সঠিক সময়ে সঠিক পরিকল্পনা না করায় বিদ্যুৎ বিতরণে সংকট তৈরি হয় বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। শনিবার (২১ জুলাই) ঢাকার খিলক্ষেতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন। হয়রানিমুক্ত বিদ্যুতের অঙ্গীকার প্রতিপাদ্য নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাপবিবোর এই অর্থবছরের সম্মেলন। সারাদেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার ও জেনারেল ম্যানেজারসহ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এতে অংশগ্রহণ করেন।

হবিগঞ্জে একটি সাবস্টেশন নির্মাণ এবং ভোলায় ওভারলোডেড ট্রান্সফরমারের প্রসঙ্গ তুলে তা সংস্কারের কথা বলা হলে প্রতিমন্ত্রী এই মন্তব্য করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন এসে এসব কেন বলা হচ্ছে? এসব পরিকল্পনা তো আরও আগে হওয়া উচিত ছিল।বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের ‘শিফট পরিবর্তন’ হওয়ার কারণে আগামী কয়েক মাস উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা হতে পারে বলে জানান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা আশা করছি, সিরাজগঞ্জে আমাদের যে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো আছে, সেখানে গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে সেখান থেকে আমরা কভার আপ করব।এলএনজি আমদানির সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে কোম্পানি আমাদের এলএনজি দেবে, তারা কাজ শেষ করলে…তারা আরও একটি মাস সময় চেয়েছে। সমুদ্রের তলদেশে পাইপে আবার নতুন করে সমস্যা দেখা দিয়েছে, এগুলো সব সেরে হয়ত অগাস্ট মাসের শেষে এলএনজি পাওয়া শুরু করব।

বাপবিবোর্ডের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন সম্মেলনে তাদের কার্যক্রমের উপর আর্থিক, কারিগরি ও ব্যবস্থাপনাগত বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন। সম্মেলনে বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী নসরুল নির্বাচনকে মাথায় রেখে সমস্ত কাজ করতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের আহ্বান জানান।

ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ উপজেলায় বিদ্যুতায়নের কার্যক্রম সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে সরকারের জন্য কাজ করুন আপনারা। সরকার আপনাদের বেতন বৃদ্ধি করেছে, সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, সঠিকভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে জনগণের সেবায় সাহায্য করুন।সম্মেলনে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের নতুন এপিএ টার্গেট এবং বিগত বছরের এপিএ অর্জন বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়।

শতভাগ উপজেলা বিদ্যুতায়নের টার্গেট এবং মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইনসহ উপস্থিত কর্মকর্তারা।আরইবির পক্ষ থেকে জিএম সম্মেলনে বলা হয় হবিগঞ্জে ওভারলোডেড সাবস্টেশনের কারণে নতুন গ্রাহক তৈরিতে সমস্যা হচ্ছে আর পুরাতন গ্রাহকরাও মানসম্মত বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। অন্যদিকে, ভোলার ট্রান্সফরমার ওভারলোড সমস্যা দূর না করলে ভোলা অন্ধকারে তলিয়ে যেতে পারে। ভোলা-২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে।প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতে সরকারের অনেক সাফল্য কিন্তু কোনও কারণে বিদুৎ না থাকলে সব সাফল্য ম্লান হয়ে যায়। এজন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।আরইবির শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনের বছর মানুষকে আরও বেশি করে সেবা দিতে হবে।

জিএম সম্মেলনে আরইবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত দেশের ৫৮ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত হিসেবে উদ্বোধন করা হয়েছে। আগামী ডিম্বেরের মধ্যে আরও ৭০ টি উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত হিসেবে ঘোষণা করতে চায় আরইবি। এর বাইরে আরও ১৫০ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ চলছে। অন্যদিকে, দেশে এখন পর্যন্ত ৪০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। এই ৪০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ পেলে দেশ শতভাগ বিদ্যুতায়নের দিকে একধাপ এগিয়ে যাবে।দুই দিন ব্যাপী এই জিএম সম্মেলনে এবার হয়রানি মুক্তির দিকটিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে আরইবি। সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্যে বলা হচ্ছে হয়রানিমুক্ত বিদ্যুতের অঙ্গীকার।

সম্মেলনের শুরুতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন এক উপস্থাপনায় জানান, ১৯৭৮ থেকে ২০০৮ সাল নাগাদ ৩০ বছরে আরইবির গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৭৪ লাখ। সরকারের ৯ বছরে আরও এক কোটি ৫৭ লাখ নতুন সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন আরইবির গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৩১ লাখ। বর্তমানে আরইবির বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৯৭ হাজার কিলোমিটার, বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী গ্রাহক ৮৬ ভাগ, ৮৩৭টি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্রের মোট ক্ষমতা ৯ হাজার ৭৭৫ এমভিএ, সিস্টেম লস ১১ ভাগ, বকেয়া ১ দশমিক ১০ মাস। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুত বোর্ড (বাপবিবোর্ড) ৫৫ হাজার কিলোমিটার লাইন নির্মাণ ও ১৮০০ এমভিএ ক্ষমতা সম্পন্ন উপকেন্দ্র স্থাপন করে ৩৯ লাখ গ্রাহককে নতুন সংযোগ প্রদান করেছে।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ, পাওয়ার সেল এর মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন ছাড়াও পিজিসিবি, ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক আহমেদ আরইবির সদস্য প্রশাসন মো. ইয়াকুব আলী পাটওয়ারি উপস্থিত ছিলেন। জিএম সম্মেলনে দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।