বৈশ্বিক মন্দায় অন্যান্য দেশের তুলনায় ‘বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছে’। এমন মন্তব্যের কারণে দেশব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়েন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এনিয়ে শুক্রবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তবে শেষমেশ নিজের ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

শনিবার দুপুরে সিলেট জেলা পরিষদের আয়োজনে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ড. মোমেন বলেন, ‘বেহেশতের কথা আমি বলেছি, কম্পারেটিভ টু আদার কান্ট্রি। অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের মানুষ ভালো আছে, এটি বোঝাতে গিয়ে বেহেশতে আছে বলেছি। আর আপনারা সব জায়গায় ‘বেহেশত’ বলেছেন… মানে আমার বক্তব্য টুইস্ট করা হয়েছে। আপনারা বলেননি, আমাদের মূল্যস্ফীতি অন্য দেশের তুলনায় কম।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলেছি, অন্য দেশের তুলনায় আমরা অনেক ভালো আছি এবং তাদের তুলনায় আমরা বেহেশতে আছি, এই কথা বলেছিলাম। কিন্তু আপনারা (সাংবাদিকরা) এক্কেবারে উল্টা!’

এর আগে শুক্রবার সিলেটে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্পে ‘ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়ক’ মতবিনিময় সভা শেষে বৈশ্বিক মন্দায় অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ ভালো আছে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, আমরা সুখে আছি, বেহেশতে আছি’।

তিনি বলেছিলেন, ‘তাছাড়া বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে, একটি পক্ষ এমন প্যানিক ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এটার কোনো ভিত্তি নেই। তবে আমরা এ মুহূর্তে চ্যালেঞ্জে আছি। বৈশ্বিক মন্দার কারণে আমরাও কিছুটা সংকটে। কিন্তু আমাদের যথেষ্ট রিজার্ভ আছে। আগাম সতর্কতা হিসেবে আমরা কিছুটা সাশ্রয়ী হওয়ার চেষ্টা করছি।’

বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ নদীগুলো খননের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত সরকারের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী আগামী মাসের ৪-৫ তারিখ দেশটি সফরে যাবেন। সফরের আগে যৌথ নদী কমিশনের সভায় ৬টি নদীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। ১০-১২ বছর বিরতির পর এ মাসের শেষের দিকে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হবে।

উজানের পাহাড়ি ঢলে সিলেটের আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়। ফলে বন্যার পূর্বাভাস বাংলাদেশকে আগাম জানিয়ে দেয়া ও ড্যামগুলো উন্মুক্ত করার পূর্বে তথ্য দেয়ার প্রস্তাবও ভারতকে দেয়া হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে আব্দুল মোমেন বলেন, শিক্ষা শুধু ডিগ্রি অর্জন নয়। আমাদের হৃদয়ে ক্রিয়েটিভ মোটিভেশন তৈরি করে। পারিপার্শিক অবস্থা থেকেও আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, হাত-পা-মাথা যারা কাজে লাগায়, তারা জীবনে সফল হয়। আকাঙ্ক্ষা উচ্চ না হলে বড় অর্জন হয় না। এজন্য আকাঙ্ক্ষায় বড় হতে হবে, তবেই অর্জন বড় হবে। তবেই সোনার মানুষদের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো: জাকারিয়া, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সিলেটের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. রমা বিজয় সরকার, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো: মজিবর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার অসিত বরণ দাস গুপ্তের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সনদ্বীপ কুমার সিংহ।