ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, একবার নির্বাচন বর্জন করে ভুগতে হয়েছে। তাই কোনো অবস্থাতেই এবার নির্বাচন বর্জন করবে না জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।শনিবার বিকেলে জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত আইনজীবী মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে এই মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।ড. কামাল বলেন, একবার নির্বাচন বয়কট করে ভুগতে হয়েছে। ওরা যত ১০ নম্বরিই করুক, হাজারে হাজারে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে হবে। প্রতি ঘরে ঘরে গিয়ে জনগণকে বোঝাতে হবে।

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার প্রসঙ্গ তুলে তিনি আরও বলেন, সরকার সংবিধানের কথা বললে আমার হাসি পায়। এই সরকারের ক্ষমতায় থাকাই অসাংবিধানিক। দিনে-রাতে নিজেরা সংবিধান লঙ্ঘন করছে। আর আমাদের সংবিধান দেখাচ্ছে।ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের সমালোচনা করে ড. কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচনে ওরা (আওয়ামী লীগ) যত রকম ১০নম্বরি করার করুক, আমরা ভোট দেব, ভোটে থাকবো। হাজারে হাজারে ভোট দেব। সবাই ভোট কেন্দ্রে থাকবো।আর যারা টাকা পয়সা দিয়ে এলাকায় ভোট করতে চায় তাদের বয়কট করতে হবে।তিনি বলেন, সরকার প্রতিমুহূর্তে সংবিধান লঙ্ঘন করছে। সকাল, দুপুর, রাত সংবিধান লঙ্ঘন করছে। কোথায় লেখা আছে, ঘোষণা দিয়ে এমপি (সংসদ সদস্য) হওয়া যায়। এ সরকারে বেশির ভাগ এমপি বিনা ভোটে নির্বাচিত।

আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা কথায় কথায় সংবিধান সংবিধান কর। আমার তো মনে হয় তোমরা পড় না। পড়লে দেখতে, সংবিধানের কোথায় লেখা আছে ১৫৪ জন সংসদ সদস্য ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়। তোমরা বলেছিলে একটা পরিস্থিতিতে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে আরেকটা নির্বাচন দেবে, অল্প সময় কি ৫ বছর? তাহলে ডিকশনারিতে নতুন শব্দ ব্যবহার করতে হবে। এভাবে মানুষের সঙ্গে ভাওতাবাজী। ভাওতাবাজীর জন্য যদি কোন পুরস্কার থাকে সেটা তোমাদের পাওয়া উচিত।দশম সংসদের এমপি-মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে নির্লজ্জভাবে ৫ বছর কাটিয়ে দিল। এরা চালাল কিভাবে? লজ্জাবোধও নাই। মানুষ হলে তার লজ্জাবোধ থাকে। যাদের মাননীয় মন্ত্রী বলা হয় এরা কারা? উপদেষ্টা করা, এমপি করা ? তোমাদের কে বানিয়েছে? এদের কোন ভাবেই মাননীয় বলা যায় না। এর হচ্ছেন এর উল্টাটা। এরা কিসের এমপি কে নির্বাচিত করেছে? আমি তো বলি মেম্বার অব পার্লামেন্ট না ঘোষিত প্রার্থী বা জিপি।

কারো নাম উল্লেখ না করে কামাল হোসেন বলেন, ওখানে আমারও কিছু বন্ধু-বান্ধব আছে। তোমরা মন্ত্রী, এমপি হয়ে কি হয়ে গেছ ? তোমাদের কি লজ্জাবোধ বলে কিছু নেই। আদম সন্তান হলে তো লজ্জাবোধ থাকবে। তোমরা কি মানুষ না কি অন্য কিছু হয়ে গেছ। তোমরা কিসের চাকরি নিয়েছ? মানুষের সঙ্গে ভাওতাবাজী করার চাকরি? একটু লজ্জাবোধ ফিরে আসুক এ দোয়া করি।

আইনজীবী মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জয়নুল আবেদিন। সমাবেশে দেশের ৬৪টি জেলার বার কাউন্সিলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে বক্তব্য দেন তাঁরা।মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীন। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশানের সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের পরিচালনায় মহাসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর, অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অ্যাডভোকেট সানা উল্লাহ মিয়া প্রমুখ। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত বিএনপিপন্থি আইনজীবীরাও বক্তব্য দেন সমাবেশে।