গাজীপুরে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পেরে টাকার বিনিময়ে নবজাতক সন্তানকে দত্তক দিয়েছেন পোশাক কর্মী এক দম্পত্তি। পরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার আনোয়ার হোসেন শুক্রবার ওই টাকা ফিরিয়ে দিয়ে নবজাতককে উদ্ধার করে তার মা-বাবার কোলে তুলে দিয়েছেন।

জিএমপি’র কোনাবাড়ি থানার ওসি মো. এমদাদ হোসেন জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুরের এনায়েতপুর এলাকার ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় পোশাক কারখানায় পোশাক কারখানায় কাজ করেন কেয়া খাতুন (১৮) এবং তার স্বামী মো. শরীফ কাজী (১৯)। করোনা সংকটে কারখানা বন্ধ থাকায় শরীফ দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তাদের হাতও ছিল একেবারে খালি। এমতাবস্থায় তার গর্ভবতী স্ত্রী কেয়া প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে গত ২১ এপ্রিল স্থানীয় কোনাবাড়ি এলাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই দিনই সিজারের মাধ্যমে কেয়া আক্তারের কোল জুড়ে আসে ফুটফুটে একটি ছেলে সন্তান। হাসপাতালে ১১ দিন থাকার পর শুক্রবার (১ মে) তাদের বাসায় ফেরার পালা। কিন্তু এ ক’দিনে হাসপাতালের বিল আসে ৪৭ হাজার টাকা। কিন্তু হতদরিদ্র এ দম্পতি হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে পারেননি। পরে তারা অনেক তদবির করার পর ১৯হাজার টাকায় নেমে আসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ১৯হাজার টাকাও জোগাড় করতে পারছিলেন না কেয়া দম্পতি। অনেক চেষ্টা করে তারা ৪হাজার টাকা জোগাড় করেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চার হাজার টাকা নিতে নারাজ। পরে আর টাকা জোগাড় করতে না পেরে নিরুপায় হয়ে নবজাতককে স্থানীয় কাশিমপুরের রওশন মার্কেট এলাকার বাসিন্দা আব্দুল লতিফের মেয়ে জামাই নিঃসন্তান শরীফুল ইসলাম দম্পতির কাছে ২৫হাজার টাকায় দত্তক দেন কেয়া দম্পতি। নগদে ওই শ্রমিক দম্পতি পান ১৫ হাজার টাকা এবং বাকি ১০ হাজার টাকা সাতদিন পর পরিশোধের কথা ছিল। তা দিয়ে তারা হাসপাতালের পাওনা কিছুটা পরিশোধ করেন। খবরটি গাজীপুর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তা গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন অবগত হন। পরে শুক্রবার বিকেলে তিনি ওই ২৫হাজার টাকা পরিশোধ করে শরীফুল ইসলাম দম্পতির কাছ থেকে নবজাতককে ফেরত নিয়ে শরীফ-কেয়া দম্পতির কোলে তুলে দেন।

জিএমপি’র অতিরিক্ত উপ কমিশনার মোঃ আবু লাইচ জিকু বিষয়টি নিয়ে তার ফেসবুকে পোস্ট করলে তা ব্যাপক ভাইরাল হয়। মায়ের কোলে সন্তান ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় অনেকে পুলিশ কমিশনারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে তার প্রশংসা করেন।

জিকু জানান, বিষয়টি পুলিশের এডিশনাল আইজি (এসবি) স্যারের মাধ্যমে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন স্যারের নলেজে আসে এবং শুক্রবার তিনি নিজে হাসপাতালের ওই বিল পরিশোধ করে নবজাতককে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, আগে জানলে নবজাতককে দত্তক দিতে হত না। হাসপাতালের বিল আমি পরিশোধ করে দিতাম। ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। সন্তানটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমার খুব ভালো লেগেছে।’ নিঃসন্তান শরীফুল দম্পতিকে ২৫হাজার টাকা পরিশোধ এবং নবজাতকে লালন-পালনের জন্য কেয়া দম্পতিকে আরো ৫হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।