করোনার কারণে গত দুই বছর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। বর্তমানে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসায় শোলাকিয়ার ঈদ জামাত আয়োজনে তোড়জোড় চলছে। এটি হবে ঈদুল ফিতরের ১৯৫তম জামাত। উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত আয়োজন উপলক্ষে এখন ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়ায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। তবে এ আয়োজনে এবার নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে।

শোলাকিয়ার ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে জেলা পুলিশের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ২০১৬ সালে ৭ জুলাই জঙ্গি হামলা ও মাঠের সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৃহত্তম এই জামাতকে কেন্দ্র করে শুক্রবার থেকে কিশোরগঞ্জ শহরের আবাসিক হোটেল, ছাত্রাবাসসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ তল্লাশি ও বিশেষ নজরদারি করছে। ইতোমধ্যে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে পুলিশের একটি দল অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে মাঠের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে। পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম জানান, মাঠের নিরাপত্তার জন্য বোমা শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয়করণ দল শোলাকিয়া মাঠে মেটাল ডিটেক্টরের সাহায্যে বিশেষ অনুসন্ধান চালাবে। এছাড়া এবার ড্রোন সিকিউরিটির মাধ্যমে মাঠ ও আশপাশের এলাকায় বিশেষ নজরদারি করা হবে। পাশাপাশি শোলাকিয়া ময়দান ও আশপাশ সিসি ক্যামেরায় আওতায় আনা হয়েছে। সিসি ক্যামেরায় কঠোর নজরদারি করা হবে। তিনি জানান, পাঁচ প্লাটুন বিজিবির পাশাপাশি মাঠে আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা প্রস্তুত থাকবে। যাতে নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থেকে দেশের দূর দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করতে পারেন। এছাড়া হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে মাঠের ২৮টি প্রবেশ পথে নিরাপত্তা কর্মীরা শরীর তল্লাশি করে মাঠে মুসল্লিদের ঢোকার ব্যবস্থা করবে। ঈদের আগের দিন থেকে শহরে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রাখা হবে। এর পাশাপাশি পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা ও র‌্যাব সদস্যরা বিশেষ নজরদারি করবেন।

তিনি বলেন, প্রতি বছরই নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে জেলা পুলিশ কঠোর নিরাপত্তার জন্য এ কাজগুলো করে থাকে। তবে এ বছর লোকজনের সমাগম বেশি হবে এমন ধারণা থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শামীম আলম জামাতে নিরাপত্তার বিধিবিধানগুলো সবাইকে মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শোলাকিয়ায় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর জামাত না হলেও এবার জামাত হবে। মাঠে থাকবে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। তাই টুপি, জায়নামাজ ও মাস্ক ছাড়া আর কিছুই মাঠে নেওয়া যাবে না। ব্যাগ, মোবাইল ফোন ও ছাতাও বাড়িতে রেখে যেতে হবে। এ সময় তিনি নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নামাজ আয়োজনে সবার সহযোগিতা চান।

এদিকে, এই জামাত উপলক্ষে কিশোরগঞ্জ শহরবাসীর মধ্যেও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। শহরের বিভিন্ন সড়কে ঈদকে স্বাগত জানিয়ে বড় বড় তোরণ নির্মাণ এবং সড়ক দ্বীপগুলো বর্ণিল ব্যানারে সাজানো হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে জানিয়েছে, শোলাকিয়ায় নির্বিঘ্নে মুসুল্লিদের আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। শোলাকিয়া স্পেশাল সার্ভিস নামে একটি ট্রেন ময়মনসিংহ রেল স্টেশনে থকে ঈদের দিন সকাল ৫টা-৫৫ মিনিটে ছেড়ে সকাল ৯ট-৫মিনিটে কিশোরগঞ্জ পৌঁছবে। অন্যটি ভৈরব থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে সকাল পৌনে ৯টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছবে। উভয় ট্রেন দুটি দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জ থেকে ভৈরব ও ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।

উল্লেখ্য, ১৮২৮ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে প্রথম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সাত একর জমির ওপর মূল ঈদগাহটি প্রতিষ্ঠিত হলেও স্থান সংকুলানের অভাবে মাঠের চারপাশের খালি-জায়গা, বসতবাড়ির আঙিনা এবং রাস্তাঘাটে অগণিত মুসল্লিকে নামাজ আদায় করতে হয়। এবার দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি জামাতে অংশ নেবেন বলে কমিটির লোকজন ধারণা করছেন।