরাদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, আসাদুল হাবিব দুলু, নজরুল ইসলাম মনজু, শামা ওবায়েদ, বিলকিস জাহান শিরিন, মাহবুবুর রহমান শামীম, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, হারুনুর রশীদ, মোস্তাক মিয়া, আবদুল আউয়াল খান, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আকন কুদ্দুসুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।