উন্নয়ন নিয়ে বেশ জোরে-শোরে কথা-বার্তা ও লেখালেখি হচ্ছে। সরকার প্রধান, এমপি, মন্ত্রী, দলীয় নেতা-নেত্রীসহ তোষামোদকারীদের কথায় দেশে উন্নয়ণের জোয়ার বইছে। তারা উন্নয়ণের কথা বলে নিজেরাই বাহবা নিচ্ছে বা নিতে চাইছে। তারা জনগণের মন বুঝতে চাইছে না বা বোঝার চেষ্টাও করছে না। তাদের কথায় দেশবাসীর কতটুকু সায় আছে বা নেই তা বোঝার মত ক্ষমতা বর্তমান সরকারের নেই বললেই চলে। সরকার যতই উন্নয়নের কথা বলছে দেশের বেশীর ভাগ মানুষ তাদের কথায় সায় দিতে পারছে না। কারণ দেশের সাধারণ মানুষ ভাল নেই। সরকার প্রধানসহ এমপি, মন্ত্রী এবং সরকারের সুবিধাভোগীরা তাদের এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দিকে তাকিয়ে সব কিছু বলছে, করছে বা সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তবায়ণ করছে। সরকার প্রধানের সাথে দেশের সাধারণ মানুষের কোন যোগাযোগ যে নেই তা তার কথাবার্তায় বোঝা যাচ্ছে। তার পাশে যারা অবস্থান করছে তারা তাকে আসল খবর না দিয়ে তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য তাকে বেশী করে তোষামোদ করে যাচ্ছে। সরকার প্রধানসহ সংশ্লিষ্টরা যতই উন্নয়নের কথা বলুক না কেন দেশের সাধারণ মানুষের দিনকাল ভাল যাচ্ছে না, আর সে কারণে সরকারের প্রতি আস্থা দিনের পর দিন কমে আসছে। হয়তো আগামী নির্বাচনে তার প্রতিফলন সরকারকে ভোগ করতে হতে পারে।
বর্তমান সরকারের কর্মসূচির মধ্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের প্রাধান্য এতোটা বেশী যা দেশের সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারছে না। দেশ পরিচালনায় আমলা-কামলা এবং তোষামোদকারীদের মাত্রাতিরিক্ত প্রাধান্য থাকায় দেশবাসী অনেক কিছু হতে বঞ্চিত হয়ে আসছে, যা দেশবাসী খুশি মনে মেনে নিতে পারছেন না। জনগণ সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে কতটা যে শোষিত ও বঞ্চিত হচ্ছেন যা বর্ণনাতীত। তবে তারা কোন প্রতিবাদ করছে না। দেশবাসী নিরব এবং এ নিরবতা যে বড় প্রতিবাদ তা হয়তো সরকার প্রধান বা সরকারের সাথে সংশ্লিষ্টরা বুঝতে পারছে না। সরকার প্রধানকে দেশের সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা করে রেখে তোষামোদকারীরা তাদের যতসব ফায়দা লুটে নিচ্ছে। সরকার যতই উন্নয়ণের কথা বলছে কিন্তু সরকার আর সাধারণ মানুষের দূরত্ব দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যা বর্ণনাতীত।

