ঝিনাইদহ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেই শহিদুল ইসলাম হিরণকে পিটুনি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার রাতে সদর উপজেলার মধুপুর চৌরাস্ত মোড়ে তাকে মারধর করা হয়। এ সময় তার সহযোগী চাপড়ি গ্রামের রিপন মেম্বর, বরইখালী গ্রামের আব্দুল হান্নান ও মধুপুর গ্রামের আজিজুল আহত হন। দিবাগত রাত একটার দিকে তিনি ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসাও নেন। তার চিকিৎসা রেজি নং ৭১০৪/২। শহিদুল ইসলাম হিরণ সদর উপজেলার আড়ুয়াকান্দি গ্রামের মৃত আবুল কালাম মুন্সির ছেলে।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের রাত্রিকালীন চিকিৎসক ডা. শাহিন খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, শনিবার রাত ১টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেই শহিদুল ইসলাম হিরন কয়েকজন সঙ্গীসহ হাসপাতালে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। হিরন চেয়ারম্যানের ডান হাটু ও ডান হাতের হিপ জয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. আব্দুর রশিদ জানান, আমি শুনেছি সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম হিরনকে মারধর করা হয়েছে। তবে কারা তাকে মেরেছে তা আমি নিশ্চিত হতে পারিনি।

ঝিনাইদহ সদর থানা যুবলীগের আহবায়ক ও পোড়াহাটী ইউনিয়নের বাসিন্দা শাহ মোহাম্মাদ ইব্রাহীম খলিল রাজা জানান, শনিবার রাতে পোড়াহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম হিরন বেআইনী জনতা নিয়ে মধুপুর এলাকায় অবস্থান করছিলেন। খবর পেয়ে কে বা কারা সেখানে এসে তাকে গণপিটুনি দেয়। এ সময় হিরনের ২০/২৫ জন সমর্থক আহত হন। তবে কারা তাদের ওপর হামলা করে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি এই যুবলীগ নেতা। এর আগে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে শহিদুল ইসলাম হিরণের হুমকিমূলক অশালীন বক্তৃতার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে সমালোচনার ঝড় উঠে।

ভিডিওতে শোনা যায় শহিদুল ইসলাম হিরণ সদর উপজেলার গোয়ালপাড়া বাজারের এক পথসভায় পদ্মাকর, দোগাছী ও হরিশংকরপুর ইউনিয়নসহ সদরের পূর্বাঞ্চলের বিএনপি নেতাকর্মীদের বিশেষ করে স্থানীয় বিএনপি নেতা ঘোড়ামারা গ্রামের খেলাফত হোসেনের উদ্দেশ্য করে বলেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে ‘চো…’ দিয়ে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেব। বিএনপি নেতাকর্মীদের ‘পা…’ চামড়া তুলে প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে বিতাড়িত করা হবে। এই কাজে সাথে থাকবে পুলিশ প্রশাসন।

হিরণ বলেন, পুলিশ ভাইয়েরা শুনে নিন পদ্মাকর ও হাটগোপালপুরে মিটিংয়ের পর বিএনপি সাটা হবে। আমাদের স্থানীয় নেতারা পুলিশকে যে নির্দেশ দিবে তা পালন করতে হবে। সেই নির্দেশ যদি আপনারা না শোনেন তবে ঝিনাইদহে আপনারা চাকরি করতে পারবেন না। আমি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিষ্কার ভাষায় বলে গেলাম।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, নির্বাচন সামনে, তাই এই এলাকার কোনো বিএনপি নেতাকর্মীরা বাজারে ঘোরাফেরা করতে পারবে না। তিনি বলেন গোয়ালপাড়া বাজারে যারা বিএনপি করেন, তাদের ঘরে তালা মেরে দেওয়া হবে। তাই এখনো সুযোগ আছে আত্মসমর্পণ করেন, নইলে আপনারা চোখ হারাবেন, ‘পা…’ রক্ত বের হবে ও ঠ্যাং ভেঙে দেওয়া হবে।

বিএনপিকে উদ্দেশ্যে করে একাধিক দল পরিবর্তনকারী হিরণ বলেন, আপনাদের নেত্রী জেলে। আপনারা যার কথায় বসে আছেন, তাকেও এই মাসের মধ্যে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে। অতএব আপনারা ইউনিয়ন নেতাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

তিনি বলেন, যে সব আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপিকে আশ্রয় দিচ্ছেন তারা বিএনপি ও জামায়াতের চর। আপনাদেরও বিএনপি জামায়াতের মতো…(অশালীন কথা) চামড়া তুলে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ঝিনাইদহ সদরের পশ্চিমেও ঘোষণা দিয়েছি। আমরা জামায়াত-বিএনপি মুক্ত করবো। যে সব আওয়ামী লীগের নেতারা একজনের ছবি পোস্টারে দিয়েছেন তাদেরও মধুপুর চৌরাস্তার মাড়ে গু… চামড়া তুলে নেওয়া হবে। আমি হিরণ মাঠে থাকবো। একেকটা ঘর থেকে বের করবো আর গু… চামড়া খুলে নেব। আমি মারবো। কোন পুলিশ যদি বিএনপির পক্ষে সাফাই গায় তবে সেই পুলিশের চাকরি থাকবে না।