রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের বাকি আরও দুই সপ্তাহ। তবে জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা।তফসিল অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী, নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মাঠ গরম করার চেষ্টায় ব্যস্ত। ভোটারদের সমর্থন পেতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় ছুটে বেড়াছেন তারা। তবে নিজেদের রির্জাভ ভোট ব্যাংকের পাশাপাশি সমর্থন বাড়াতে নির্বাচনি প্রচারণায় বিশেষ কৌশল নিয়েছে প্রধান দুই দল। আওয়ামী লীগের প্রধান লক্ষ্য, নতুন ভোটার ও গতবার অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে যারা বিএনপির প্রার্থীকে ভোট দিয়েছিলে তাদের বুঝিয়ে সমর্থন আদায়। অপরদিকে এবার ভোটারদের কাছে নিজেদের প্রার্থীদের অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমান সরকারের সমালোচনার জায়গাগুলো তুলে ধরে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে বিএনপি। সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ জনগোষ্ঠিকে টার্গেট করে মাঠে নেমেছে তারা।

আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ১৪ দলের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের (নৌকা প্রতীকের) নির্বাচন সমন্বয়কারী ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘রিজার্ভ ভোটের বাইরে রাজশাহীতে নতুন করে যে ৩০ শতাংশ ভোটার হয়েছে, আমরা আশা করছি তারা আমাদের পক্ষে রায় দেবে। গত নির্বাচনে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জন্য আমরা বস্তিবাসীর ভোট পাইনি। বস্তিবাসীদের বলা হয়েছিল লিটন মেয়র নির্বাচিত হলে আপনাদের উচ্ছেদ করে এখানে পার্ক নির্মাণ করবে। তবে এবার তারা আর অপপ্রচারে কান দেবে না বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের বার্তা দিয়ে আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি। লিটন ভাই মেয়র নির্বাচিত হলে আমাদের রাজশাহীবাসীর জন্য শেখ হাসিনা কী কী উপহার দেবেন আমরা সেগুলো ভোটারদের মাঝে তুলে ধরছি। তৃতীয় পরিকল্পনা হলো, আমরা কেউ বসে থাকবো না। একবার-দুইবার না ১০বার হলেও ভোটারদের কাছে যাবো। সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দফায় দফায় মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে বোঝানোর কাজ করছেন। এ কারণে আমাদের পার্টি অফিস একরকম তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকছে।’রাসিকে নির্বাচনি প্রচারণায় লিটনডাবলু সরকার আরও বলেন, আরেকটি বিষয় হলো-এবারের যে বিএনপি প্রার্থী, তার প্রতি আর মানুষের আস্থা নেই। একজন মেয়র হিসেবে তিনি যতটুকুই সময় পেয়েছেন সেই সময়ে মানুষদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেননি। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে আমরা প্রচারণার কাজে জড়িত আছি। আমাদের কর্মীরা ভোটারদের কাছে এসব বার্তা পৌঁচ্ছে দিচ্ছেন। এতে করে বিএনপির অনেক সমর্থকও আমরা এবার টানতে পারছি।’

এদিকে বিএনপি মনোনীত ও ২০ দলীয় জোটের মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচনি পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম মিলন এবার তাদের ভোট চাওয়ার কৌশলগুলো সম্পর্কে জানান। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশের জনগণকে এই অনির্বাচিত, খুনি ও দুর্নীতিবাজ সরকারের হাত থেকে রক্ষা করতে ধানের শীষের কোনও বিকল্প নাই। জোটের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে প্রতিটি ভোটারের কাছে গিয়ে বিএনপি’র উন্নয়ন সম্পর্কে তুলে ধরা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি সম্পর্কে নানা ভুল তথ্য দিয়ে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তাৎক্ষণিক এই ভুল সংশোধন করার জন্য ভোটারকে বোঝানো হচ্ছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে তারা বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করবে। তাই এই নির্বাচনে কোনোভাবেই সরকার দলীয় প্রার্থীকে জোর করে বিজয়ী হতে দেওয়া হবে না বলে জানানো হচ্ছে ভোটারদের।

