বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় তিতলি আরো ঘনীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে ভারতের ওড়িশা ও অন্ধ্র উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেতের মানে হল, বন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত, বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটার। তবে বিপদের আশন্কা এমন নয় যে চরম নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে৷

এদিকে,ঘূর্ণিঝড় তিতলীর প্রভাবে আবহাওয়া বিরূপ থাকায় সারাদেশে অভ্যন্তরীণ রুটে নৌ চলাচল বন্ধ রাখতে বলেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝডটি ভারতের ওড়িশা ও অন্ধ্র উপকূলের দিকে এগোচ্ছে। তবে এর প্রভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ও বাতাস বইছে।বুধবার দুপুরের পর বিআইডব্লিউটিএর অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল বন্ধের নির্দেশনা দেয় বলে কর্তৃপক্ষের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ৪ নম্বর বিপদ সঙ্কেত চলতে থাকায় আমাদের নৌ-নিরাপত্তা এবং নৌ-ট্রাফিক বিভাগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।এ সিদ্ধান্ত বিভিন্ন নৌ টার্মিনালগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা, ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় তিতলি বুধবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৯০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, মংলা থেকে ৮১৫ কিলেমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।ওই সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা, ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড় তিতলি আরও শক্তি সঞ্চয় করে বুধবার মধ্যরাতের দিকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে। বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে ঘূর্ণিঝড়টি গোপালপুর ও কলিঙ্গপত্তমের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে ওড়িশা ও অন্ধ্র উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

সে সময় বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১২০-১৩০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।ভারতের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, স্থলভাগে ওঠার পর তিতলি কিছুটা বাঁক নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দিকে অগ্রসর হতে হতে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে আসতে পারে।আর সেক্ষেত্রে ঘূর্নিঝড়ের কিছুটা প্রভাব বাংলাদেশের সুন্দরবন, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা এলাকায় পড়তে পারে বলে বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, প্রবল এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঢাকাসহদেশের বিভিন্ন অংশের আকাশে মেঘের ঘূর্ণি দেখা যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশে তিতলি কারণে শঙ্কিত হওয়ার মত কিছু এখনও দেখছেন না তারা।