আজকে যিনি সরকার প্রধান তিনি অন্য সরকার থেকে আলাদা এবং তাতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্যা। তাঁর প্রতি জাতির প্রত্যাশা বেশী থাকাটাই স্বাভাবিক। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তিনি আমলা-কামলা আর তোষামোদকারীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে আছেন এবং তিনি দেশের সার্বিক খবর আদৌ জানতে পারছেন না বা তাকে জানতে দেয়া হচ্ছে না। দেশের সাধারণ মানুষের নিরব কান্না তার কানে যাচ্ছে না! তাকে এমনভাবে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে, যাতে তাঁর কাছে সাধারণের সুখ-দু:খ, অভাব-অভিযোগের কথা না পৌছতে পারেন। সাধারণ মানুষের জন্য সব দুয়ার বন্ধ, কেবল আমলা-কামলা, আর তোষামোদকারীদের জন্য তাঁর দুয়ার খোলা। প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পারছেন না যে, আমলা-কামলা আর তোষামোদকারীদের সংখ্যার চেয়ে দেশের সাধারণ মানুষের সংখ্যা অনেক-অনেক বেশী। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং এ নির্বাচনে আমলা-কামলা এবং তোষামোদকারীদের কারণে ভরাডুবি হবার সম্ভাবনা খুবই বেশী। সত্য কথা হল দেশের সাধারণ মানুষ ভাল নেই। একদিকে চাল-ডাল, তেল, নুনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অগ্নিমূল্য। অন্য দিকে বার-বার মানুষের ব্যবহার্য গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এসবের মূল্য বৃদ্ধির ফলে জনমনে সরকারের প্রতি বিরুপ মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের ধৈর্য্যরে বাঁধ ভেঙ্গে গেছে এবং তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে দেয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের সামনে সমস্যার পাহাড় কিন্তু তারা কিছুই বলছে না। জনগণের এ মৌনতার লক্ষণ ভাল নয়। মৌনতা একটা বড় প্রতিবাদ যা নির্বাচনে প্রমাণিত হতে পারে। মৌনতার মুখ্য কারণ হল- দেশে গ্রহণযোগ্য কোন বিরোধী দল নেই। যদি থাকতো দেশবাসী রাস্তায় নেমে চরমভাবে প্রতিবাদ করতেন।

পাকিস্তান শাসনামলে সরকারের শোষণ-শাসন আর অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশবাসী ফুঁসে ওঠেছিল এবং তখন দেশবাসীর পাশে ছিলেন বাঙালী জাতির পরম হিতৈষীবন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি যখন ১৯৭০ সালে জনমত যাচাইয়ের জন্য গণভোট চাইলেন, পাকিস্তান সরকার তাঁর দাবী মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। ১৯৭১ সালের সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দলকে প্রায় শতভাগ ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছিলেন দেশবাসী। জয়লাভের পর পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে লাখ-লাখ জনতার সামনে ঘোষণা দিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তাঁর আহ্বানে সমগ্র বাঙ্গালী জাতি একটি শক্তিশালী ও প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পরে বাঙ্গালীরা তাঁদের মাতৃভূমিকে স্বাধীনতা লাভ করতে সক্ষম হয়। এ যুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙ্গালী তাঁদের জীবন দিতে বাধ্য হয়, দু’লক্ষাধিক মা-বোনকে ইজ্জত দিতে হয় এবং অপরিসীম ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে আজকের আমাদের স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।

এত ত্যাগ্য-তিতিক্ষা, দুঃখ-কষ্ট, আন্দোলন সংগ্রাম, যুদ্ধ-বিগ্রহের বিনিময়ে যে দেশটি স্বাধীনতা পেল, সে দেশের মানুষ কিছু একটা প্রত্যাশা করতেই পারে এবং এ প্রত্যাশা করাটাই স্বাভাবিক….! যদি প্রশ্ন করা হয়, সাধারণ মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ কতটুকু পেয়েছে এবং পাচ্ছেন? এতোটি বছর পার করে এলেও দেশবাসী পেলটা কি….! সত্য ও সঠিক কথা বলতেই হবে। তাতে যত বাধা-বিপত্তি, হুমকী-ধামকি বা ভয়-ভীতি দেখানো হোক; সত্য কথাটা বলতেই হবে। সত্য কথা বলার দায়িত্ব কাউকে না কাউকে তো নিতেই হবে! সবে যদি জোয়ারে ভেসে যায় বা সাথে থাকে তবে তো দায়িত্ব পালন করা হলো না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিকে একটি সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। এ সংবিধানের ৭(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; ১০ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘মানুষের শোষণ হইতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজলাভে নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে।’ ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে। মানবসত্ত্বার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।’ সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদে কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতী মানুষকে- কৃষক ও শ্রমিককে-এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা। ১৫ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা।’ -‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদনশক্তির ক্রমবৃদ্ধিসাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতিসাধন, যাহাতে নাগরিকদের জন্য নিুলিখিত বিষয়সমূহ অর্জন নিশ্চিত করা যায়- (ক) অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা; (খ) কর্মের অধিকার, অর্থাৎ কর্মের গুণ ও পরিমাণ বিবেচনা করিয়া যুক্তিসঙ্গত ও মজুরীর বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার; (গ) যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম বিনোদন ও অবকাশের অধিকার এবং (ঘ) সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতা-পিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরুপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারী সাহায্য লাভের অধিকার।’ গ্রামীণ উন্নয়ণ ও কৃষি বিপ্লব সম্পর্কে সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করিবার উদ্দেশ্যে কৃষিবিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতীকরণের ব্যবস্থা, কুটিরশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ণের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রুপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘(ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর সকল পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য; (খ) সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রযোজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য; (গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’

পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ ও উন্নয়ন সম্পর্কে সংবিধানের ১৮ (ক) অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘-রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ণ করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব-বৈচিত্র, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন।’ সুযোগের ক্ষমতা সংরক্ষণ সম্পর্কে সংবিধানের ১৯নং অনুচ্ছেদে সুস্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে।’- (১) সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন। (২) মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করিবার জন্য নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করিবার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ-সুবিধাদান নিশ্চিত করিবার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ সংবিধানের ২০ অনুচ্ছেদে অধিকার ও কর্তব্যরুপে কর্ম সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘(১) কর্ম হইতেছে কর্মক্ষম প্রত্যেক নাগরিকের পক্ষে অধিকার, কর্তব্য ও সম্মানের বিষয় এবং ‘প্রত্যেকের নিকট হইতে যোগ্যতানুসারেও প্রত্যেকের কর্মানুযায়ী’- এই নীতির ভিত্তিতে প্রত্যেকের স্বীয় কর্মের জন্য পারিশ্রমিক লাভ করিবেন। (২) রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করিবেন, যেখানে সাধারণ নীতি হিসাবে কোন ব্যক্তি অনুপার্জিত আয় ভোগ করিতে সমর্থ হইবে না এবং সেখানে বুদ্ধিবৃত্তিমুলক ও কায়িক সকল প্রকার শ্রম সৃষ্টিধর্মী প্রয়াসের ও মানবিক ব্যক্তিত্বের পূর্ণতার অভিব্যক্ততে পরিণত হইবে।’

নাগরিক ও সরকারী কর্মচারীদের কর্তব্য সম্পর্কে সংবিধানের ২১ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘(১) সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিক দায়িত্ব পালন করা এবং জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। (২) সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।’ আইনের দৃষ্টিতে সমতা প্রসঙ্গে সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।’
সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে ধর্ম প্রভৃতি কারনে বৈষম্য সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘(১) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না। (২) রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন। (৩) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানের প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না। (৪) নারী ও শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান-প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই নিবৃত্ত করিবে না।’

সরকারী নিয়োগলাভে সুযোগের সমতা সম্পর্কে সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘(১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে। (২) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হইবে না। (৩) নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা হইতে; (খ) কোন ধর্মীয় বা উপ-সম্পদায়গত প্রতিষ্ঠানে উক্ত ধর্মালম্বী বা উপ-সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষণের বিধান-সংবলিত যে কোন আইন কার্যকর করা হইবে; যে শ্রেণীর কর্মের বিশেষ প্রকৃতির জন্য তাহা নারী বা পুরুষের পক্ষে অনুপযোগী বিবেচিত হয়। সেইরূপ যে কোন শ্রেণীর নিয়োগ বা পদ যথাক্রমে পুরুষ বা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা হইতে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।’

