বগুড়ার শিবগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডারের রহস্যের গোলক ধাঁধার আবর্তে রয়েছে তদন্তকারীরা। হত্যাকান্ডের মোটিভ নিয়ে নিশ্চিত কোন পথে এগুতে পারছে না পুলিশ। তবে কয়েকটি মোটিভ নিয়ে কাজ করছে তারা। এর মধ্যে মাদক ব্যবসা সংক্রান্ত বিরোধের একটি সম্ভাব্য মোটিভ গুরুত্বপুর্ন বলে পুলিশ সুত্র মনে করছে। আর এ বিষয়টি তদন্তকারীদের হত্যা রহস্যের জট খুলতে সহায়তা করতে পারে বলে তারা আশাবাদী। পুলিশের পাশাপাশি আলোচিত এই ফোর মার্ডার নিয়ে সিআইডি ও পিবিআই(পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) ছায়া তদন্ত করছে। আর ডিবি ও থানা পুলিশের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে ৭ সদস্যের একটি বিশেষ টিম।

এক জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে বিশেষ টিমটি মুল তদন্তকারীদের সহায়তা করছে। অপর দিকে নিহত ৪ জনেরই পরিচয় পাওয়া গেছে। লাশ উদ্ধারের প্রথম দিনে ৩ জনের পরিচয় পাওয়ার পর চতুর্থ জনের নাম ঠিকানা মঙ্গলবার পুলিশ নিশ্চিত করেছে। তার নাম খবির উদ্দিন বাউসা(৩৫)। বাড়ি পাশের জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার নান্দাইল গ্রামে। পুলিশ ওই ঘটনার বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৬ জনকে আটক করেছে। এদিকে আলোচিত এই হত্যাকান্ডের সার্বিক তদন্ত পর্যবেক্ষনে বিকালে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ নিশারুল আরিফ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।সোমবার সকালে শিবগঞ্জ উপজেলার আটমুল ইউনিয়নের ডাবুইর গ্রামের ধান ক্ষেত থেকে ৪ জনের জবাই করা লাশ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ওই দিন ৩ জনের পরিচয় পাওয়া যায়। এরা হলো একই ইউনিয়নের কাঠগাড়া চকপাড়া গ্রামের সাবরুল ও জাকারিয়া এবং পাশের জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার পাঁচপাইকা চেয়ারম্যান পাড়া গ্রামের হেলাল। নিহতদের প্রত্যেকের হাত পিছন দিক করে বাধা ছিলো। একই স্থানে ৪ জনকে জবাই করে হত্যার ঘটনাটি ব্যাপক আলোড়ন সৃস্টি করে। মঙ্গলবার বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিহতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ হয়। বিকালে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ মরদেহ গুেেলা তাদের স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করে। এদিকে হত্যাকান্ডের মোটিভ সর্ম্পকে তদন্তকারীরা এখনো পরিস্কার কোন চিত্র না পেলেও মাদক সংক্রান্ত বিয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। এছাড়া নারী সংক্রান্ত বিরোধ, ব্যক্তিগত শত্রুতা, পুর্ব কোন বিরোধ সহ আরো একটি মোটিভ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সুত্র জানায়। তবে হত্যাকান্ডের সঙ্গে স্থানীয় একটি গ্রুপ জড়িত থাকার সম্ভবনা পুলিশের নিকট কিছুটা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। তবে এ বিষয়ে তদন্তকারীরা মুখ খুলতে রাজী হননি। পুলিশের দায়িত্বশীল সুত্র বলছে, এখন তারা সম্ভাব্য সব কারনই খতিয়ে দেখছেন। হত্যাকান্ডে শিকার ৪ জনই নিম্ম আয়ের। এদের মধ্যে দু’ জনেরর বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে। অপরদিকে হত্যাকান্ডে কমপেক্ষ ৮/১০ জন সরাসরি জড়িত থাকাতে পারে বলে পুলিশ সুত্রের ধারনা। সুত্রটি জানায়, ঘটনাস্থল সহ আশেপাশের এলাকা পরিদর্শন করে তাদের ধারনা ঘটনাস্থলের আশে পাশের কোন স্থান থেকে ৪ জনকে ওই স্থানে এনে জবাই করা হতে পারে। তবে গা শিউরে ওঠার মতো পর পর ৪ জনকে নৃশংস ভাবে জবাই করার ধরন তদন্তকারীদের চিন্তিত করে তুলেছে। কি এমন কারনে চরম নিষ্ঠুরতায় একের পর এক ৪ জনকে জবাই করা হলো সে বিষয়টি এখন মুখ্য হয়ে দাড়িয়েছে। বগুড়ার পুলিশ সুপার মোঃ আলী আশরাফ ভুঞা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল জলিলকে প্রধান করে গঠিত বিশেষ টিমে একজন সহকারী পুলিশ সুপার, ৩ জন ইন্সপেক্টার ও ২ জন সাব ইন্সপেক্টার রয়েছেন। তিনি আরো জানান, তারা হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন ও হত্যাকারীদের চিহ্নিত করার বিষয়ে আশাবাদী। বিষয়টি সর্বচ্চো গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকালে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা দয়েরের প্রক্রিয়া চলছে।