এবারের মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিচারবহির্ভূতভাবে প্রায় ৭৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই অভিযানে মাদক নির্মূলের নামে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে এবং নতুন করে টার্গেট করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন রিজভী।

রিজভীর অভিযোগ, গোটা দেশকে হত্যার বধ্যভূমিতে পরিণত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে মাদক নির্মূলের নামে এক ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। গতকাল রাতেও পাঁচ জেলায় সাতজনকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা সবার জন্য রীতিমতো উদ্বেগ, ভয় ও বিপদের কারণ হতে পারে।বিএনপির এই নেতা মনে করেন, এখন ক্রমান্বয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে এবং নতুন করে টার্গেট করা হচ্ছে। অনেক পরিবারের অভিযোগ, তুলে নিয়ে গিয়ে পুলিশের দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় রাতে বিচারবহির্ভূতভাবে নিরীহ লোকদের হত্যা করা হয়।রিজভী বলেন, একদিকে জনগণকে ভয় পাইয়ে দিতে সরকারি চক্রান্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, অন্যদিকে নিরীহ লোকদের ধরে হত্যা ও হত্যার ভয় দেখিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলছে ঈদের আগে রমরমা বাণিজ্য। প্রতি ঈদ মৌসুমে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ ধরনের রমরমা বাণিজ্য করার সুযোগ করে দেয়। এখন গ্রেপ্তার-বাণিজ্যের পাশাপাশি হত্যা-বাণিজ্য চলছে। বাতাসে বারুদের পোড়া গন্ধ ছড়িয়ে দিয়ে সরকার নিজের জন্য মহাবিপর্যয় ডেকে আনবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।রিজভীর দাবি, মাদক ব্যবসার গডফাদাররা মূলত আওয়ামী লীগেরই লোক, আর সেই কারণেই তারা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, মাদক নির্মূলের নামে বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ হত্যা বন্ধ করুন। বিচারবহির্ভূত হত্যা নয়, প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করুন।ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে লাভবান করতেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে একজন নির্বাচন কমিশনার সংশোধনীর বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত প্রকাশ) দিলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সরকারি দলের নুন খাওয়ার অমর্যাদা করেননি। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা সংশোধন করেছে ইসি, যা গভীর ষড়যন্ত্রমূলক এবং ভোটের ময়দান ধ্বংসের শামিল। এর ফলে ভোটের মাঠে সমান সুযোগ থাকবে না। এটি ভোটারদের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা। রিজভী বলেন, সিইসি চান না দেশে কোনও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। এই নির্বাচনী আইন প্রণয়নের ফলে আইনের চোখে সবাই সমান থাকলো না। এটি সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহবায়ক ও কাউন্সিলর মাকসুদ আলম খন্দকার হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার পরও তিনবার তাকে কারাফটক থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কারাবন্দী জীবন কাটাচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আব্দুস সালাম আজাদ, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।