গাজীপুরে শতভাগ ঈদ বোনাসসহ চলতি মাসের বেতন পরিশোধের দাবীতে বুধবার দিনভর কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। এসময় এক কারখানার কয়েক কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করেছে ওই কারখানার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ আশেপাশের সড়কগুলো অবরোধ ও ভাংচুর করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল জলিলসহ শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, শতভাগ ঈদ বোনাসসহ বেতনভাতা পরিশোধের দাবীতে গাজীপুরের জিরানী এলাকাস্থিত বেঙ্গল গ্রুপের পলিমার প্লাস্টিক ও রোমানিয়া ফুড কারখানার শ্রমিকরা বুধবার বিকেল পর্যন্ত কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। শ্রমিকরা শতকরা ৫০ভাগ ঈদবোনাস দেওয়ার সরকারের ঘোষণাকে না মেনে গত কয়েকদিন ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে শতভাগ ঈদ বোনাসসহ চলতি মাসের বেতন পরিশোধের দাবী জানিয়ে আসছিল। কিন্তু মঙ্গলবার কারখানা কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্তানুযায়ী এবারের ঈদে শ্রমিকদেরকে শতকরা ৫০ভাগ ঈদবোনাস মোবাইল একাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করে। রাতের শিফটে কর্মরত শ্রমিকরা তাদের মোবাইলে শতকরা ৫০ভাগ ঈদবোনাস প্রদানের মেসেজ দেখতে পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তারা শতভাগ ঈদ বোনাসের দাবীতে মধ্যরাতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় উত্তেজিত কয়েক শ্রমিক কারখানায় ভাংচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পরদিন সকালে ডে-শিফটের শ্রমিকরা কারখানায় এসে কাজে যোগ না দিয়ে নাইট শিফটের আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নিয়ে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। দুপুর পর্যন্ত তাদের দাবী মেনে না নেওয়ায় শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গিয়ে অবরোধের চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্দোলনরতদের সঙ্গে আলোচনা করে। পরে পুলিশের মধ্যস্থতা শেষে কারখানা কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবারের শতকরা ৫০ ভাগ সহ মোট ৬০ ভাগ ঈদ বোনাস দেওয়ার ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা বিকেলে তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেয়। ঈদবোনাসের অবশিষ্ট শতকরা ১০ ভাগ বৃহষ্পতিবারের মধ্যে পরিশোধ করার ঘোষণা দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ।

তারা আরো জানান, একই দাবীতে জিরানী বাজার এলাকার সানগড় টেক্সটাইল লিমিটেড পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ঈদ বোনাসসহ পাওনাদি পরিশোধের পূর্ব নির্ধারিত তারিখ ছিল বুধবার। কিন্তু বিকেল পৌণে ৩টা পর্যন্ত শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ না করায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এসময় শ্রমিকদের বোনাসসহ পাওনাদি পরিশোধ করা হবে না এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি শুরু করে। এসময় উত্তেজিত শ্রমিকরা কারখানার বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর ও কয়েক কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ ব্যাংকিং সমস্যাকে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধে বিলম্বের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। এসময় শ্রমিকদের পাওনাদি বৃহস্পতিবারের মধ্যে পরিশোধের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সন্ধ্যায় তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে।

এদিকে শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইসলাম হোসেন জানান, শতভাগ ঈদ বোনাসসহ পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুরস্থিত এমাসিন টেক্স ও ডেল্টা কম্পোজিট সহ শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাষ্টারবাড়ি এলাকার গোল্ডেন থ্রেড কারখানার শ্রমিকরা বুধবার সকাল হতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবী মেনে না নেওয়ায় দুপুরে ডেল্টা কম্পোজিট কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল এবং গাল্ডেন থ্রেড কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, এছাড়াও শতভাগ ঈদ বোনাস ও বেতন পরিশোধের দাবিতে একইদিন টঙ্গীর তিলারগাতি এলাকার ক্লাসিক ফ্যাশন কনসেপ্ট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা সকাল হতে কর্মবিরতি বিক্ষোভ করেছে।

শ্রমিকরা জানান, সরকার ও বিজিএমইএ’র সিদ্ধান্তকে না মেনে কারখানা কর্তৃপক্ষ গত এপ্রিল মাসের সাত দিনের হাজিরার টাকা না দিয়ে শ্রমিকদের বেতন তাদের মূল বেতনের ৬০শতাংশের কম পরিশোধ করেছে। এ ছাড়াও বিজিএমইএ’র নির্দেশিত ঈদ বোনাসের ৫০শতাংশ না দিয়ে ২৫শতাংশ দিতে চাচ্ছে। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তারা শতভাগ ঈদ বোনাস ও বেতনের দাবীতে বুধবার সকাল হতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার জানান, এবারের ঈদে সরকার ও বিজিএমইএ কারখানার শ্রমিকদের শতকরা ৫০ভাগ ঈদ বোনাস প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কিছু কারখানার শ্রমিক ওই সিদ্ধান্তকে মানতে চাচ্ছে না। তারা কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে অযৌক্তিকভাবে শতভাগ ঈদ বোনাস দাবী জানিয়ে বিক্ষোভ করছে। বুধবারও জেলার কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা ওই দাবীতে বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি করেছে।