গ্রেফতার ও আটক সম্পর্কে সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘(১) গ্রেফতারকৃত কোন ব্যক্তিকে যথাসম্ভব শীঘ্র গ্রেফতারের কারণ জ্ঞাপন না করিয়া প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তাহার মনোনীত আইনজীবির সহিত পরামর্শের ও তাহার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না। (২) গ্রেফতারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিষ্ট্রেটের সম্মুখে গ্রেফতারের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারের স্থান হইতে ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে আণয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ব্যতিরেকে (ক) হাজির করা হইবে এবং ম্যাজিষ্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত তাহাকে অতিরিক্তকালে প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না। (৪) নিবর্তনমূলক আটকের বিধান-সংবলিত কোন আইন কোন ব্যক্তিকে ছয় মাসের অধিককাল আটক রাখিবার ক্ষমতা প্রদান করিবে না যদি সুপ্রীম কোর্টের বিচারক রহিয়াছেন বা ছিলেন কিংবা সুপ্রীম কোর্টের বিচারকপদে নিয়োগলাভের যোগ্যতা রাখেন। এইরূপ দুইজন এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত একজন প্রধান কর্মচারীর সমন্বয়ে গঠিত কোন উপদেষ্টা পর্ষদ উক্ত ছয় মাস অতিবাহিত হইবার পূর্বে তাহাকে উপস্থিত হইয়া বক্তব্য পেশ করিবার সুযোগ দানের পর রিপোর্ট প্রদান না করিয়া থাকেন যে, পর্ষদের মতে উক্ত ব্যক্তিকে তদতিরিক্ত কাল আটক রাখিবার পর্যাপ্ত কারণ রহিয়াছে। (৫) নিবর্তনমূলক আটকের বিধান-সংবলিত কোন আইনের অধীন প্রদত্ত আদেশ অনুযায়ী কোন ব্যক্তিকে আটক করা হইলে আদেশদানকারী কর্তৃপক্ষ তাঁহাকে যথাসম্ভব শীঘ্র আদেশদানের কারণ জ্ঞাপন করিবেন এবং উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রকাশের জন্য তাহাঁকে যত সত্ত্বর সম্ভব সুযোগদান করিবেন তবে শর্ত থাকে যে, আদেশদানকারী কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় তথ্যাদি প্রকাশ জনস্বার্থবিরোধী বলিয়া মনে হইলে অনুরূপ কর্তৃপক্ষ তাহা প্রকাশে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিতে পারিবেন। (৬) উপদেষ্টা-পর্ষদ এই অনুচ্ছেদের (৪) দফার অধীন তদন্তের জন্য অনুসরণীয় পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নির্ধারণ করিতে পারিবেন।’
জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধকরণ সম্পর্কে সংবিধানের ৩৪ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘(১) সকল প্রকার জবরদস্তি-শ্রম নিষিদ্ধ; এবং এই বিধান কোনভাবে লঙ্ঘিত হইলে তাহা আইনত: দন্ডনীয় অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে। (২) এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই সেই সকল বাধ্যতামুলক শ্রমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না। যেখানে (ক) ফৌজদারী অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তি আইনত: দন্ডভোগ করিতেছেন; অথবা (খ) জনগণের উদ্দেশ্যসাধনকল্পে আইনের দ্বারা তাহা আবশ্যক হইতেছে।’

