পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মানিকগঞ্জে আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণাধীন পরিবহনসংশ্লিষ্ট মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের দুই পক্ষের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার দেখা দিয়েছে। এক পক্ষ বুধবার সকাল থেকে মানিকগঞ্জ-ঢাকা পথে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। এর প্রতিবাদে আরেক পক্ষ এই ধর্মঘটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

ক্ষমতাসীন দলের এক পক্ষে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক কাজী এনায়েত হোসেন এবং জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ও জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বাবুল সরকার। অপর পক্ষে রয়েছেন মানিকগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বাস-মিনিবাস-মাইক্রোবাস-অটোটেম্পো ওনার্স গ্র“পের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক আবদুল জলিল। বর্তমানে জাহিদুল ইসলামের পক্ষের লোকজন পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণ করছেন। গত ১৩ অক্টোবরের আগে কাজী এনায়েত ও বাবুল সরকারের লোকজনের দখলে ছিল।

জেলায় সাধারণ বাসমালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছয় মাস ধরে জেলা পরিবহন খাতে চাঁদা আদায়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই দুই পক্ষের মধ্যে চরম বিরোধ দেখা দেয়। গত ২৫ অক্টোবর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতা কাজী এনায়েত হোসেন ও বাবুল সরকার ‘বাস টার্মিনাল দখল করে বহিরাগত লোকজনের চাঁদাবাজি’ বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসক নাজমুছ সাদাত সেলিমের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।ওই অভিযোগে বলা হয়, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ই¯্রাফিল হোসেন এবং জাহিদুল ইসলাম বহিরাগত লোকজন নিয়ে জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ও জেলা বাস-মিনিবাস-মাইক্রোবাসের অফিস এবং মানিকগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল দখল করেন। এরপর তাঁরা বাস থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করছেন। এর প্রতিবাদে জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিলে পরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে ধর্মঘট বাতিল করা হয়। তবে এত দিনেও কাজী এনায়েত ও বাবুল সরকার পক্ষের লোকজনের দাবিদাওয়া পূরণ হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলা বাস টার্মিনাল ‘দখল’ ও ‘চাঁদাবাজির’ প্রতিবাদে এবং পাঁচ দফা দাবি আদায়ে আগামীকাল সকাল থেকে মানিকগঞ্জ-ঢাকা রুটে ৪৮ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে। ঢাকার গাবতলী বাস-মিনিবাস মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নামের একটি সংগঠন এই ধর্মঘট আহ্বান করে। ১০ মার্চ গাবতলী টার্মিনাল ভবনে সংগঠনটির কার্যালয়ে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মুজিব সারোয়ার, সদস্যসচিব আমান উল্লাহসহ সংগঠনের নেতারা ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন।সংগঠনের নেতারা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই ধর্মঘটের আহ্বান জানান।
ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মানিকগঞ্জের একজন প্রভাবশালী নেতার ছত্রচ্ছায়ায় বহিরাগত ও সন্ত্রাসীরা জেলা বাস টার্মিনাল দখল করে পরিবহন থেকে ব্যাপক চাঁদাবাজি চালাচ্ছে। এর প্রতিবাদে ও পাঁচ দফা দাবিতে আগামীকাল থেকে ধর্মঘটের আহ্বান করা হয়।

এদিকে এই ধর্মঘটের প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে জেলা বাস টার্মিনালে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন জাহিদুল ইসলাম ও আবদুল জলিল। এতে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম খান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোনায়েম খানসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীসহ অর্ধশতাধিক বাসমালিক ও শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন।জাহিদুল ইসলাম বলেন, কাজী এনায়েত হোসেন ও বাবুল সরকার এত দিন অবৈধভাবে বিভিন্ন পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। এই চাঁদাবাজি বন্ধের নির্দেশ দিলে তাঁরা স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর ফুপাতো ভাই ও তাঁকে (জাহিদুল) নিয়ে মিথ্যা কুৎসা রটান। অবৈধ এই ধর্মঘট পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকেরা পালন করবেন না বলে তিনি দাবি করেন।

বাবুল সরকার বলেন, বৈধ মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সরিয়ে বাস টার্মিনাল এবং মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের অফিস দখল করা হয়েছে। এখন বিভিন্ন পরিবহন থেকে অতিরিক্ত অবৈধ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এতে সাধারণ মালিক ও শ্রমিকেরা অস্বস্তিতে রয়েছেন। এ কারণে মালিক ও শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন এই ধর্মঘট আহ্বান করেছে।