ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের হাজারীপাড়া গ্রামে মুড়ি ভাজার ব্যাপক আয়োজন শুরু হয়ে রমজান উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ অঞ্চলের নারীরা। তবে এ মুড়ি বাজারে পাওয়া সাধারণ কোন মুড়ি নয়। জৈব সারে উৎপাদিত ঘিগজ ধান দিয়ে ঢেঁকিছাঁটা লাল চালে তৈরি মুড়ির কথা এই ভেজালের যুগে যখন কল্পনা করা দায়, তখন ঈশ্বরদীর এই মুড়িগ্রামে শত শত নারী-পুরুষ “নয়াকৃষি মুড়ি” তৈরি করে এরই মধ্যে সাঁড়া ফেলেছেন। নয়াকৃষি মুড়ির সুখ্যাতিও এখন ঈশ্বরদীর গন্ডি ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। আবার এ মুড়ির কাজে অংশ নিয়ে গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের নারীরাও বাড়তি আয় করে ইতোমধ্যে কিছুটা স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। রাসায়নিক সার, কীটনাশক ছাড়াই ঈশ্বরদীতে তৈরি হচ্ছে “নয়াকৃষি মুড়ি”। এরই মধ্যে ঈশ্বরদীর একটি গ্রাম রীতিমতো “নয়াকৃষি মুড়ি” নামে পরিচিতি লাভ করেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, রমজান উপলক্ষে ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের হাজারীপাড়া গ্রামের আড়শীনগরে উবিনীগ কার্যালয়ে ধুম পড়েছে ভেজালমুক্ত মুড়ি তৈরির কর্মযজ্ঞে। এতে লবণ ও পানি ছাড়া অন্য কোনো উপকরণ ব্যবহার করা হয় না। তারা এ মুড়ির নামও দিয়েছেন “নয়াকৃষি মুড়ি”। প্রতিদিন এখানে প্রায় ১০ মণ মুড়ি তৈরি হয় বলে জানান নারী শ্রমিকেরা। এরই মধ্যে ঈশ্বরদী ছাড়িয়ে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে পৌঁছে গেছে ঈশ্বরদীর এই মুড়ির সুখ্যাতি। প্রতিদিন ঈশ্বরদী থেকে এসব মুড়ি যাচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামে।
বাজারে সাধারণত যেসব মুড়ি পাওয়া যায় তা থেকে এই মুড়ি দেখতে যেমন আলাদা, তেমনি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যের জন্যও শতভাগ নিরাপদ। মুলাডুলির হাজারীপাড়া গ্রামের নারীরা জানান, প্রতিদিন তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত থাকেন মুড়ি তৈরির কাজে। হাজারীপাড়া গ্রামের জাহেদা বেগম জানান, ঘিগজ জাতের ধান উৎপাদনে নিজেদের তৈরি জৈব সার ব্যবহার করা হয়। একই গ্রামের আলতা বেগম, লতিফা বেগম ও রাশিদা বেগম জানান, রাসায়নিক সারমুক্ত চালে “নয়াকৃষি মুড়ি” উৎপাদন করে তারা এক ধরনের সুখ অনুভব করেন। বাজারে সাধারণত যে মুড়ি বিক্রি হয়, ঈশ্বরদীর হাজারীপাড়ার মুড়ি তা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সে কারণে বাজারের মুড়ির চেয়ে এই মুড়ির দামও একটু বেশি। বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা উবিনীগ ঈশ্বরদীর সমন্বয়ক আজমিরা খাতুন বলেন, রোজাদারদের সম্মানে উবিনীগ নয়াকৃষি আন্দোলনের নারীদের সহযোগিতায় ঘিগজ ধান দিয়ে ঢেঁকিছাঁটা লাল চালে “নয়াকৃষি মুড়ি” তৈরি করে আসছি। এখানে মুলাডুলি ইউনিয়নের হাজারীপাড়া, শেখপাড়া, দাশুড়িয়া ইউনিয়নের খয়েরবাড়িয়া, মাড়মী, সুলতানপুরের নারীরা মুড়ি তৈরির কাজ করছেন। রাসায়নিক সার, কীটনাশক ছাড়াই হাজারীপাড়ার উবিনীগে তৈরি হচ্ছে নিরাপদ এবং মানসম্মত “নয়াকৃষি মুড়ি”। মুড়ি তৈরির কারণে ইতোমধ্যে হাজারীপাড়া নয়াকৃষি মুড়ি গ্রাম নামে পরিচিতি লাভ করেছে।