তিনি আরও বলেন, রাজশাহী বিএনপি সমর্থিত অধ্যুষিত এলাকা। তাই এই সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হতে পারবে না। যেকোনও নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহনমূলক করার জন্য প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতা, সদিচ্ছা ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন অত্যাবশ্যক। অন্যথায় নির্বাচনি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে না। আমরা আমাদের বিএনপি মনোনিত ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে নির্বাচনি প্রচার প্রচারণাসহ সব কর্মকা- পরিচালনায় শুরু থেকেই বিভিন্ন ধরনের প্রশাসনিক হয়রানিমূলক গ্রেফতার ও নির্বাচন কমিশনের অসহযোগিতামূলক আচরণের শিকার হয়ে আসছি। সেই সঙ্গে গত ১০ জুলাই প্রতীক বরাদ্দের আগেই ৯ জুলাই রাত থেকেই নৌকা মার্কার ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার পুরো রাজশাহী শহরে এমনভাবে টাঙানো হয়েছে যা নির্বাচনি আচরণবিধির পরিপন্থী। তারা তাদের নির্বাচনি ব্যয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এরকম পোস্টারিং সন্ত্রাস, একদলীয় শাসণ ও শোষণের বহিঃপ্রকাশ। যার কারণে অন্যান্য যেকোনও প্রার্থীর প্রচারণার পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার লাগানোর সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হওয়ার আগে থেকেই আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গভীর রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, যা বিগত খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষপাতমূলক নির্বাচনকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এসব বার্তা দিয়ে প্রচারণার কাজে নিয়োজিত দলীয় নেতাকর্মীদের ভোটারদের কাছে তুলে ধরে ভোট প্রার্থনা করা হচ্ছে।নতুন ভোটার প্রসঙ্গে শফিকুল হক মিলন বলেন, নতুন ও পুরাতন ভোটার যাই বলেন না কেন, সবাই জানে দেশের চালচিত্র এখন কী অবস্থায় আছে। তাই পুরাতন ভোটারদের সঙ্গে সঙ্গে নতুন ভোটারদের কাছেও বর্তমান সরকারের নক্কারজনক অবস্থান পরিষ্কার। সেটা আমরা প্রচারণার মাধ্যমে তুলে ধরছি। সেই সঙ্গে আমাদের মেয়রের অসমাপ্ত কাজগুলোকে শেষ করার জন্য পুনরায় মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে বিজয়ী করার জন্য ভোটারদের বলা হচ্ছে।

জানার চেষ্টা করা হয় নগরীর ভোটারদের মনোভাবও। নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কালু মিস্ত্রী মোড় এলাকার বাসিন্দা ও বরেন্দ্র কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. বিপ্লব এবার নতুন ভোটার হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজশাহীবাসীর উন্নয়ন নিয়ে যে প্রার্থী কাজ করবেন আমরা তাকেই ভোট দেবো। রাজশাহীর শিক্ষা, শিল্প-বাণিজ্য, জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে উন্নয়নকামী প্রার্থীকেই মেয়র নির্বাচিত করা উচিত।আরেক নতুন ভোটার নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ছোটবনগ্রাম ক্লাব মোড় এলাকার মাহমুদা আকতার সন্ধ্যা বলেন, রাজশাহী শান্তির শহর, নির্মল বাতাসের শহর। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহী অন্যান্য বিভাগীয় শহরের তুলনায় অনেক পিছিয়ে পড়েছে। সিটির আওতায় অনেক বাড়িতে এখনও গ্যাসের সংযোগ নেই। আরও বিভিন্ন ধরনের নাগরিকসেবা থেকে বঞ্চিত তারা। তাই যে প্রার্থী রাজশাহীকে এগিয়ে নিতে কাজ করবেন আমরা তাকেই এই নগরের পিতা নির্বাচিত করবো।

নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ড রাণীনগর সিটি হাসপাতাল এলাকার রায়হান ইসলামও প্রথমবারের মতো সিটি নির্বাচনে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তিনি বলেন, রাজশাহীতে কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। এখানে শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে পারলে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে। এ দিকটি বিবেচনা করেই প্রথমবারের মতো ভোট দেবো।

উল্লেখ, রাসিকে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন। আর নারীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৭টি থেকে বেড়ে ১৩৮টি হয়েছে। বর্ধিত ভোটকেন্দ্রটি হচ্ছে অনন্যা শিশু শিক্ষালয়। এটি মহানগরীর ২৪নং ওয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত।