জেষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি ও পদায়নের অভিযোগ উঠেছে বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন (ডিপিডিসি) কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে। দলীয় পরিচয় ও আর্থিক লেনদেনের ভিত্তিতে প্রায় ১৫ জন জেষ্ঠ্য নির্বাহী প্রকৌশলীকে ডিঙিয়ে এই পদোন্নতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সরাসরি আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত দলীয় পরিচয়ের কয়েকজন এই তালিকায় রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

ডিপিডিসি সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২ মার্চ সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলীদের বেতন ভাতার ও জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়। ডিপিডিসির তৎকালিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:)নজরুল হাসান স্বাক্ষরিত দাফতরিক সেই আদেশে (স্মারক নম্বর, ডিপিডিসিএইচআর/ডিজিএম/প্রমোশন অফিসার (পি-৪) ২০১৪/৯৭০ মোট ৫০ জনকে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদ্দোন্নতি দেয়া হয়। পরবর্তীতে মৃত্যু ও অবসরের কারণে ওই তালিকার থেকে তাদের বাদ দিয়ে সম্প্রতি জেষ্ঠতা অনুযায়ী ৩০ জন বর্তমানে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। চলতি বছর নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির জন্য ডিপিডিসির পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে একটি পদোন্নতি ও পদায়ন বোর্ড গঠন করা হয়।

বিদ্যুৎ সচিব ও ডিপিডিসির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. আহমদ কায়কাউসকে সভাপতি করে ৬ সদস্যের এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে ছিলেন ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান, নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) আবু তাজ মো. জাকির হোসেন, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার মো. শহীদ সারোয়ার, পিডিবির প্রকৌশলী মো: ফখরুজ্জামান (সদস্য বিরতণ)ও বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার। কমিটি ৩০ জন নির্বাহী প্রকৌশলীকে দুই ধাপে মৌখিক পরীক্ষা মাধ্যমে ১২ জনকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করেন। গত রোববার ডিপিডিসির বোর্ড সভায় তালিকাটি অনুমোদন দেওয়া হয়। মঙ্গলবার বিকালে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ পদ্দোন্নতির তালিকা প্রকাশ করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, পদোন্নতি ও পদায়ন কমিটির সদস্য ও ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) আবু তাজ মো. জাকির হোসেন আর্থিক লেনদেনের ভিত্তিতে জেষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন করে এই পদোন্নতির তালিকা চূড়ান্ত করেন। জেষ্ঠ্যতার তালিকায় উপরের দিকে না থাকলেও এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন অনেকেই। এ পদ্দোন্নতির তালিকায় অধিকাংশকেই পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে অর্থের বিনিময়ে।

নতুন পদোন্নতির তালিকা থেকে দেখা যায়, নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে পদোন্নতি পেয়ে ডেমরা এনওসিএস এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে শ্রীবাস চন্দ্র বিশ^াসকে। ২০১৪ সালের জেষ্ঠ্যতার তালিকা তার অবস্থান রয়েছে ১৮ নম্বরে। লালবাগ এনওসিএস এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে সদ্য পদোন্নতি পাওয়া মো. শাহজাহান আলীকে। জেষ্ঠ্যতার তালিকায় যার অবস্থান ছিলো ১৯ নম্বরে। মগবাজার এনওসিএস এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন পদোন্নতি পাওয়া মর্তুজা কামরুল আলম। জেষ্ঠ্যতার তালিকার ২০ নম্বরে রয়েছে তার অবস্থান। বেগম ফজিলাতুন নেসাকে পদোন্নতি দিয়ে বিতরণ (পরিকল্পনা) বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। জেষ্ঠ্যতার তালিকায় তার অবস্থান রয়েছে ২৫ নম্বরে।

এছাড়া এই চার জনের মধ্যে মো.শাহজাহান আলী ও ফজিলাতুন নেছার বিরুদ্ধে বিএনপির সর্মথনের অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে পদোন্নতি পাওয়া মো. আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে জামায়াত ইসলাম, মশিয়ার রহমান জোয়ার্দ্দারে বিরুদ্ধে বিএনপি, মো. ফিরোজ কবীর ও সালেক মাহমুদের বিরুদ্ধে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।পদোন্নতি না পাওয়া জেষ্ঠ্যতার তালিকায় থাকা কয়েকজন নির্বাহী প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বড় ধরণের আর্থিক লেনদেনের ভিত্তিতে এবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১৫ জনকে সুপারসিড করে এবার পদোন্নতি করা হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করেন, ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) আবু তাজ মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না থাকা এবং ঘুষ না দেওয়ার তার মত অনেকেই পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন।আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে আবু তাজ মো. জাকির হোসেন বলেন, জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। এখানে মেধা ও কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পদোন্নতি ও পদায়ন কমিটি ৩০ জন নির্বাহী প্রকৌশলীর ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নিয়েছেন। সেখান থেকে সর্বোচ্চ নম্বরের ভিত্তিতে এই পদোন্নতির তালিকা করা হয়েছে।