বিচার ও দন্ড সম্পর্কে সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘(১) অপরাধের দায়যুক্ত কার্যসংঘটনকালে বলবৎ ছিল ও এইরূপ আইন ভঙ্গ করিবার অপরাধ ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা যাইবে না এবং অপরাধ-সংঘটনকালে বলবৎ সেই আইনবলে যে দন্ড দেওয়া যাইতে পারিত , তাহাকে তাহার অধিক বা তাহা হইতে ভিন্ন দন্ড দেওয়া যাইবে না। (২) এক অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তিকে একাধিকবার ফৌজদারীতে সোপর্দ বা দন্ডিত করা যাইবে না। (৩) ফৌজদারী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচারলাভের অধিকারী হইবেন। (৪) কোন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাইবে না। (৫) কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানবিক বা লাঞ্ছনাকর দন্ড দেওয়া যাইবে না। কাহারও সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না। (৬) প্রচলিত আইনের নির্দিষ্ট কোন দন্ড বা বিচারপদ্ধতি সম্পর্কিত কোন বিধানের প্রয়োগকে এই অনুচ্ছেদের (৩) বা (৫) দফার কোন কিছুই প্রভাবিত করিবে না।’ চলাফেরার স্বাধীনতা সম্পর্কে সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘-জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ-সাপেক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা ইহার যে কোন স্থানে বসবাস ও বসতিস্থাপন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশ পুন:প্রবেশ করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’
৩৭ নং অনুচ্ছেদে সমাবেশের-স্বাধীনতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থের আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’

সবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদে সংগঠনের স্বাধীনতা সম্পর্কে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’
তবে শর্ত থাকে যে, কোন ব্যক্তির উক্তরূপ সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার কিংবা উহার সদস্য হইবার অধিকার থাকিবে না। যদি ‘(ক) উহা নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (খ) উহা ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, জন্মস্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (গ) উহা রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বা জঙ্গী কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; বা (ঘ) উহার গঠন ও উদ্দেশ্য এই সংবিধানের পরিপন্থী হয়।’

চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক-স্বাধীনতা সম্পর্কে সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘(১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা নিশ্চয়তাদান করা হইল। (২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটন প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত ও যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের। এবং (ঘ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।’ ৪০ নং অনুচ্ছেদে পেশা ও বৃত্তির স্বাধীনতা সম্পর্কে সংবিধানে বিবৃত হয়েছে, ‘আইনের দ্বারা আরোপিত বাধা-নিষেধ-সাপেক্ষে কোন পেশা বা বৃত্তি- গ্রহণের কিংবা করবার বা ব্যবসা পরিচালনার জন্য আইনের দ্বারা কোন যোগ্যতা নির্ধারিত হইয়া থাকিলে অনুরুপ যোগ্যতাসম্পন্ন প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন আইনসঙ্গত পেশা বা বৃত্তি-গ্রহণের এবং যে কোন আইনসঙ্গত কারবার বা ব্যবসায় পরিচালনার অধিকার থাকিবে।’

ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্পর্কে আমাদের এ সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে,- ‘(১) আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা-সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে; (খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন ও ব্যবস্থাপনায় অধিকার রহিয়াছে। (২) কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোন ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম-সংক্রান্ত না হইলে তাহাকে কোন ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণ কিংবা কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উপাসনালয় অংশগ্রহণ বা যোগদান করিতে হইবে না।’ সম্পত্তির অধিকার সংক্রান্ত ব্যাপারে সংবিধানের ৪২ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘(১) আইনের দ্বারা আরোপিত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর ও অন্যায়ভাবে বিলি-ব্যবস্থা করিবার অধিকার থাকিবে এবং আইনের কর্তৃত্ব ব্যতীত কোন সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়াত্ত্ব বা দখল করা যাইবে না। *[(২) এই অনুচ্ছেদের (১) দফার অধীন প্রণীত আইনে ক্ষতিপূরণসহ বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়াত্ত্বকরণ বা দখলের বিধান করা হইবে এবং ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ কিংবা ক্ষতিপূরণ নির্ণয় বা প্রদানের নীতি বা পদ্ধতি নির্দিষ্ট করা হইবে; তবে অনুরুপ কোন আইনে ক্ষতিপূরণের বিধান অপর্যাপ্ত হইয়াছে বলিয়া সেই আইন সম্পর্কে কোন আদালতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।]*’ (সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ বলে প্রতিস্থাপিত।)

