জীবনে যখন ভালোবাসা আসে, তখন বয়স, টাকাপয়সা, উচ্চতা, দূরত্ব শুধুই সংখ্যা হয়ে দাঁড়ায়। আর তা কোনো ব্যাপারই হয়ে ওঠে না। এর ছোঁয়া পাওয়া যায় বলিউড যুগলদের মধ্যেও, যাঁরা বয়সের বড় ব্যবধান সত্ত্বেও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন অথবা চুটিয়ে প্রেম করে চলেছেন।

একটা সময় ছিল, যখন স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর বয়স কম হবে, এটাই স্বাভাবিক মনে করা হতো। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন অনেক যুগল আছেন, পুরুষের তুলনায় নারীর বয়সের ব্যবধান অনেক। ব্যবধান সত্ত্বেও এই যুগলরা তাঁদের জীবনের আনন্দময় মুহূর্তগুলো প্রায় প্রতিদিনই শেয়ার করে চলেছেন। বলিউডের পাঁচ যুগলের বয়সের ব্যবধানের একঝলক আমরা দেখে নিতে পারি :

অনেকেই বলেন, ভালোবাসার জন্য আবার আলাদা করে দিনক্ষণ কিসের? ভালোবাসা সর্বজনীন, ভালোবাসা জন্ম-জন্মান্তের। কিন্তু ভালোবাসার মানুষগুলোর যে একটি উপলক্ষ দরকার! একে অপরের আরও কাছে আসার, আরও বেশি করে ভালোবাসার জন্য। আর তাইতো আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বন্দরনগরী চট্টগ্রামের তরুণ-তরুণীরা ব্যস্ত এই দিনটিকে নিয়ে। প্রাণে প্রাণে ছড়িয়ে দিচ্ছে ভালোবাসার উষ্ণতা। কারণ আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।মূলত গতকাল থেকেই লক্ষ্য করা গেছে ভালোবাসার উষ্ণ পরশ নগরের পড়তে পড়তে। হলুদ কমেছে চারপাশে, সবকিছুই আজ যেন লাল রঙের দখলে। ফাগুনের রং যদি হলুদ হয় তাহলে ভালোবাসার কী?- লাল? অবশ্য সেটা জানান দিল নগরের ডিসি হিল, সিআরবি আর একুশে বইমেলায় আসা কপোত-কপোতীদের স্রোত।

এক হাতে লাল গোলাপ অন্য হাতে প্রিয়জনের হাত ধরে ঘুরতে এসেছেন অনেকে। সাজেও ভালোবাসার আমেজ। তরুণীরা লাল রঙের শাড়ি, চুড়ি আর টিপের পাশাপাশি খোঁপায় বেঁধে নিয়েছিলেন লাল গোলাপ টায়রা। সাজে পিছিয়ে নেই তরুণরাও। রঙ-বেরঙের পাঞ্জাবি, আর নানা ঢংয়ের ফতুয়া পরে এসেছেন।শুধু যুগলরা এসেছেন তা কিন্তু নয়। ভালোবাসার দিনে বন্ধু বা বান্ধবীদের সঙ্গেও ঘুরতে এসেছেন অনেকে। নগরের ডিসি হিলে কথা হয় তেমনই কয়েকজন তরুণীর সঙ্গে। তাদের ভাষায়, ‘কেউ কেউ কোনো একজনকে বিশেষভাবে ভালোবাসতেই পারে, তাই বলে বান্ধবীরা পরস্পরকে ভালোবাসতে পারবে না-এমন তো নয়। তাই আজ সবাই মিলে ঘুরছি, মজা করছি।’

নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এলাকায় কথা হয় সদ্য বিবাহিত সিলভী ও শাহীন দম্পতির সঙ্গে। জানান, আজই প্রথম অমর একুশে বইমেলায় এসেছেন তারা। বিয়ের পর আজই প্রথম ঘুরতে বেড়ুনো। পাশাপাশি চলছে বই কেনা। তারা বলেন, ‘উপন্যাস পড়তে ভালো লাগে। তাছাড়া নজরুল, রবীন্দ্রনাথ পছন্দের লেখক।’ তাদের লেখা কয়েকটি বই কিনবেন বলে জানান সিলভী ও শাহীন।

এদিকে বুধবারের পহেলা ফাল্গুন আর আজকের ভালোবাসা দিবস-সব মিলিয়েই গত দুইদিনের বেচাবিক্রি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রকাশকরা। তবে কেউ কেউ বলেন, ‘ভিড় মোটামুটি হলেও গতকালের তুলনায় বেচা-বিক্রি কম।’দেখা গেছে, রঙ-বেরঙের সাজ নিয়ে অনেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক স্টল থেকে অন্য স্টলে। পছন্দ হলে কিনে নিচ্ছেন প্রিয় লেখকের বইটি।

বইমেলায় ব্যতিক্রমধর্মী প্রকাশনা পেন্সিল’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সহিত্যচর্চা করা লেখকদের নির্বাচিত গল্প, কবিতা, ছড়া, ভ্রমণ কথা নিয়েই ৫২টি বই প্রকাশ করেছে পেন্সিল প্রকাশনী। পেন্সিলের স্থায়ী সদস্য সাইফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবসে ভালো বেঁচাকেনা হবে সেটা আগ থেকেই ধারণা করেছিলাম। তবে যতটুকু আশা করেছিলাম তার কাছাকাছি হচ্ছে না, কিন্তু খারাপ না।ভালোবাসা দিবস হওয়ায় কবিতার বই ভালো বিক্রি হচ্ছে। অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনীর বিক্রেতা সানজিদা জানান, নীলিমা শামীমের লেখা ‘আগুনে লেখা সোনালী কাবীন’ বইটি ভালো বিক্রি হচ্ছে।

