গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২২ জন নিহত হওয়ার মামলায় ২১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। তবে চার্জশিটে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমের বিরুদ্ধে ওই ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করা হয়েছে।  আজ সোমবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির ঢাকা সিএমএম আদালতে এই চার্জশিট দাখিল করেছেন মর্মে জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
তবে এদিন বেলা আড়াইটা পর্যন্ত আদালতে আসার বিষয়টি অস্বীকার করেছে আদালতের ডিসি প্রসিকিউশন আনিসুর রহমান।
মনিরুল ইসলামের দাবী অনুযায়ী, চার্জশিটে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমের বিরুদ্ধে ওই ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়া চার্জশিটভুক্ত ২১ জনের মধ্যে ১৩ জন মৃত্যুবরণ করায় তাদেরও অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। সে হিসেবে আটজনের বিচারই আদালতে অনুষ্ঠিত হবে। নিহত ১৩ জনের মধ্যে আটজন বিভিন্ন অভিযানের সময় এবং পাঁচজন ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’ নিহত হয়।

চার্জশিটভুক্ত জীবিত আটজন হলেন, হামলার মূল সমন্বয়ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ, ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি’ নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ। আসামিদের মধ্যে শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ পলাতক এবং অপর ছয় আসামি কারাগারে রয়েছেন।

কারাগারে থাকা আসামিদের মধ্যে মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ ও রাকিবুল হাসান রিগ্যান হামলার দায় স্বীকার করে আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’ নিহত পাঁচজন হলেন- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।

বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানের সময় নিহত আটজন হলেন- তামীম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান। চার্জশিটে হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়, হলি আর্টিজান রেস্তরায় হামলার উদ্দেশ্য জঙ্গিদের ছিল না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল রাজধানী ঢাকার এমন একটি জায়গাতে হামলা করবে যেখানে বিদেশি নাগরিক বেশি চলাচল করে। যাতে বাইরের দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হলি আর্টিজান রেস্তরায় হামলা করা হয়।

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। এর আগে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের ওপর গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। গ্রেনেড হামলায় ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন নিহত হন। যৌথ বাহিনী পরে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। অভিযানে ছয় জঙ্গির সবাই নিহত হন।
নিহতরা হলেন- নিহত বাংলাদেশি নাগরিক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তরুণ অবন্তি কবির (১৮), ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ হোসেইন (২০), বাংলাদেশের শিল্প ব্যক্তিত্ব ইশরাত আকন্দ ওরফে লায়লা, ভারতীয় নাগরিক ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার ছাত্রী তারুশি জেইন (১৮), ইতালীয়ান নাগরিক ফেডো ট্রেডিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্লাউদিয়া মারিয়া ডি এন্তোনা (৫৬), সাত মাসের অন্ত:সত্ত্বা সিমোনা মন্টি (৩৩), স্টুডিও টেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাদিয়া বেনেদেত্তি (৫২) ও সুপারভাইজার মারকো তোন্দাত (৩৯), একটি টেক্সটাইল গ্রুপের মাননিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাপক আদেলে পুগলিসি (৫০), ক্রিসটিয়ান রোজি (৪৭), একটি টেক্সটাইল কোম্পানীর মালিক ক্লাউডিও কাপেল্লি (৪৫), ভিনসেনজো দাল্লেসত্রো (৪৬) ও মারিয়া রিবোলি (৩৪), মেট্রোরেল প্রকল্পের সমীক্ষা কাজে নিয়োজিত জাপানী নাগরিক তানাকা হিরোশি, ওগাসাওয়ারা, শাকাই ইউকু, কুরুসাকি নুবুহিরি, ওকামুরা মাকাতো, শিমুধুইরা রুই ও হাশিমাতো হিদেইকো। এ ছাড়া হামলায় বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন খান ও ঢাকা মহানগর (উত্তরের) গোয়েন্দা পুলিশের অ্যাডিশনাল কমিশনার রবিউল করিম নিহত হন।