দেশের ১০ শিক্ষাবোর্ডে চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত বারের চেয়ে এবার পাসের হার কমেছে। গতবার পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ।তবে এবার গতবারের চেয়ে জিপিএ ৫ বেড়েছে। এবার মোট জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন শিক্ষার্থী। গতবার পেয়েছিল ১ লাখ চার হাজার ৭৬১ জন।

রোববার সকালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নেতৃত্বে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের অনুলিপি তুলে দেন। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী ফলাফলের সংক্ষিপ্ত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, ১০ বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ২৬ হাজার ৫৭৪ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪ জন। এবার মোট ২৮ হাজার ৫৫৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে এক হাজার ৫৭৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শত ভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে।এবার আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন শুধু এসএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৭৯ দশমিক ৪০। গতবারের চেয়ে পাসের হার কিছুটা কম। গতবার এসএসসিতে পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ২১ শতাংশ। তবে এসএসসিতে জিপিএ ৫ গতবারের চেয়ে বেড়েছে। এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ২ হাজার ৮৪৫ জন। যা গতবারের চেয়ে চার হাজার ৮৮১ জন বেশি।অন্যদিকে এবার পাসের হার মাদ্রাসায় ৭০ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং কারিগরীতে ৭১ দশমিক ৯৬ শতাংশ।গত ১ ফেব্র“য়ারি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হয় গত ৮ মার্চ।এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ে গঠিত আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসএসসি পরীক্ষায় ১৭টি বিষয়ের মধ্যে ১২ টিতেই নৈর্ব্যক্তিক (এমসিকিউ) অংশের ‘খ’ সেট প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে।প্রধানমন্ত্রীর পরে ফলাফল অনলাইনে প্রকাশ করেন; যা বেলা ২টা থেকে দেখা যায়। তার আগে বেলা ১টায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এবারের ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরবেন শিক্ষামন্ত্রী।গতবছর এ পরীক্ষায় ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল, যাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন। সেই হিসাবে এবার পাসের হার ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে। তবে পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৫ হাজার ৮৬৮ জন।নুরুল ইসলাম নাহিদ ২০০৯ সালে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার বছর এসএসিতে পাসের হার ছিল ৬৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। এরপর ধারাবাহিকভাবে বাড়তে বাড়তে তা ২০১৪ সালে ৯২ দশমিক ৬৭ শতাংশ হয়। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে পাসের হার আবার কমছে। গত নয় বছরের মধ্যে এবারই পাসের হার সবচেয়ে কম হলেও এ ফলাফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘ইতিবাচক পরিবর্তন’ দেখতে পাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে ফলাফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা, বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী বাড়া এবং মেয়েদের ভালো ফল করার মত বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

নাহিদের মতে, বছরের প্রথম দিন সব স্কুলে নতুন বই পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখছে। শিক্ষা ও শিক্ষকদের মান বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, উত্তরপত্রের অতি মূল্যায়ন বা অবমূল্যান রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।খাতা দেখার অতীতের যে ত্রুটি ছিল, সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা নেওয়ার ফলে একটা মান আমরা অর্জন করেছি। তবে আরও উন্নত করতে হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

পাসের হার কমা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এবার যেহেতু পরীক্ষারীর সংখ্যাও বেশি, সংখ্যার হিসাবে পাসের হার কিছুটা কম মনে হলেও সেটা খুব হতাশাজনক না, কারণ ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ পাস করা, এটাও কিন্তু কম কথা না।তিনি উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান এবং যারা পাস করতে পারেনি, তাদের হতাশ না হয়ে পড়ালেখায় মনযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত দেশ আমরা তখনই গড়তে পারব যখন দেশের শতভাগ মানুষ শিক্ষিত হবে। শিক্ষা এমন একটা জিনিস যেটা কখনও কেউ কেড়ে নিতে পারে না।ফলাফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বরিশাল ও বান্দরবান জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে মত বিনিময় করেন।গত ১ থেকে ২৫ ফেব্র“য়ারি এবারের এসএসসির তত্ত্বীয় এবং ২৬ ফেব্র“য়ারি থেকে ৪ মার্চ ব্যবহারিক পরীক্ষা হয়।দশ বোর্ডে এবার মোট ২০ লাখ ২৬ হাজার ৫৭৪ জন শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাস করেছে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪ জন।আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীনে এবার এসএসসিতে ৭৯ দশমিক ৪০ শতাংশ, মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে ৭০ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৭১ দশমিক ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।আটটি সাধারন বোর্ডে ১ লাখ ২ হাজার ৮৪৫ জন, মাদ্রাসা বোর্ডে ৩ হাজার ৩৭১ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে জন ৪ হাজার ৪১৩ জিপিএ-৫ পেয়েছে।

গত কয়েক বছরের মত এবারও পাসের হারে ছাত্রদের তুলনায় এগিয়ে আছে ছাত্রীরা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ; আর ছাত্রদের ৭৬ দশমিক ৭১ শতাংশ।তবে জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে ছাত্ররা এগিয়ে। ৫৪ হাজার ৯২৮ জন ছাত্রীর বিপরীতে ৫৫ হাজার ৭০১ জন ছাত্র এবার পূর্ণ জিপিএ পেয়েছে।মোট ২৮ হাজার ৫৫৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এবার ১ হাজার ৫৭৪টি প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী এবার পাস করেছে।গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ধারাবাহিকতায় এবারও এসএসসিতে অধিকাংশ বিষয়ের প্রশ্ন পরীক্ষার আগের রাতে বা পরীক্ষার সকালে ফাঁস হয় এবং সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে হলে বসা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি নানাভাবে কড়াকড়ি আরোপ করেও এসএসসিতে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গত ৩ মে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, এসএসসির ১৭টি বিষয়ের মধ্যে ১২টিতে এমসিকিউ অংশের ‘খ’ সেটের প্রশ্ন এবার ফাঁস হয়েছে।তবে সব মিলিয়ে পাঁচ হাজারের মত পরীক্ষার্থী ওই প্রশ্ন পেয়েছে বলে ধারণা হওয়ায় এবং সৃজনশীল অংশের কোনো প্রশ্ন ফাঁস না হওয়ায় তদন্ত কমিটি পরীক্ষা বাতিল না করার সুপারিশ করে।এসএমএসে ফল: যে কোনো মোবাইল থেকে এসএমএস করে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল জানা যাবে।ঝঝঈ/উঅকঐওখ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০১৮ লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে ফল জানা যাবে।
ফল পুনঃনিরীক্ষা: রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটক থেকে আগামী ৭ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে।ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করতে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।ফিরতি এসএমএসে ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেওয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর (পার্সোনাল আইযেন্টিফিকেশন নম্বর) দেওয়া হবে।আবেদনে সম্মত থাকলে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ণঊঝ লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে।প্রতিটি বিষয় ও প্রতি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে। যে সব বিষয়ের দুটি পত্র (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) রয়েছে যে সকল বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করলে দুটি পত্রের জন্য মোট ২৫০ টাকা ফি কাটা হবে।একই এসএমএসে একাধিক বিষয়ের আবেদন করা যাবে, এক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে কমা দিয়ে লিখতে হবে।