দ্য ফিউচার অব এশিয়া সম্মেলনে যোগ দিতে জাপানে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৩টা) প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইটে টোকিওর হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। জাপানী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তোশিকো আবে তাকে অভ্যর্থনা জানান।এর আগে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সফরসঙ্গীদের নিয়ে রওনা হন তিনি।

১২ দিনের এই সরকারি সফরে জাপান থেকে সৌদি আরব ও পরে ফিনল্যান্ডে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে ঈদের পর ৮ জুন তার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী টোকিও সফরে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন; তাদের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে আড়াই বিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে।জাপানি সম্প্রচারমাধ্যম নিকেই-এর আয়োজনে দ্য ফিউচার অব এশিয়া সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন শেখ হাসিনা। এ সম্মেলনকে এশিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মেলন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ওইআইসি সম্মেলনে যোগ দিতে জাপান থেকে শেখ হাসিনা যাবেন সৌদি আরবে। সেখানে তিনি ওমরাহ পালন করবেন এবং মদীনায় মহানবীর (সঃ) রওজা জিয়ারত এবং মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় করবেন।সৌদি আরব থেকে শেখ হাসিনা যাবেন ফিনল্যান্ডে। সেখানে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন তিনি।

জাপান সফর: জাপান পৌঁছেই প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। পরদিন বুধবার ব্যস্ত দিন কাটবে তার। টোকিওর নিউ ওটানি হোটেলে জাপানের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক হবে। জাপান সফরে ওই হোটেলেই থাকবেন তিনি।২০১৬ সালে ঢাকার হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় হতাহত জাপানিদের পরিবারের সঙ্গে সেখানে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন শেখ হাসিনা।

বুধবার দুপুরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের কার্যালয়ে হবে দুই দেশের সরকারপ্রধানের দ্বি-পক্ষীয় বৈঠক। শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রীর অফিসে পৌঁছলে সেখানে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে।

দ্বি-পক্ষীয় বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে আড়াই বিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ চুক্তি হতে পারে বলে এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যোগাযোগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত এবং শিল্পায়নের জন্য জাপান এ ঋণ সহায়তা দেবে। ৪০তম এই ঋণ প্যাকেজের আকার আগেরবারের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি।

এই ঋণ দিয়ে মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন ১), বিদেশি বিনিয়োগ সহায়ক প্রকল্প (২), জ্বালানি দক্ষতা ও সুরক্ষা সহায়ক প্রকল্প (পর্যায়-২) ও মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে (৫) অর্থায়ন করা হবে।

বুধবার সন্ধ্যায় জাপানি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে নৈশভোজে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার তিনি টোকিওতে দ্য ফিউচার অব এশিয়া সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন।

এশিয়ার সম্ভাবনা ও উত্থান নিয়ে নিজের ভাবনা এ সম্মেলনে তুলে ধরবেন শেখ হাসিনা। শিনজো আবে ছাড়াও আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি হিসেবে পরিচিত মাহাথির মোহাম্মদ, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন এবং ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে অংশ নেবেন এ সম্মেলনে।৩০ ও ৩১ মে এই সম্মেলনে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রাজনীতিক, অর্থনীতিবিদ এবং শীর্ষস্থানীয় অধ্যাপক, গবেষক ও তাত্ত্বিকরা আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয় ও বিশ্বে এশিয়ার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করবেন।

সৌদি সফর: টোকিও থেকে ৩১ মে সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে সৌদি আরবের জেদ্দার উদ্দ্যেশ্যে রওনা হবেন শেখ হাসিনা।ওইদিন বিকেলে জেদ্দা পৌঁছে সেখান থেকে যাবেন মক্কার সাফা প্যালেসে। সেখানে ওআইসির ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনের চতুর্দশ অধিবেশনে তিনি যোগ দেবেন। রাত পৌনে ১১টা থেকে সেহরির আগে সমাপনী পর্যন্ত সম্মেলনের বিভিন্ন পর্বে যোগ দেবেন তিনি।

পরদিন ১ জুন মক্কায় ওমরাহ পালন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ২ জুন সকালে আকাশপথে যাবেন মদিনায়। সেখানে তিনি মহানবীর (সঃ) রওজা জিয়ারত করবেন এবং মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় করবেন। সেদিন সন্ধ্যায় মদিনা থেকে জেদ্দায় ফিরে ওই রাতেই ফ্রাঙ্কফুর্ট হয়ে ফিনল্যান্ডের হেলসিংকির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন তিনি।

হেলসিংকি থেকে ৭ জুন সন্ধ্যায় ফিন এয়ারের একটি ফ্লাইটে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। সেখান থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে ৮ জুন রাতে ঢাকায় পৌঁছাবেন তিনি।