প্রথম ছবিতে প্রেম আছে..মমতাও আছে! কিন্তু.. পরেরটাতে?
ওখানে তার চেয়েও বেশি প্রেম..মমতা আছে! কারণ.. আমরা বাংলাদেশী!  আমরা ভালবাসতে জানি!

স্যালুট সেইসব মানবকে..যারা প্রথম ছবিতে দেখা মমতায় আটকে থাকেননি..রোগীকে হাসপাতালে নেয়ার দায়িত্বও নিয়েছেন!
স্যালুট গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল!

ফুটপাতের উপর অসুস্থ মায়ের মাথায় পানি ঢালছিল দুই শিশু সন্তান। এমনই ভিডিও রোববার সকাল থেকেই ফেসবুকে ওয়ালে ওয়ালে ঘুরছিল। যা শেয়ার করেছিলেন সাভার ভলেন্টিয়ার নামের একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা পারভেজ হাসান।

ওই পোস্টে পারভেজ হাসান লিখেন, ‘ভিডিওটা আপ দিতাম না। কারণ এমন ঘটনার সাক্ষী আমি মাঝে মাঝেই হই! কিন্তু আজকের ঘটনাতে একটা শিক্ষণীয় বিষয় ছিলো তাই দিতে বাধ্য হলাম। 3D max এর ক্লাস করে ফিরছিলাম। উদ্দেশ্য ধানমন্ডি ব্যাচেলর পয়েন্ট। ভাবলাম হেঁটেই যাই। রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম। রাস্তার পাশে চোখ যেতেই দৃষ্টি আটকিয়ে গেলো। এই মহিলাকে আমি এর আগেও লেকের আশেপাশে দেখেছি। হয়তো ফুল বেচে! আজ দেখলাম শুয়ে আছে। ঘটনা সেটা না, ঘটনা হচ্ছে- এই বাচ্চার কাজ দেখে মাথায় পানি দিতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? বললো জ্বর আসছে মায়ের! আমি অবাক হলাম এইটুকু একটা বাচ্চা কিভাবে বুদ্ধি করে মায়ের মাথায় জল দিচ্ছে। অথচ আমাদের সমাজে অনেক ছেলেমেয়েই আছে সুস্থ মায়েরই সেবা করতে চায় না!’

তিনি আরও লিখেন, ‘জিজ্ঞাসা করলাম জ্বর কবে আসছে? বললো কাল রাতে। ট্যাবলেট খায়নি? টাকা নেই! বললাম চলো মেডিসিন কিনে দেই। ওরে নিয়ে একটু যেতেই দেখলাম আশেপাশে কোন দোকান নেই মেডিসিনের। বললাম তোমরা থাকো, আমি দিয়ে যাবো, হয়ত ভেবেছে আর আসবোনা। কিন্তু এসে দেখে কি হাসি! ট্যাবলেট আর খাবার কিনে দিলাম। এটা লিখার উদ্দেশ্য একটাই। তা হলো নিজেকে ভালো মানুষ প্রমাণ করা তা কিন্তু নয়। উদ্দেশ্য হলো আমার মাত্র ৬৫ টাকা খরচে। আল্লাহ চাইলে এই বাচ্চাগুলো তার মাকে কাল সুস্থ দেখবে। তার মা তাদের দায়িত্ব নিবে কাল থেকে। অথচ যদি মেডিসিন না নিয়ে কিছু একটা হয়ে যেত এই বাচ্চাগুলোর কি হতো? ভেবেছেন? সমাজ কাল তাদের টোকাই বলে তাড়িয়ে দিতো! লাস্ট একটা কথাই বলতে চাই! প্লিজ একটু খেয়াল রাখবেন। কারণ এই সমাজ আপনার আমার, নিজেরা খেয়াল না রাখলে সমাজ আর সমাজের মানুষ গুলো ভালো থাকবে না! আপনার ৫০ টাকা আর একটু সাহায্যই পারে কাউকে তার সুস্থতা ফিরিয়ে দিতে!’

আবেগঘন এই স্ট্যাটাসই ভাইরাল হয়ে যায় কিছু সময়ের মধ্যেই। যা এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫ হাজারের বেশি শেয়ার হয়েছে। আর ভিডিও দু’টি দেখেছেন ৩ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারি। তবে এখানেই থেমে থাকেননি পারভেজ। আরো ৫ জনের সহযোগিতায় এই মা’কে ভর্তি করেছেন হাসপাতালে। রোববার রাতে অন্য এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি এর বিস্তারিত তুলে ধরেন।

পারভেজ লিখেন, ‘কালকে যে অসহায় বাচ্চা আর মহিলার ভিডিওটি যাদের ইমোশনাল করেছে? তাদের কাছেও ক্ষমা চাচ্ছি। আসলে আমি আপনাদের ইমোশনাল করতে চাইনি। আমি জাস্ট আমাদের সমাজের প্রতিদিনের একটি করুণ দৃশ্য তুলে ধরতে চেয়েছি! প্রতিদিন বা মাঝে মাঝেই এইসব ফেস করতে হয়। তাই চেয়েছি আপনারা যাতে নিজ নিজ জায়গা থেকে তাদের জন্য একটু এগিয়ে আসেন! যাতে মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ না থাকে। কারণ আমি বিশ্বাস করি, সবার উপরে মানুষ সত্য! ভিডিও টা আপ দিয়ে আমি ভাবিনি আপনারা এতো সাড়া দিবেন। তার জন্য আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ! আল্লাহ আপনাদের এই মানবিক অন্তরকে আরো উজ্জ্বল করুক!’

তিনি আরও লিখেন, ‘আপনারা যারা খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন যে, এই অসহায় মহিলা কেমন আছে? বা সেই বাচ্চাগুলোর কি খবর? তাদের সবাইকে আনন্দের সাথে বলছি, তারা এখন সুস্থ আছে। আজ সেই অসহায় মহিলাকে আমি আর ৫ জন ভাইয়া মিলে হসপিটালে ভর্তি করিয়েছি। তখন তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর ডাক্তার বলেছে, তিনি আল্লাহর রহমতে ঠিক আছেন। কারণ আগের রাতে তাকে মেডিসিন দেওয়া হয়েছিলো! চিকিৎসা শেষ করে মহিলার ছোট দুটো বাচ্চার জন্য নতুন জামা পেন্ট সাথে মহিলার জন্য নতুন সাড়ি কিনে দেওয়া হয়েছে! তাদের সাময়িক খাবার দেওয়া হয়েছে। এর ভেতর যাদের কথা বলতে চাই! ইয়ামিন ভাইয়া এবং সাথে আরো ৩ জন ভাইয়া ছিলো যারা যথেষ্ট সাহায্য করেছে, ডাক্তার তার ফি নেয়নি!’

সবার উদ্দেশ্যে তিনি লিখেন, ‘এই অসহায় পরিবারের কথা বলে কেউ যদি কোন মানবিক আবেদন করে? তাহলে তার সেই আবেদনে সাড়া দিবেন না। মনে করেন এই পরিবারটির একটা ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে! সো কেউ প্রতারিত হবেন না। আবারো ধন্যবাদ দিচ্ছি যারা আজ আমার পাশে ছিল।’

Courtesy and Thanks to : Saklayen Russel , সাভার ভলেন্টিয়ার and পারভেজ হাসান।