বন্দর নগরী চট্টগ্রামের লাগোয়া হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে ও পাহাড়ের পাদদেশে মৃত্যুর ঝুকি নিয়ে এখনো বসবাস করছে লক্ষেরও অধিক মানুষ।এসব ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারী নিরাপদ স্থানে পূর্ণবাসনের জন্য এখনও পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি সংশি¬ষ্ট কতৃপক্ষ।তবে বিগত তত্ববধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ১১ জুন হাটহজারী উপজেলার আওতাধীন চট্টগ্রাম সেনানিবাস সংলগ্ন দক্ষিণ জঙ্গল পাহাড়তলী এলাকার লেবু বাগান ও কাইচ্ছাঘোনা এলাকায় স্মরণ কালের পাহাড় ধসের ট্র্যাজেডি ও মানবিক বিপযর্য়ের ঘটনার পরপর প্রশাসন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পাহাড়ের ঝুকিপূর্ণ বস্তি গুলো সরানোর উদ্যোগ গ্রহনের করার পরও সরকার পরিবর্তন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির স্বেচ্ছাচারীতা ও হেঁয়ালীপনার কারণে তা আর বেশি দূর এগোয়নি বলে জানা গেছে।

প্রতি বছরই বর্ষা এলেই সল্প সময়ের জন্য প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশি¬ষ্ট কতৃপক্ষ ঢাকঢোল পিঠিয়ে পাহাড়ে ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের ঝুকিপুর্ণ ঘরবাড়ি সরিয়ে অন্যত্র বসবাসের জন্য উদ্ভুদ্ধ করেই তারা তাদের অফিসের রুটিন ওর্য়াক শেষ করে। অথচ পাহাড় ধসের মত কোন ঘটনার পর তৎসময়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরিয়ে তাদেরকে পূর্ণবাসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু সময় অতিক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে তাদের কার্যক্রমে পরে ভাঁটা। ভূমিহীন মানুষগুলো ঝুকিপূর্ণ জেনেও নিরুপায় হয়ে পাহাড়ের ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাটহাজারী উপজেলার ১নং সিটি কর্পোরেশন ওয়ার্ডের শাহা আমানত কলোনী, জঙ্গল দক্ষিণ পাহাড়তলী, ফতেয়াবাদের পশ্চিমে সন্দীপ কলোনী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, হাটহাজারী পৌরসভার পশ্চিমে, মির্জাপুর ইউনিয়নের সরকার হাট বাজারের পশ্চিমে, চারিয়া নয়াহাট বাজারের পশ্চিমে, কাটিরহাট এলাকার পশ্চিমে কাঞ্চনপুর এবং উদালিয়া সহ ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের পশ্চিমে পাহাড়ে ও পাহাড়ের পাদদেশ ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাস করছে লক্ষেরও অধিক মানুষ।রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয়ে কিছু পাতি নেতারা অধিকাংশ পাহাড় দখল করে পাহাড়ের পাদদেশে কাঁচা ও সেমিপাকা ঘর নির্মান করে ভাড়া দিয়েছে। শুধু তাই নয় প্রশাসন নিরবতাকে পুজি করে ওই সকল পাহাড়ে বসবাসরত অসাধু চক্রগুলো বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।

১নং সিটি কর্পোরেশন ওয়ার্ডের দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডস্থ ফতেয়াবাদের পশ্চিমে সন্দীপ কলোনী এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারী নাম প্রকাশে অনিশ্চুক একাধিক বাসিন্দা এই প্রতিবেদককে জানান, আমরা প্রাণের ঝুকি নিয়ে ঐসব এলাকায় বসবাস করছি। এর কারণ ঘরের ভাড়া নগরীর অন্যান্য সাধারণ বাসার ভাড়ার তুলনায় অনেকাংশে কম। তাছাড়া আমরা ভূমিহীন। যাওয়ার মত কোন নিদিষ্ট স্থায়ী ঠিকানা আমাদের নেই। আমাদের পূর্ণবার্সনের জন্য কোন উদ্যোগ সরকার নিচ্ছে না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল এর কাছে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, পরিবেশ কিন্তু তার নিজস্ব নিয়মে চলে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা পরিবেশ বান্ধব কাজ না করব, ততক্ষণ পর্যন্ত পাহাড় ধসের মত বির্পযয় হতেই পারে। বর্তমানে আমরা কিন্তু বেশ ঝুকিতে আছি। তবে এর জন্য আমরা যারা পাহাড়ে বা পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে তাদের মধ্যে অনেক বেশি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

বিশেষজ্ঞ এ পরিবেশবিদ মনে করেন, আমরা সচেতন না হলে এমন প্রকৃতিক দূর্যোগ আমাদের পিছু ছাড়বে না। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে এ ব্যাপারে আরো বেশি তৎপর হতে হবে। সাথে সাথে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত ব্যক্তিদের নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের বিভিন্ন রকমের চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যতায় এমন দূর্যোগ আমাদেরকে প্রতিনিয়তই মোকাবেলা করতে হবে বলে তিনি মনে করছেন।এছাড়া তিনি আরো বলেন, ভূমিহীন মানুষ যারা পাহাড়ে বা পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে, তাদেরকে নিতান্তই বসবাস করতে হলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে। তার বিপরীত হলে এই ধরণের ভয়াবহ দূর্যোগে তাদেরকে প্রতিনিয়িতই পড়তে হবে। বন উজার করে গাছ ও পাহাড় কাটার ফলে পাহাড় তার প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারায় বলে এমন পরিস্থিতির অবতারণা ঘটে। এছাড়া প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলেও পাহাড় ধস হতে পারে। তাই আমাদেরকে এমন দূর্যোগ থেকে রেহায় পেতে হলে হতদরিদ্র মানুষদের স্থায়ী পূর্ণবাসনের জন্য সরকারের পাশাপাশি সমাজের ধর্ণাঢ্য ব্যাক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আক্তার উননেছা শিউলী মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, উপজেলার পাহাড়ে ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের পানি-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। তবে এরপরও যারা আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ভূমিহীন হতদরিদ্র মানুষ বসবাস করছে তাদেরকে দূর্যোগকালীন সময়ে পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করা হয়। তাছাড়া এসব মানুষদের স্থায়ী পূর্ণবাসনের জন্য উপজেলার প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।প্রসঙ্গত, বিগত ২০০৭ সালে ১১ জুন হাটহজারী উপজেলার আওতাধীন চট্টগ্রাম সেনানিবাস সংলগ্ন দক্ষিণ জঙ্গল পাহাড়তলী এলাকার লেবু বাগান ও কাইচ্ছাঘোনা এলাকায় স্মরণ কালের পাহাড় ধসের ট্র্যাজেডি ও মানবিক বিপযর্য়ের ঘটনা ঘটে। ওই দিন চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে নারী, পুরুষ ও শিশু সহ প্রায় ১২৭ জনের প্রাণহানি ঘটে।