শত শত বিজ্ঞানমনষ্ক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সফলভাবে শেষ হয়েছে পরমাণু ও বিজ্ঞান সপ্তাহ’২০১৮। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জেনারেল কন্ট্রাক্টর- এটমস্ত্রইএক্সপোর্ট, বিশ্বব্যাপী পরমাণু শক্তি তথ্য কেন্দ্রের রুশ নেটওয়ার্ক- এনার্জি অব দি ফিউচারের সার্বিক সহায়তায় পরমাণু ও বিজ্ঞান সপ্তাহ আয়োজন করে রুশ রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি কর্পোরেশন- রসাটম।
পরমাণু বিজ্ঞান সপ্তাহটির মূল লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন শিক্ষামূলক ও বিনোদন প্রোগ্রাম যেমন- ইন্টারেকটিভ সেমিনার, পাবলিক টক, কুইজ প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞানভিত্তিক গেমস, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ইত্যাদি আয়োজনের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করে তোলা, পরমাণু শক্তি সম্পর্কে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি। পরমাণু শক্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় যেমন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা, ৩+ প্রজন্মের ভিভিইআর রিয়্যাক্টরের ওপর কয়েকটি লেকচার সেশনেরও আয়োজন করা হয়।
রসাটম দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আন্দ্রেই সেভলিয়াকভ বলেন, ‘২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত দেশে পরিনত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন নতুন প্রজন্ম। আমি মনে করি এই উৎসবটি বিজ্ঞানকে তরুণ প্রজন্মের মাঝে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।’
‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প রুশ-বাংলাদেশ মৈত্রী বন্ধনের একটি প্রতীক। উৎসবটি পরমাণু প্রযুক্তি, জনগণের জীবনমান এবং দেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে এর ভূমিকা সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের জানার সুযোগ করে দিয়েছে।’
দেশের বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম ভূঞা’র মতে পরমাণু ও বিজ্ঞান সপ্তাহটি যথেষ্ট সফল হয়েছে। পরমাণু শক্তি সম্পর্কে সঠিকভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করলে এ বিষয়ে মানুষের অহেতুক ভীতি দূর হবে এবং জনগণের মাঝে এর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। সঠিক কমিউনিকেশন এবং স্বচ্ছতা বিভিন্ন গুজব সৃষ্টির সম্ভাবনা হ্রাস করে। তিনি আরো বলেন, ‘পরমাণু ও বিজ্ঞান সপ্তাহ আয়োজনের মাধ্যমে পরমাণু শক্তি সম্পর্কে জনগণের অহেতুক ভয় ও উদে¦গ দূরীকরণের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। একই সাথে জনগণের জীবন ও অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব সম্পর্কেও ধারনা প্রদান করা হয়েছে।’
উৎসবে অংশগ্রহণকারী এবং বুয়েটের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সত্যকি বনিক তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে বলেন, ‘পরমাণু ও বিজ্ঞান সপ্তাহে আমি অনেক মূল্যবান জ্ঞান অর্জন করেছি। নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সম্পর্কেও জানতে পেরেছি। আমি বাংলাদেশের পরমাণু শিল্পে কাজ করার এবং দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার অনুপ্রেরণা লাভ করেছি এই উৎসব থেকে।’
উৎসবে পরমাণু প্রযুক্তি, বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি কর্মসূচির উন্নয়ন, আধুনিক পরমাণু চুল্লির নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা, দেশের বিজ্ঞান ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তির ইতিবাচক ভূমিকা, মানুষের জীবনে পরমাণু প্রযুক্তির বিভিন্ন ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়।
সেমিনার এবং টক শো’তে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ এবং রাশিয়ার পরমাণু বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা। এদের মধ্যে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক দুই চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম ভূঞা এবং প্রকৌশলী এম. আলী জুলকারনাইন ও রুশ পরমাণু বিশেষজ্ঞ ড. আলেগ তাসলিকভ অন্যতম।
পরমাণু ও বিজ্ঞান সপ্তাহটি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা পাবলিক লাইব্রেরী, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মিলিটারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট, ঈশ্বরদী এবং ঢাকা পরমাণু শক্তি তথ্যকেন্দ্রে আয়োজিত হয়।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জুলাই থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়াসহ ১৩টি ভেন্যুতে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।