গৃহ ও যোগাযোগ রক্ষণ সম্পর্কিত বিষয়ে ৪৩নং অনুচ্ছেদে আলোচিত হয়েছে, – ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনসাধারণের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের (ক) প্রবেশ, তল্লাশী ও আটক হইতে স্বীয় গৃহে নিরাপত্তালাভের অধিকার থাকিবে; এবং (খ) চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার থাকিবে।’ বড়ই দুর্ভাগ্য আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদগুলোকে বেশীরভাগ সরকার অমান্য করেছে বা সংবিধান বিরোধী কার্যকলাপ করেছে, কিন্তু তাদের কোন বিচার হয়নি। সংবিধানের এমন কোন অনুচ্ছেদ নেই যে, কেউ সংবিধান লঙ্ঘন করলে বা অমান্য করলে তার বিচার করা হবে বা কোন ধরনের বিচার করা হবে তার কোন উল্লেখ নেই। যার কারণে ১৯৭৫ সালে জাতির জনকের মর্মান্তিক হত্যার পরে সকল সরকারগুলোই সংবিধান চরমভাবে লঙ্ঘন করেছে।

এ ব্যাপারে দেশবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে কেউ সংবিধান লঙ্ঘন করে শাস্তি থেকে রেহাই না পায়। সকল সরকারগুলোই সংবিধান কাজে লাগায় নির্বাচনে জয়লাভ করে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। অথচ জনগণের অধিকারগুলো কোন সরকারই বাস্তবায়ণের পথেথ যায়নি বা যাচ্ছে না। যে আশা বা প্রত্যাশা নিয়ে দেশটা স্বাধীন হয়েছিল, তা থেকে দেশ অনেক দূরে। পাকিস্তান আমলেও আমলা-কামলাদের যথেচ্ছ প্রাধান্য ছিল; আর আজ তাদের প্রাধান্য যেন আরো বেশী। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে দেশ যেন আমলারাই চালাচ্ছে। তাদের কোন কিছু চাইতে হয় না। চাওয়ার আগেই যেন তাদের সবকিছু হয়ে যাচ্ছে। তারা তো তাদের বেতন ১২৩% ভাগ বৃদ্ধির জন্য কোন দাবী করেনি, কোন আন্দোলন করেনি। কি করে সরকার প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ১২৩% ভাগ বৃদ্ধি করলো তা ভাবাই যাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রী তো বলেছিলেন, বেতন বৃদ্ধি করা হলে ঘুষ ও দুর্নীতি কমবে। ঘুষ ও দুর্নীতি তো আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তাহলে বেতন ১২৩% ভাগ বৃদ্ধি করে জনগণের ক্ষতি করা হলো কেন? এর জবাব কে দেবে?

আজ জনগণের প্রশ্ন- দেশ স্বাধীন হয়ে সাধারণ মানুষ পেলোটা কি? পাকিস্তান আমলে দেশবাসীকে শাসন আর শোষণ করতো ২৩ পরিবার। আর আজ দেশবাসীকে শাসন আর শোষণ করছে ২৩ লাখ পরিবার। এ শোষণের হাত থেকে বাঁচার পথ কি? তাহলে আবার কি একটা যুদ্ধ করতে হবে? তাহলে সে যুদ্ধের নেতৃত্ব কে দেবেন? দেখা যাক কিসে কি হয়। ভবিতব্যই সব বলে দেবেন।
যদি কোন সরকার বা কোন আমলা-কামলা বা অন্য কেউ সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদ বা অনুচ্ছেদের আংশিক লঙ্ঘন করে তবে তার বা তাদের শাস্তির বিধান সংবিধানে অবশ্যই থাকা উচিত ছিল, কিন্তু বড়ই দুর্ভাগ্য বার-বার সংবিধান চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়ে আসছে। সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য আজ পর্যন্ত কাউকে কোন শাস্তি পেতে হয়নি।

মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন, সাংবাদিক ও কলাম লেখক