কোটা বাতিলে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে চূড়ান্ত নির্দেশনা এখনো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পায়নি জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান।মঙ্গলবার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছেÑ আশা করছি শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শুদ্ধাচার কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিধি এবং সংগঠন ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের কার‌্যাবলী সর্ম্পকে অবহিতকরণের লক্ষ্যে অংশীজনদের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, আমরা গত ১৭ ফেব্র“য়ারি থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ এপ্রিল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করি। কিন্তু সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের ও কয়েকজন মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ছাত্র সমাজ আবার ফুঁসে ওঠে। তারপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন কোটা বাতিলের। সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়টি সরকারের চূড়ান্ত বিবেচনায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান।সাংবাদিকদের প্রশ্নে কোটা বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব। এই মন্ত্রণালয়কেই কোটা বাতিল বা সংস্কার করে প্রজ্ঞপন জারি করতে হবে। মোজাম্মেল হক বলেন, কোটা বাতিলের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যে মন্তব্য বা অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন বা নির্দেশ দিয়েছেন সেটার চূড়ান্ত রূপৃ প্রজ্ঞাপন বা সার্কুলার (জারির) কাজটা একটু বাকি আছে। সেটা কোন পর্যায়ে আসবে (জারি হবে) সেজন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে।

বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে কি না- সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকারের চূড়ান্ত বিবেচনাধীন আছে। কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দৃশ্যত ক্ষুব্ধ শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে বলেন, বারবার এই আন্দোলন ঝামেলা মিটাবার জন্য কোটা পদ্ধতি বাতিল; পরিষ্কার কথা; আমি এটাই মনে করি, সেটা হল বাতিল। কোটা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করার কথাও ওই দিন বলেন সরকারপ্রধান।বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত; এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ‘ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার দাবি তুলেছিল। কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণের দাবিও জানিয়েছিল তারা।প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের কথা বলার পর তারা এখন সেই প্রজ্ঞাপন দ্রুত প্রকাশের দাবি জানাচ্ছে।কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের ৭ মে পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত থাকার বিষয়ে মোজাম্মেল বলেন, যখন ছাত্ররা আন্দোলন করছিল, তখন সরকারের প্রতিনিধিরা গেলেন, তখন তাদেরকে বলা হল ৭ তারিখ পর্যন্ত এক মাস আন্দোলন স্থগিত করা হবে। তারপর দেখা গেল সেই কথা বলার পরও আন্দোলন থামেনি। তাহলে আমার বিবেচনায় ৭ তারিখ তো আর থাকল না।তারা যদি ৭ তারিখ পর্যন্ত আন্দোলন বন্ধ রাখত তাহলে আজকে বলা যেত তারা ৭ তারিখ বলেছিল ৭ তারিখে কেন হল না, এটা ঠিক কি না? এই বিষয়টা সরকারের মাথার আছে, বিবেচনায় আছে। প্রধানমন্ত্রী যখনই নির্দেশ দেবেন সেটা বাস্তবায়িত হবে। কোটা নিয়ে কোনো নির্দেশনা পাননি জানিয়ে সচিব বলেন, আমরা যে কোনোভাবে প্রস্তুত, কমিটি লাগলে করব, আমাদের মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হলে করব। যে কোনো পদ্ধতিতে যদি সরকার প্রধান বলেন সেভাবে আমরা ব্যবস্থা নেব। কোটা বাতিলের প্রক্রিয়া জানতে চাইলে এনিয়ে এখনও সরকারের কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় সুস্পষ্ট কোনো কথা বলেননি জনপ্রশাসন সচিব।এত তো খোঁচানো যাবে না। আমি এখন একটা বললাম সেটা থেকে কালকে একটু ব্যত্যয় হল, পরে আপনি বলবেন, গতকাল এটা বলেছিল আজকে আবার এটা হচ্ছে। এত অ্যাডভান্স কথা বলার সুযোগ নেই।প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের কথা বললেও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার চাকরির কথা বলেছেন। কোটা বাতিল হলে তাদের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত হবে?জবাবে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন বাতিলের কথা বলেছেন তার মুখ থেকেই আমরা শুনেছি তিনি সংসদে বলেছেন, যারা নৃ-গোষ্ঠী ও যারা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। ব্যবস্থার রূপরেখা আমরা এখনও সেভাবে প্রকাশ করিনি, সেটি আমাদের মাথায় আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই সেটা চিন্তা করছেন। কোটা নিয়ে শিগগিরিই প্রজ্ঞাপন জারি হবে এটা বলা যায় কি না- সেই জিজ্ঞাসায় মোজাম্মেল বলেন, আমরা তো আশাবাদী, দ্রুত হওয়াই ভাল।