কয়লা সংকটে শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেল দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র। আজ রোববার রাত ১০টা ২০ মিনিটে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পরিচালক (জনসংযোগ) সাইফুল হাসান চৌধুরী বিষয়টি জানিয়েছেন। এর আগে আজ রাত ১২টার পর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানান পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) সাঈদ আহমেদ। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা যায়, বড়পকুরিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ২৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি ইউনিট ছাড়াও ১২৫ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম আরও দুটি ইউনিট রয়েছে। প্রয়োজনীয় কয়লার অভাবে ১২৫ মেগাওয়াটের ইউনিট দুটো আগে থেকেই বন্ধ। চলছিল শুধু ২৩০ মেগাওয়াটের ইউনিটটি।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চলমান কেন্দ্রটি পুরোপুরি উৎপাদনে রাখতে প্রতিদিন ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন কয়লা দরকার। সেই হিসাবে এক মাসের জন্য দেড় থেকে দুই লাখ মেট্রিক টন কয়লা রিজার্ভ রাখার নিয়ম। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) সঙ্গে বৈঠক করে কয়লার রিজার্ভ সর্ম্পকে নিশ্চিত থাকে পিডিবি। পেট্রোবাংলার আওতাধীন বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি এ কয়লা সরবরাহ করে থাকে।

পিডিবি বলছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বৈঠকেও পেট্রোবাংলা নিশ্চিত করে, কয়লার মজুদ আছে। কিন্তু সম্প্রতি পিডিবির বোর্ড সদস্য (উৎপাদন) আবু সাঈদ বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরেজমিন গিয়ে দেখেন, সেখানে ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার মেট্রিক টন কয়লা মজুদ আছে, যা দিয়ে দুদিনও বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব নয়। সেই হিসাবে ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম ইউনিটটিতে বর্তমানে অনেক কম পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এটি এখনো সচল রাখা হয়েছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সরেজমিন পরিদর্শনকারী পিডিবির কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, পেট্রোবাংলা থেকে আমাদের কয়লা সরবরাহের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমি নিজেই দেখেছি বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে কয়লার পর্যাপ্ত মজুদ নেই। কয়লা সংকটে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকাটা মোটেও উচিত নয়। এই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে দিনাজপুর, রংপুর, লালমনিরহাটসহ উত্তরের বিশাল অঞ্চলে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকট তৈরি হওয়া। বিদ্যুৎ সচিব দেশের বাইরে আছেন। তিনি ফিরে এলে বৈঠক করে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান আবু সাঈদ।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ বলেন, ‘হঠাৎ করে কয়লা কেন নেই এ বিষয়ে তদন্তের জন্য কমিটি করা হয়েছে। আমরা বৈঠক করছি। চেষ্টা করছি পিডিবিকে গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়ে দিতে যেন বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করে আসন্ন সংকটের সমাধান করা যায়। কয়লা মজুদ নেই কেন, সে সম্পর্কে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলে বলা যাবে।’  পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘সব বৈঠকে কয়লা মজুদ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করার পর এখন হঠাৎ দেখা যাচ্ছে কয়লা নেই। এটি দুঃখজনক।’

সূত্রমতে, বড়পুকুরিয়ার খনি থেকে কয়লা ক্রয়ে হাজারো শিল্প-কারখানা আগ্রহী। সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুপারিশে ক্ষেত্রবিশেষে কয়লা বিক্রি হয় অবৈধ কমিশন গ্রহণের মাধ্যমে। অভিযোগ রয়েছে, কয়লার ক্রম-ঊর্ধ্বগামী চাহিদাকে কেন্দ্র করে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এতে যোগসাজশ রয়েছে বড়পুকুরিয়া কোল কোম্পানির কিছু কর্মকর্তারও। এ সিন্ডিকেট অতি উচ্চমূল্যে কালোবাজারে নিয়মিত কয়লা বিক্রি করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, হয়তো বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সংরক্ষিত কয়লাও কালোবাজারে চলে গেছে।