সারা দেশে দলের নেতাকর্মীদের কোন্দলে না জড়িয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, সামনের নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জের।বিগত ১০ বছরের আওয়ামী লীগের দুটি সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৃণমূলের নেতাদের দায়িত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যদি টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে না পারে তাহলে তার জন্য দায়ী থাকবে তৃণমূল।শনিবার আওয়ামী লীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে সারা দেশ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আসা চার হাজারের বেশি দলীয় নেতাকর্মীর সামনে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচনৃ সবসময় মাথায় রাখতে হবে নির্বাচন মানেই এটা চ্যালেঞ্জিং হবে। কাজেই এই নির্বাচনেৃ এটা কিন্তু মাথায় রাখতে হবে। এটা কিন্তু আমাদের একটানা তৃতীয়বার।এই তৃতীয়বারের জন্য স্বাভাবিকভাবেই সবাইকে কিন্তু এক হয়ে কাজ করতে হবে।

এ দিন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন ১০তলা নতুন দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের এনে সেই শুভ কাজের অংশীদার করে রাখাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। পরে তাদের নিয়ে গণভবনে বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়।সেখানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে বলেন, এই উন্নয়ন করার ফলে মানুষ যে নৌকায় ভোট দেবে না তা কিন্তু হয় না। যদি না দেয় তার জন্য দায়ী থাকবেন আপনারা তৃণমূলে।এটাই আমার কথা।

কারণ, আপনারা সঠিকভাবে মানুষের কাছে যেতে পারেননি, বলতে পারেননি,বুঝাতে পারেননি, সেবা দিতে পারেননি। সেই জন্যই, নইলে এখানে তো হারার কোনো কথা না। কারণ, এত উন্নয়ন বাংলাদেশে কবে হয়েছে? কোন সরকার করতে পেরেছে? কোনো সরকার করতে পারে নাই। তাহলে কেন অন্যদল ভোট পাবে?, যোগ করেন শেখ হাসিনা।দলীয় নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করছি, কেউ কেউ কিন্তু স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রার্থী হয়ে গেছেন। আর প্রার্থী হয়ে তাদের বক্তব্যে বিএনপি কী লুটপাট করল, সন্ত্রাস করল সেটা বলেন না। তার বক্তব্য এসে যায় আমার আওয়ামী লীগের এমপির বিরুদ্ধে, সংগঠনের বিরুদ্ধে।এ সময় নেতারা হাততালি দিয়ে দলীয় সভানেত্রীর কথায় সায় দেন।

সভাপতি ফের বলেন, আমি এখানে একটা ঘোষণা দিতে চাই। কেউ যদি আমার দলের এত কাজ আমরা করেছি। দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, কীভাবে দেশটাকে উন্নত করব। যে উন্নয়নের কাজগুলো করছি। সেগুলো না বলে, সেগুলো ভুলিয়ে দিয়ে কোথায় কার দোষ আছে সেটা খুঁজে জনগণের কাছে যাঁরা বলবেন, তাঁরা কখনো আওয়ামী লীগের নমিনেশন পাবেন না। পরিষ্কার কথা। তাঁরা কখনো আওয়ামী লীগের নমিনেশন পাবেন না। কারণ, আমি রেকর্ড করছি। আজকাল ডিজিটাল বাংলাদেশ।

আমি এটাই বলব, যারা আমার দলের বিরুদ্ধে কথা বলবে, দলের বিরুদ্ধে বদনাম করবে সে কি এটা বুঝে না যে, তাঁর ভোটও নষ্ট হবে। সে তাহলে কোন মুখে ভোট চাইতে যাবে? ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর যদি দলের বিরুদ্ধে বদনাম করে তাহলে জনগণ তো তাকেও ভোট দেবে না। সেটা তাদের মনে রাখতে হবে। অবশ্য প্রার্থী হওয়ার স্বাধীনতা সবার আছে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমি এমপিদেরও বলব, একটা জিনিস মাথায় রাখবেন, কেউ দুর্নীতি করলে জনগণ কিন্তু মাথায় রাখে। কাজ করতে গিয়ে টাকা নিলে এরপর ভোট চাইতে গেলে বলবে, টাকা দিয়ে কাজ নিছি ভোট দেব কেন? জনগণের চোখ কিন্তু এখন খুলে গেছে। এখন ডিজিটাল যুগ।

আওয়ামী লীগ সভাপতি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এমপিরা নমিনেশন পাবেন কী পাবেন না সেটা নির্ভর করবে- আপনি এলাকায় কতটুকু জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছেন আর তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কীভাবে মূল্যায়ন করেছেন তার ওপর।এ সময় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মহাজোট করেছি। সেটা থাকবে। আমরা বন্ধু হারাবো না। এই ত্যাগ আমাদের করতে হবে। কিন্তু কে প্রার্থী হয়েছে সেটা চিন্তা না করে নৌকায় মার্কায় ভোট চাইতে হবে। এখন থেকেই মানুষের কাছে যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এদেশে রাজনীতিটা হয়ে গিয়েছিল শো-অফ করার জন্য। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা একদম প্রান্তিক মানুষ পর্যন্ত চলে গিয়েছি। একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কথা চিন্তা করে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি ।’

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি, এটা নিজেদের ভোগ বিলাসের জন্য না। আমরা দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করি। মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, সে চিন্তা করাটাই একজন রাজনীতিকের জীবনের বড় সম্পদ। রাজনীতি দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য, দেশ গড়ার জন্য।এসময় বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে যারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল, যারা ক্ষমতার আশেপাশে ছিল শুধু তাদেরই ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করেছি।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে মানুষ খুন করেছে। দুর্নীতি করেছে। অত্যাচার করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ মানুষের ঘরে ঘরে উন্নয়ন পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা মানুষের জন্য কাজ করেছি। যার কারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।

এর আগে স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জানতেন- ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করবে এবং পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না, এ কারণে অনেক প্রস্তুতি প্রয়োজন। সে কারণে তিনি লন্ডনে বসে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন। কিন্তু সেসব বিষয় তখন মুখে বলেননি। তিনি অসহযোগ আন্দোলন ডাক দিয়ে স্বাধীনতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেন। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি গেরিলা যুদ্ধের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করি এবং বিশ্বজনমতের কারণে স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি বাহিনী।এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, দেশে ফিরে এসেই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার দায়িত্ব তুলে নেন বঙ্গবন্ধু। পৃথিবীর ইতিহাস থেকে জানা যায়, বিশ্বের কোনও দেশ থেকে কোনও মিত্রবাহিনী ফেরত যায়নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় বাহিনীকে ফেরত নেন। এটাও হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কারণে।

১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেওয়ার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৭৫ সালে পরিবার হারিয়ে আমি আওয়ামী লীগের কাছেই বাবার ভালোবাসা পেয়েছি, মায়ের ভালোবাসা পেয়েছি, ভাইয়ের ভালোবাসা পেয়েছি। আওয়ামী লীগের মধ্যেই আমি আমার পরিবারকে পেয়েছি।