কৌশল বদলাচ্ছে অজ্ঞান পাটির সদস্যরা। এখন তারা আর মলম, চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে যাত্রীকে অজ্ঞান করে মালামাল ছিনিয়ে নেয় না, বরং ভিক্টিমের মোবাইল দিয়ে পরিবারের সদস্যদের ফোন করে বলে আপনার স্বজন এখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। এখনই টাকা পাঠানো না হলে উনাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন হয়ে টাকা পাঠানোর পর তারা ভিক্টিমের মোবাইল বন্ধ করে দেয়।

অজ্ঞান পার্টির এমন অভিনব কৌশলের কথা সাংবাদিকদের জানালেন ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ন কমিশনার মাহবুব আলম। শনিবার (১৮ মে) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, এই চক্রের ৬৫ জনকে আটক করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৭ মে) রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের চারটি টিমের অভিযানে রাজধানীর উত্তরা, মিরপুর, নিউমার্কেট, গুলিস্তান, কুড়িল বিশ্বরোড, ফকিরাপুল ও জয়কালি মন্দির এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।

আটককৃত অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা পুলিশকে জানিয়েছে, ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ঢাকার বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল, বাসস্ট্যান্ড ও রেলস্টেশনে নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তিকে টার্গেট করে প্রথমে সখ্যতা গড়ে তোলে তারা। পরে তাদের দলের অন্য সদস্যরা ওই ব্যক্তিকে ট্যাবলেট মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য খেতে আমন্ত্রণ জানায়। টার্গেটকৃত ব্যক্তি রাজি হলে তাকে চেতনানাশক মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য খাওয়ানো হয় এবং বিশ্বাস অর্জনের জন্য নিজেরাও সাধারণ খাবার গ্রহণ করে। চেতনানাশকের প্রভাবে টার্গেটকৃত ব্যক্তি অচেতন হয়ে গেলে তারা মূল্যবান সামগ্রি নিয়ে দ্রুত সেখান থেকে সটকে পড়ে।

এক্ষেত্রে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা খাদ্যদ্রব্য হিসেবে চা, কফি, জুস, ডাবের পানি, পান, ক্রিম জাতীয় বিস্কিট ইতাদি ব্যবহার করে। তবে এবার রোজা উপলক্ষ্যে খেঁজুরেও চেতনানাশক মিশিয়ে ব্যবহার করছে তারা।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার ভ্রমণে থাকা অবস্থায় অপরিচিত কোন ব্যক্তির দেয়া খাবার গ্রহণ না করতে এবং এই বিষয়ে সচেতন হতে সবাইকে আহ্বান জানান।এক প্রশ্নের জবাবে যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, যাদের ধরা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই আদালত থেকে এমন কোনো মামলায় জামিন বা খালাসপ্রাপ্ত। এসব ঘটনার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই ভিক্টিমকে ছাড়া মামলা করতে হয় পুলিশের। ফলে আইনী দূর্বলতার কারণে আসামী জামিন বা খালাস পেয়ে থাকে। পরে জেল থেকে বের হয়েই তারা কৌশল বদলে আবার এসব কাজ করছে।আটকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এসময় তাদের কাছ থেকে ১৪৩ পিস নকটি (ঘড়পঃর-৫সম), নিটরাজিপাম (ঘরঃৎধুবঢ়ধস-৫সম), ১৮ পিস লেক্সোটানিল (খবীড়ঃধহরষ (৩সম), ২৮ পিস ইপিত্রা (ঊঢ়রঃৎধ) ১০ পিস সেডিল (ঝবফরষ) রিভোট্রিল(জরাড়ঃৎরষ-২সম),পেস-২(চধংব২), ডিজোপেন (উরংড়ঢ়ধহ), ক্লোনাজিপাম (ঈষড়হধুবঢ়ধস-২সম), নিক্স (ঘরী), রাবিং বামের (জঁননরহম ইধষস) নীল রঙের কৌটা, ওষুধ মিশ্রিত জুস, খেজুর, সাতটি চোরাই মোবাইল ফোন ও একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়েছে।

আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মাহবুব আলম বলেন, ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে চক্রের সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল, বাসস্ট্যান্ড, সদরঘাট, রেলস্টেশন এলাকায় আগত ব্যক্তিদের টার্গেট করে সখ্যতা স্থাপন করেন। এরপর তাদের অপর সদস্যরা ট্যাবলেট মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য আমন্ত্রণ জানায়। টার্গেট করা ব্যক্তি রাজি হলে, ট্যাবলেট মিশ্রিত সেই খাদ্যদ্রব্য তাকে খাওয়ানো হয়। খাদ্য গ্রহণের পর অচেতন হলে তার মূল্যবান দ্রব্যাদি নিয়ে দ্রুত চলে যান।