বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো গবেষণা করে বের করেছে বিশ্বের যেসব স্বৈরাচারী দেশ আছে তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। যে দেশ উন্নয়নের কথা বলে, সেই দেশের রাজধানীকে চিহ্নিত করা হয়েছে দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি দূষিত শহর বলে।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দল আয়োজিত খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি দেশটাকে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য। যে দেশে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য থাকবে না, মা- বোনরা কারও দ্বারা লাঞ্ছিত হবে না। সে ধরনের একটি বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা লড়াই করেছিলাম। সে বাংলাদেশে যখন ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়- এটা আমার কথা না; স্বৈরাচার কায়েম হয়, এটাও আমার কথা না; আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো গবেষণা করে বের করেছে বিশ্বের যেসব স্বৈরাচারী দেশ আছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি।

আওয়ামী লীগ সমাজতন্ত্রকে বহাল করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আবার সমাজতন্ত্রকে সংবিধানে পুনর্বহাল করেছে। যদি তাই হয় তবে দেশে তো সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রচলিত হওয়ার কথা। কিন্তু আসলে কি? বাংলাদেশের সবাই জানে এটা একটা মুক্তবাজারের দেশ। মুক্তবাজার অর্থনীতিকে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছে এবং প্রেস কনফারেন্স করে সেটা জাতিকে জানিয়েছে তারা মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিশ্বাস করে। বিশ্বাস করে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে আর সংবিধানে লেখা সমাজতন্ত্র- এই যে দ্বিমুখী নীতি এটা জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা। এটা তো গ্রহণযোগ্য না।
সদ্য অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণকারী নুসরাতের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বোন নুসরাত যখন লাঞ্ছিত হয় এবং লাঞ্ছনার অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, এখন তো মানবাধিকার ও মহিলা সংগঠনগুলোকে সোচ্চার হতে দেখি না। আজকে আমরা শুনি নুসরাতকে যারা লাঞ্ছিত করেছে তাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের লোকরা আছে। তাদের একজন নেতাকে বহিস্কার করা হরেয়ছে। তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে সখ্যতা ক্ষমতাসীন দলের। আমরা দাবি করবো, নুসরাতকে লাঞ্ছনাকারী সে যেই হোক না কেন তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু হবে কিনা জানি না।

খালেদা জিয়া কোনও অপরাধ করেন নাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া কোনও অপরাধ করেন নাই। তিনি কোনও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহকর্মী হিসেবে এ কথা আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি। কিন্তু তাকে জেলে দেওয়া তো বন্ধ করতে পারি না। কারণ আজকে আইন বিভাগ পর্যন্ত সরকার তাদের অধীনস্থ করে ফেলেছে। এটাই ফ্যাসিবাদের চরিত্র, তাই করে তারা। আজকে আমরা রাজনীতি করবো বিএনপির, আমাদের প্রতিপক্ষ হবে আওয়ামী লীগ। কিন্তু আমার প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ না। আমার প্রতিপক্ষ হলো পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবি। আমি একটা মিছিল-মিটিং করতে গেলে আমার সামনে তো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দাঁড়ায় না। এই যে রাষ্ট্রকে বিরোধী রাজনীতির প্রতিপক্ষ বানানো এটাকেই বলে ফ্যাসিবাদ, এটাই হলো স্বৈরাচার।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, কর্মজীবী দল কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সালাহউদ্দিন খান এবং প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মো. আলতাফ হোসেন সরদার প্রমুখ।