মেলায় আকর্ষণীয় স্টলগুলোর একটি কুঁড়েঘর প্রকাশনী। বাঁশ দিয়ে তৈরি এ স্টলে আছে হরেক রকমের বই। বিক্রেতা লাবনী জানালেন, তারা ঢাকা থেকে এবারই প্রথম চট্টগ্রামে মেলা করতে এসেছেন। নতুন বই এসেছে ১৫টি।আজ দসেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে’ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বিশ্বজড়ে পালিত হচ্ছে এ দিবসটি। বর্তমানে ভালবাসা বলতে প্রেমিক-প্রেমিকার প্রেমকেই বোঝানো হলেও এ ভালোবাসা যেমন মা-বাবার প্রতি সন্তানের, তেমনি মানুষে-মানুষে ভালোবাসাবাসির দিনও এটি।শুধু তরুণ-তরুণী শুধু নয়, আজ সব বয়সের মানুষের ভালোবাসা প্রকাশের আনুষ্ঠানিক দিন।

দিবসটি উপলক্ষে মুঠোফোনের মেসেজ, ই-মেইল, ফেসবুকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অনেকে। আবার কেউবা চকোলেট, পারফিউম, গ্রিটিংস কার্ড, উপহার, বই ইত্যাদি শৌখিন উপঢৌকন প্রিয়জনকে উপহার দিয়েছেন।

তবে ‘শুধু একটি দিন ভালোবাসার জন্য কেন? এ নিয়ে অনেকের মধ্যে আছে আলোচনা সমালোচনা।এ প্রশ্নে কবি নির্মলেন্দ গুণ বলেন, ‘ভালোবাসা একটি বিশেষ ৭ দিনের জন্য নয়। সারাবছর, সারাদিন ভালোবাসার। তবে আজকের এ দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে বেছে নিয়েছে মানুষ।’

দিনটিকে ঘিরে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ঢাকাসহ সারাদেশেই বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।রাজধানীর শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর, বইমেলা চত্বর থেকে শুরু করে এর আশেপাশের এলাকায় থাকছে দিনভর নানা অনুষ্ঠান। সকালে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য র‌্যালি, সূচনা সঙ্গীত, ভালোবাসার স্মৃতিচারণ, কবিতা আবৃত্তি, গান, ভালোবাসার চিঠি পাঠ এবং ভালোবাসার দাবিনামা উপস্থাপনসহ আরও নানা কর্মসূচি।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ১০টায় শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় ভালোবাসার কনসার্ট।বর্তমানে পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকোলেট, অন্যান্য উপহারসামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করতে, এবং আনুমানিক প্রায় ২.৫ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়।

যেভাবে এলো ভালোবাসা দিবস:ঠিক কবে কখন ভালোবাসার দিন আলাদা করে হয়ে উঠেছিল সেই ইতিহাস নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। সবচেয়ে বহুল প্রচলিত গল্প রোমান যাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে নিয়ে। তার আত্মত্যাগের নানা কাহিনী ঘিরেই নির্ধারিত হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার দিন।বলা হয়ে থাকে, ধর্মযাজক সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন খ্রিস্টধর্ম প্রচারক, অন্যদিকে তৎকালীন সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ছিলেন বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজায় বিশ্বাসী। সম্রাটের পক্ষ থেকে ভ্যালেন্টাইনকে দেব-দেবীর পূজা করতে বলা হলে ভ্যালেন্টাইন তা অস্বীকার করায় ২৭০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়।

তবে অন্য একটি দল দাবি করে, স্নেহময় যাজক সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন কারাবন্দি হলে তরুণ-তরুণীরা তাকে ফুল নিয়ে দেখতে আসতো। সে সময় এসেছিল কারারক্ষীর অন্ধ মেয়েও। সেই মেয়ে সেইন্টের ক্ষমতাবলে দৃষ্টি ফিরে পায়। তখন তারুণ্যের উচ্ছ্বাস ঠেকাতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদ- দেন সম্রাট ক্লডিয়াস।আরেক ইতিহাস দাবি করে, সেনাবাহিনীতে লোক সংকট হলে তরুণ-তরুণীর বিয়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন সম্রাট ক্লডিয়াস। যাতে অবিবাহিত তরুণেরা সৈনিক হতে আগ্রহ প্রকাশ করে। সম্রাটের এই নির্দেশ প্রথম অমান্য করেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের এক ধর্মযাজক। তিনি ভালোবেসে মার্সিয়া নামের এক তরুণীকে বিয়ে করেন এবং নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অন্যদের বিয়ে দেন। আদেশ অমান্যের জন্য ভালেন্টাইনকে মৃত্যুদন্ড দেন। তার স্মরণেই ভালোবাসা দিবস পালিত হয়ে আসছে। এটিই সবচেয়ে প্রচারিত সংজ্ঞা।

দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হয়ে থাকে, যদিও অধিকাংশ দেশেই দিনটি ছুটির দিন নয়।

বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস: বাংলাদেশে এ দিবসটি প্রবর্তন করেন পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত সাংবাদিক শফিক রেহমান। ১৯৯৩ সালে যায়যায় দিন পত্রিকায় আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথম বিষয়টির আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে সেই লিওপারসালিয়া বা ফেব্রুয়ালিয়া অথ বা ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ বাংলাদেশি সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে।