বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি ফেনী নদীর মোহনায় সোনাগাজীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে এক হাজার একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প। ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানী অব বাংলাদেশ লি. (বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান) একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের চর পূর্ব বড়ধলী মৌজায় এক হাজার একর জায়গার উপর এ বিদ্যুৎ প্রকল্প প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের অধিনস্থ পাওয়ার সেল এর তত্বাবধানে ও বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় উক্ত স্থানে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) করার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কনসালটেন্ট নিয়োগের কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে এর পরিধি আরো বাড়বে বলে কোম্পানীর লোকজন জানিয়েছেন।

সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে এ সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প হতে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প হতে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎসহ মোট ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে যা দেশের জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রীডে যোগ হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক জমির সর্ব্বোচ্চ ব্যবহারের লক্ষ্যে সোলার প্যানেলের নিচে উপকূলীয় প্রজাতির মৎস্য চাষের পরিকল্পনা আছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটি এশিয়া মহাদেশের তথা আর্ন্তজাতিক পরিমন্ডলে সর্বপ্রথম অনন্য প্রকল্প হিসাবে বিবেচিত হবে। ২০১৬ জুলাই মাসে বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব মনোয়ারুল ইসলাম উক্ত বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে এসে পরিদর্শন করেন। এ সময় তাঁর সাথে ছিলেন ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানী অব বাংলাদেশ লি. এর এমডি, এটিএম জহিরুল ইসলাম মজুমদার, নির্বাহী পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) এ এম মনসুর উল আলম, প্রকল্প পরিচালক ড. কাজী মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, প্ল্যানিং ও ডেভেলপমেন্ট সেকশনের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইব্রাহীম মুহাম্মদ শাফী আল মোহতাদ, নির্বাহী প্রকোশলী মো. সাইফুর রহমান, পিডিপির প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর সদস্য মোহাম্মদ আবুল বাশার, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লা ও ফেনী জোনের প্রধান প্রকৌশলী, ফেনী জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ।

সোলার ও বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে এসে বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ারুল ইসলাম তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে উপস্থিত লোকজনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, পৃথিবীর বহু দেশ ভ্রমন করে এরকম বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্প দেখার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু আমার দেশের সাগরের কাছাকাছি আবারিত সম্ভাবনাময় প্রকল্প উপযোগী আর কোন স্থান চোখে পড়েনি। প্রকল্পের কাজটি যাতে দ্রুততম সময়ে শুরু করা যায় এতদ্বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর কর্মকর্তা ও প্রশাসনের লোকদেরকে মৌখিকভাবে নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর ড. কাজী মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাংলাদেশের প্রথম হাইব্রিড” যা এশিয়া মহাদেশের ও আন্তর্জাতিক পরিসরেও একটি মডেল হিসাবে গন্য হবে। প্রকল্প এলাকায় প্রথম পর্যায়ে ১০০০ একর ভূমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। পর্যাক্রমে এর পরিধি আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এ বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পটি সম্পূর্ন পরিবেশবান্ধব। এখানে প্রতিনিয়ত সাগরের দিক হতে বাতাস প্রবাহিত হয় আর সূর্যের রশ্মিও তীক্ষতা বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল হতে কিছুটা বেশী। প্রকল্পটি যাতে সফলভাবে বাস্তবায়ন করা যায় এ জন্য আমরা আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরেজমিনে প্রকল্প এলাকার বাতাসের গতি এবং সূর্যের আলোর তীক্ষ্মতা পর্যবেক্ষন করা হবে। অপরদিকে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের লক্ষ্যে প্রকল্প এলাকায় সোলার প্যানেলের নিচে মাছ চাষের প্রকল্পও হাতে নেয়া হবে যার মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে। সল্প সময়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প হতে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। ইজিসিবি এর প্রকল্প পরিচালক ড. কাজী মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ প্রকল্পের পক্ষ হতে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে প্রায় ১০০ কোটি ৩২ লাখ টাকা ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পরিশোধ করা হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রকল্প এলাকায় বেড়ী বাঁধের উপর ভূমি অধিগ্রহণ কালে ক্ষতিগ্রস্থ ভূমির মালিকদের মাঝে আনুষ্ঠানিক ভাবে ভূমির ক্ষতিপূরণ টাকার চেক বিতরণ করা হয়। চেক বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থেকে চেক বিতরণ করেন বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত সচিব ও ইজিসিবি লি. এব ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ.এম মনসুর উল আলম, প্রকল্প পরিচালক ড. কাজী মো. হুমায়ুন কবির। অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তত্ত্বাবধায়কসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা।প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, প্রকল্প এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়ে গেছে। প্রকল্প এলাকার ভূমিতে ১৭০৪ টি সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। মূল প্রজেক্টের জন্য বিশ্ব ব্যাংক এর সাথে ঋন প্রদানে সম্মতি প্রদান করা হয়েছে। এ ঋন পাওয়া গেলে প্রথম ধাপে ৫০ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান করা হবে। সাথে সাথে বেড়ি বাঁধের ভেতরে অফিসিয়াল অবকাঠামো নির্মান করা হবে। তিনি আরও জানান, এ প্রজেক্ট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রীডে যোগ হবে ও আর একটি বিশেষ লাইন যোগে মিরসরাই শিল্প জোনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।