বাংলাদেশে দুই দশক আগে শনাক্ত হয়েছে ডেঙ্গু। তারও আগে পাওয়া যায় ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার লার্ভা। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতায় এডিস মশা পাওয়ার পর সেখানে কয়েক বছর ধরে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হলেও ঢাকায় তা হয়নি। ২০০০ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার পর তা চলেছিল এক বছর। তখন এই মশা নিয়ন্ত্রণেও এসেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো ভূমিকাই রাখেনি।দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও এক হাজার ৬৪৯ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

সব মিলিয়ে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত চলতি বছর দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২২ হাজার ৯১৯ জন হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য।বর্তমানে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ছয় হাজার ৮৫৮ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে ১৬ হাজার ৪৩ জন। ডেঙ্গু আক্রান্তের মোট সংখ্যা বাড়লেও রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে গত দুদিন ধরে রোগী ভর্তির সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তবে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী বেড়েছে।২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৯৬৯ জন রাজধানীতে। তার আগে শুক্রবার ৯৯৬ জন এবং বৃহস্পতিবার ভর্তি হয়েছিল এক হাজার ১৫০ জন।

শুক্রবার ৬৯১ জন ভর্তির হয়েছিল দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে, শনিবার পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৬৮০ জন।সব মিলিয়ে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ৯০৫ জন। শুক্রবার এই সংখ্যা ছিল চার হাজার ১৯০, বৃহস্পতিবার ছিল তিন হাজার ৪৬৪ জন। ঢাকার বাইরে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছে দুই হাজার ৩৮১ জন, চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন দুই হাজার ৫২৪ জন।

এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১৮ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মৃতের সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।শুক্রবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে মিটফোর্ড হাসপাতালে। এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ৯৮ জন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ৬৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী।

এছাড়া ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৪২, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৩৬৪, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ২২৬, বারডেম হাসপাতালে ৭২, বিএসএমএমইউতে ১৪৩, পুলিশ হাসপাতালে ২০১, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩১৯, বিজিবি হাসপাতালে ৩৩, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৩৫৮ এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৩৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে সর্বমোট চার হাজার ৪৭৭ জন ভর্তি আছে। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালগুলোয় রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ৭৮৩ জন। বাকি এক হাজার ৬৯৪ জন ডেঙ্গু রোগী বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।

শনিবার ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে দুই হাজার ৩৮১ চিকিৎসা নিচ্ছে। শুক্রবার হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৯৬৯।

রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এসব জেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছে ২১৫ জন, তাদের নিয়ে মোট চিকিৎসাধীন আছে ৪২৮ জন।

এরপর চট্টগ্রাম বিভাগে নতুন ডেঙ্গু রোগী ১২৯ এবং চিকিৎসাধীন ৪৩২ জন, খুলনা বিভাগে নতুন ৬৩ এবং চিকিৎসাধীন ৪০৯ জন, রংপুর বিভাগে নতুন ৫৪ জন এবং ভর্তি ২১৩ জন, রাজশাহী বিভাগে নতুন রোগী ৬৯ জন, চিকিৎসাধীন ৩২৫, বরিশাল বিভাগে নতুন ৬৭ জন এবং চিকিৎসাধীন ১৯৭ জন, সিলেট বিভাগে নতুন শনাক্ত ৩১ জন এবং হাসপাতালে ভর্তি ১০০ জন এছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগে নতুন রোগী ৫২ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে ২৭৭ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনা’র গুরুত্বপূর্ণ চারটি অস্ত্র হলো পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা, জৈবিক নিয়ন্ত্রণ, কীটনাশক ও জনগণকে সম্পৃক্তকরণ। ঢাকায় এতদিন কেবল কীটনাশক দিয়েই মশা মারার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে কীটনাশক দিয়ে মশা মারার ব্যবস্থাটি ছিল পুরোপুরি কিউলেক্স মশাকেন্দ্রিক। এই পদ্ধতিতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, আমরা সমন্বিত প্রক্রিয়ায় মশক নিয়ন্ত্রণের জন্য চেষ্টা করেছি। এ বিষয়ে গত মাসে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকও হয়েছিল। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা কোনো রেসপন্স পাচ্ছি না।

জানা গেছে, সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার কাজটি সিটি করপোরেশন এত দিন করেনি। গত মাসে বৈঠক করলেও অন্য সংস্থাগুলোর কাছ থেকে তেমন সাড়া পায়নি। তবে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর জনগণকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা শুরু করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

অন্যদিকে মশার ওষুধের নমুনা পরীক্ষাও করা হয় মূলত কিউলেক্স মশার দিকে দৃষ্টি রেখে। মশা বা মশার ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বতন্ত্র কোনো গবেষণা বা পরীক্ষা নেই।