ফেনী শহরে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনগুলো ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে। নেই রিজার্ভ পানির ব্যবস্থা। যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের অগ্নিকান্ড ও প্রাণহানির আশংকা রয়েছে। সবচেয়ে বেশী ঝুঁকিতে রয়েছে শহরের বড় বাজার ও সুলতান মাহমুদ পৌর হকার্স মার্কেট (রেলগেইট বাজার)। এসব ভবনে শীঘ্রই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ফেনী ফায়ার সার্ভিস জানায়, ফেনী শহরে ছোট বড় একশ থেকে দেড়শ ভবন রয়েছে। ফেনীতে ৮০ ভাগ ভবনে অগ্নিনির্বাপনের কোন ব্যবস্থা নেই। ভবনের নকশার মধ্যে এক তলা থেকে দশ তলা পর্যন্ত আবাসিক কাম বাণিজ্যিক ভবনের জন্য তিনটি সিঁড়ি, দু’টি লিফট ও বাণিজ্যিক ভবনের জন্য দু’টি সিঁড়ি ও দু’টি লিফট এবং দশ তলার অধিক হলে আরো বেশী পরিমাণ সিঁড়ি ও লিফট থাকার কথা থাকলেও ভবন মালিকরা কেউ এসবের তোয়াক্কা করেন না।

পৌরসভার নিয়ম অনুযায়ী একটি ভবনের চারপাশে ৩ মিটার পরিমাণ জায়গা খালি থাকতে হবে। এক ভবন থেকে আরেক ভবনের দূরত্ব ৪ থেকে ৫ মিটার। অধিকাংশ মালিক এ আইন মানছেন না। এছাড়া শহরের ভবনগুলোতে নেই রিজার্ভ পানির ট্যাংক, পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও স্থায়ী অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। বহুতল ভবনগুলোতে হাইড্রেন ব্যবস্থা, লিফ্ট, বিকল্প সিঁড়ি ও জরুরী সিঁড়ি রাখা হয়নি। ভবনে আগুন লাগলে মানুষ দ্রুত নামার কোন ব্যবস্থাও নেই। ফেনী শহরে বেশ কয়েকটি পুকুর ছিল। পুকুরগুলো ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ম অনুযায়ী মার্কেট ও ভবনে পানির ট্রাংকি করার বিধান থাকলেও ফেনী শহরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভবনগুলোতে এর কোন ব্যবস্থা নেই। শহরে একমাত্র উৎস রাজাঝির দিঘী। এ দিঘী থেকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা পানির ব্যবস্থা করতে করতে অগ্নিকান্ডের ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। যা নিয়ন্ত্রণ করতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের হিমশিম খেতে হয়।
শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের করিম টাওয়ার, মাস্টার টাওয়ার, কুমিল্লা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন লতিফ টাওয়ার, মিজান রোডের গ্র্যান্ড হক টাওয়ারসহ বেশ কয়েকটি টাওয়ারে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা রয়েছে। শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের শাহ আলম টাওয়ারসহ কয়েকটি ভবনে মাত্র একটি সিঁড়ি রয়েছে। শহরের জালালিয়া সুইটস, শরীফ মিষ্টি মেলা, বিসমিল্লাহ সুইটসসহ অনেকগুলো ভবনের ভিতরে সরু ও খাড়া সিঁড়ি রয়েছে। আগুন লাগলে এসব ভবনে ব্যাপক হতাহতের আশংকা করছেন ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে শহরের ডাক্তার পাড়া, মাস্টার পাড়া কানন সিনেমা হলের সামনে, পাঠান বাড়ী রোড, পুরাতন রেজিষ্ট্রি অফিস, পুরাতন পুলিশ কোয়ার্টারসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় সড়কগুলো অত্যন্ত সরু ও আঁকাবাঁকা হওয়ার কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী দ্রুত যেতে পারে না।

অপরদিকে ফেনী শহরে আবাসিক ভবনের অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে প্রাইভেট ক্লিনিকের কাছে ভাড়া দিচ্ছে। ক্লিনিক করার মত পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই ওইসব ভবনে। অনেকগুলো ক্লিনিকেও অগ্নিনির্বাপনের কোন ব্যবস্থা নেই।
গত বছরের ৪ জুন ফেনী শহরের ট্রাংক রোডে বড় মসজিদের বিপরীতে ছেরাজ হার্ডওয়ারে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা বড় মসজিদের ট্রাংকি থেকে পানি ব্যবহার করে। পরে পানি শেষ হয়ে গেলে রাজাঝির দিঘী থেকে পানির ব্যবস্থা করতে করতে ততক্ষণে দোকান কর্মচারী নুরুল আলম (৩৫) অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান।
খবর পেয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায় ও পৌর মেয়র হাজী আলাউদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ফেনী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. কবির হোসেন জানান, ফেনী শহরের বড় বাজার ও রেলগেট বাজার সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এখানে পানির কোন উৎস নেই। বড় বাজারে রাস্তার উপরে মালামাল ও গাড়ী থাকার কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী যথাসময়ে ঢুকতে পারে না। আবার অনেকগুলো পথ সরু ও সিঁড়িগুলো খাড়া। আগামী সপ্তাহে এসবের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে। ফেনী ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার জন্য ব্যবসায়ীদেরকে নোটিশ করা হচ্ছে। আগামীকাল রবিবার ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে ফেনী ফায়ার সার্ভিস মতবিনিময় করবেন।

ফেনী ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ভূঞা জানান, ফেনীতে ৭০ ভাগ বহুতল ভবনের ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন ও অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা নেই। অগ্নিনির্বাপনের জন্য নেই সিঁড়ি (মই)। কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে রয়েছে। পর্যায়ক্রমে ফেনীতে আসবে। ফেনী ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর জন্য দক্ষ জনবল থাকলেও সরু রাস্তার কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী দ্রুত সময়ে পৌঁছতে পারে না।