দেশে গত ১০ বছরে কোনো ধরনের জিনিসপত্রের দামই বাড়েনি বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি দেশবাসীকে এ সুসংবাদ দিতে চাই যে, গত ১০ বছরে দেশে কোনো ধরনের জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি। এবারও বাজেটের পর জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না।সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সিগারেট ও মোবাইল কোম্পানিগুলোর জন্য ট্যাক্সের কোনো হেরফের হবে না। আগেও ৪৫ শতাংশ ছিল এবারও একই পরিমাণ থাকবে। তবে ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বোচ্চ করপোরেট ট্যাক্স হবে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ।ভ্যাটের স্তরের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেটে ভ্যাট ৯ স্তর থেকে ৫ স্তরে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

অর্থমন্ত্রী ইনকাম ট্যাক্স, ভ্যাট ও ভ্যাটের হার, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেটে রোহিঙ্গাদের জন্য ৪০০ কোটি টাকার মতো বরাদ্দ থাকছে।এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আগামীকাল মঙ্গলবার ৫ জুন থেকে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে। ৭ জুন বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় অর্থমন্ত্রী আগামী ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বাজেট পেশ করবেন। ৮ জুন শুক্রবার অর্থমন্ত্রী বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেবেন।বাজেটের আকার নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেটের আকার হবে ৪ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার মতো।আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বাজেট বক্তৃতা তৈরির শেষপর্ব। আগামী ৭ জুন (বৃহস্পতিবার) জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনের (বাজেট অধিবেশন) তৃতীয় দিন এ বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। মঙ্গলবার (০৫ জুন) বিকেলে তা ছাপানোর জন্য বিজি প্রেসে যাবে। এটি শেখ হাসিনা সরকারের তৃতীয় ও টানা দ্বিতীয় মেয়াদের সরকারের শেষ বছরের বাজেট। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর বাজেটের আকার হতে পারে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এ বাজেটের সম্ভাব্য আয় ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রীর দফতরের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের আসন্ন বাজেটে জিডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। জিডিপি প্রবৃদ্ধির এ হার ৭ দশমিক ৮ ভাগ। যা চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধির এ আকার ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। এ বছর জিডিপির আকার হলো ২২ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি অর্জন হবে বলে আশা করছে সরকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে বছর শেষে জিডিপির এ হার ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারের ‘রূপকল্প-২০২১’সহ অন্যান্য অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রয়োজন দক্ষ ও কার্যকর একটি জনপ্রশাসন। এ জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ৩ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সম্ভাব্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে একলাখ ৭৮ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দ আছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। এর আগের বছরে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৯১ হাজার কোটি টাকা। সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয় ৭৫ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশের সমান। কিন্তু শেষ বাজেটে এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে জিডিপির প্রায় সাত শতাংশ। টাকার অঙ্কে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তুলনায় ১৩৭ শতাংশ বেশি।জাতীয় নির্বাচনের আগেই পেশ হতে যাচ্ছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট। তাই ভোটার তুষ্টিতে বাজেটে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি। বাজেটে প্রায় ১১ লাখ দরিদ্র মানুষকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা হচ্ছে।এর ফলে এ কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৮৬ লাখ। পাশাপাশি বাজেটে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকার পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে হিজড়াসহ অনগ্রসর জনগোষ্ঠীরও।আসন্ন বাজেটে দেশের সূর্যসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ‘বিজয় দিবস ভাতা’ হিসেবে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা বছরে এককালীন ৫ হাজার টাকা পাবেন। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আসন্ন বাজেটে সে ঘোষণা থাকবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সব সরকারি হাসপাতালে ও ১৬টি বিশেষায়িত হাসপাতালে বিনা খরচে চিকিৎসা নেওয়া, সম্মানী ভাতা দ্রুত পৌঁছানোর জন্য ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতি ব্যবহার ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন সুবিধা দিতে বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগের ঘোষণা থাকবে।অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, সব ধরনের ভাতাসহ উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয় মেটাতে আগামী বাজেটে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ৪ হাজার ২৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবারের বাজেটে এ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ৩ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা।