ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকেই কমলাপুর রেল স্টেশনে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ভোর রাত থেকেই রেল স্টেশনে দেখা যায় টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড়।টিকিট দিতে দেরী হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। টিকিট কালোবাজারি যাতে না হয় সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।রাত থেকে অপেক্ষায় থাকা টিকেটপ্রত্যাশীদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে রোজার ঈদের ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে ঢাকার কমলাপুরে।তবে সার্ভার জটিলতার কারণে প্রথম দিনের টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট পরে। এ নিয়ে কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইনে উত্তেজনাও দেখা গেছে।শুক্রবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৩১ টি আন্তঃনগর ট্রেনের ১০ জুনের যাত্রার টিকেট বিক্রি হচ্ছে। অগ্রিম টিকেট দেওয়া হচ্ছে মোট ২৬টি কাউন্টার থেকে, যার মধ্যে দুটি নারীদের জন্য। একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারটি টিকেট কিনতে পারছেন।

কথা ছিল সকাল ৮টায় কাউন্টার খুলে টিকেট বিক্রি শুরু হবে। টিকেট ফুরিয়ে যাওয়ার আগে কাউন্টারের সামনে পৌঁছানোর চেষ্টায় বরাবরের মতই রাত থেকে কমলাপুর স্টেশনে অপেক্ষায় ছিল বহু মানুষ।কিন্তু বিক্রি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয় সার্ভার বিভ্রাট। কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট দিতে না পারায় টিকিট বন্ধ রাখার কথা জানান বিক্রয়কর্মীরা।এ সময় কাউন্টারের সামনে অপেক্ষায় থাকা টিকেট প্রত্যাশীরা হৈ-হল্লা শুরু করে। পরে জটিলতা কাটিয়ে সকাল সোয়া ৮টায় টিকেট বিক্রি শুরু করে কর্তৃপক্ষ।১৬ জুন ঈদের সম্ভাব্য দিন ধরে পাঁচ দিনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির সূচি ঠিক করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার ১০ জুনের টিকেট বিক্রি হচ্ছে বলে কমলাপুরে টিকেটপ্রত্যাশীদের সেই ভয়ঙ্কর চাপ নেই। তবে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন ট্রেনের কাউন্টারের সামনে ভিড় ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে দেলোয়ার হোসেন জানান, জামালপুরের দেওয়াগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেসের টিকেটের জন্য বৃহস্পতিবার রাতে তিনি কমলাপুরে এসেছেন। টিকেট প্রত্যাশীদের লাইনে তিনি ছিলেন পাঁচ নম্বরে। তাই টিকেট পেতে সমস্যা হয়নি। আমাদের ওইখানে বাস রোডের অবস্থা খুব খারাপ। চান্দুরা পার হইতেই সাড়ে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা লেগে যায়। এজন্য আমাদের ওইদিকের বেশিরভাগ মানুষ ট্রেনে যেতে চায়।লালমনিরহাটের লালমনি এক্সপ্রেসের টিকেট কিনতে আসা হারুন অর রশিদও একই ধরনের কথা বললেন।আসলে ট্রেন জার্নি অনেক বেশি নিরাপদ। কোনো হ্যাসেল নাই বললেই চলে। এইজন্য এত কষ্ট করি ট্রেনের টিকেটের জন্য। গতকাল সন্ধ্যায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি।দিনাজপুরের দ্রুতযান এক্সপ্রেসের টিকেটের আশায় রাতে এসে লাইনে ‘সিরিয়াল’ দিয়ে গিয়েছিলেন একটি সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন বিভাগের নির্বাহী আনোয়ার পারভেজ। শেষ রাতে সেহেরি খেয়ে নিজেও চলে এসেছেন।তিনি বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল ফোর লেইনের কাজের জন্য আমাদের রোডের জরাজীর্ণ অবস্থা। বাসে যেতে সাহস পাই না। কোনো সমস্যা না হলে ট্রেনে বারো ঘণ্টার মধ্যে দিনাজপুর পৌঁছানো যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকেট কাউন্টারের সামনে ভিড়ও কমে আসে। বেলা পৌনে ১১টার দিকে নারীদের কাউন্টার অনেকটাই ফাঁকা দেখা যায়।

কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক সীতাংশু চক্রবর্ত্তী সাংবাদিকদের বলেন, এবার প্রতিদিন ২৩ হাজার ৫১৪টি টিকেট বিক্রি হচ্ছে। আন্তঃনগর ট্রেনের এই টিকেট ছাড়াও অন্যান্য ট্রেনের ২৫ হাজার ৩৪৫টি এবং বিশেষ ট্রেনের তিন হাজার ৮৯০টি টিকেট প্রতিদিন ঈদের আগে বিক্রি হবে। এছাড়া স্ট্যান্ডিং টিকেট মিলিয়ে প্রায় ষাট হাজারের বেশি যাত্রী আমরা প্রতিদিন বহন করতে পারব। বেলা ১০টার দিকে টিকেট বিক্রি কার্যক্রম দেখতে কমলাপুরে আসেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এবার বিশেষ ট্রেন হিসেবে আরও দুটি ট্রেন যুক্ত হওয়ায় ঈদের তিন দিন আগে থেকে মোট নয়টি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে।ঈদে আমরা আরও দুটি বিশেষ ট্রেন চালাব। এটি আমাদের আগের ঘোষণায় ছিল না। আমাদের কলকাতার মৈত্রী এক্সপ্রেস ঈদের সময় বন্ধ থাকে। ওই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেনের বগিগুলো আমরা ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত চালাব। এটি ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার পথে কোথাও থামবে না। যশোরের দিকে শুধু যাত্রী নামাবে।এছাড়া লালমনিরহাটের পথেও আরেকটি বিশেষ ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, যেটি কেবল কয়েক জায়গায় যাত্রী নামাবে বলে জানান মহাপরিচালক। ঈদ উপলক্ষে কমলাপুর ছাড়াও ঢাকার বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, ঈশ্বরদী, রাজশাহী, দিনাজপুর, লালমনিরহাটসহ বড় স্টেশনগুলো থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টিকেট বিক্রি হবে।