পাহাড়ে চলছে মাসব্যাপী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দানোৎসব। তিনমাস বর্ষাবাস শেষে প্রবারণা পূর্ণিমা থেকে মাসব্যাপী বিহারে বিহারে অনুষ্ঠিত হয় এই দানোৎসব। শুক্রবার রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো পার্বত্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এই উৎসব। লক্ষাধিক ভক্তদের পদভারে মুখরিত ছিলো রাজবন বিহার।

গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় মহাউপাসিকা বিশাখা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা এবং সুতা রঙ করে কাপড় বুনে তা সেলাই করে চীবর (ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র) দান করে এই কঠিন চীবর দানের সূচনা করেন আড়াই হাজার বছর আগে। এই পদ্ধতিতে দান করলে কায়িক, বাচনিক মানসিকভাবে অধিক পরিশ্রম হয় এবং অধিকতর পুণ্যলাভ হয় বলে বৌদ্ধ শাস্ত্রে উল্লেখ আছে।পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু সাধনানন্দ মহাস্থবির (বনভান্তে) ১৯৭৪ সালে রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলার তিনটিলা বন বিহারের দায়ক-দায়িকাদের দিয়ে এই কঠিন চীবর দানোৎসবের পুনঃপ্রবর্তন করেন। ১৯৭৭ সাল থেকে পার্বত্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠানটি রাজবন বিহারে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।দু’দিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার দুপুরে চরকায় সুতা কেটে চীবর তৈরির উদ্বোধন করেন চাকমা রানী ইয়েন ইয়েন। এরপর রাতব্যাপী চলে চীবর তৈরির কার্যক্রম। এ বছর রাজবন বিহারে ১৩০টি বেইনে অন্তত ৫২০ জন নারী কর্মী অংশ নিয়েছেন। এছাড়া সুতা লাঙ্গানো, সিদ্ধ, রঙ, টিয়ানো, শুকানো, তুম করা, নলী করা, বেইন টানার কাজে আরো শতাধিক পুরুষ কর্মী অংশগ্রহণ করেছেন। পূণ্যের উদ্দেশ্যে তারা স্বেচ্ছায় এই কাজ করে থাকেন।চীবর তৈরির পর শুক্রবার দুপুরে বনভান্তের মানব প্রতিকৃতির উদ্দেশ্যে কঠিন চীবর উৎসর্গ করা হয়। এ সময় বনভান্তের প্রতিনিধি হিসেবে এ চীবর গ্রহণ করেন আবাসিক প্রতিনিধি শ্রীমৎ প্রজ্ঞালঙ্কার মহাস্থবির। এর পরপরই সাধারণ ভক্তরাও কল্পতরু ও দানীয় সামগ্রী বনভান্তের উদ্দেশে দান করেন।এদিকে উৎসব উপলক্ষে রাজবন বিহার এলাকায় বিশাল মেলা বসেছে। মেলা প্রাঙ্গণে সহস্রাধিক স্টলে সারাদেশ থেকে কুটির ও হস্তশিল্পের পণ্যের পসরা নিয়ে লোকজন মেলায় অংশ নিয়েছে।

এছাড়া নাগরদোলাসহ বিভিন্ন খেলা, যাদু প্রদর্শনী, ধর্মীয় পালাকীর্ত্তনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে সবচেয়ে আড়ম্বরপূর্ণভাবে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে প্রতিবছর এ দানোৎসবের আয়োজন করা হয়।চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, অন্ধতা বা উগ্রতা দিয়ে নয়, বনভান্তের পথ অনুসরণ করে সকল জীবের প্রতি মৈত্রীভাব প্রদর্শনের মাধ্যমে শান্তি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।